শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের কৃষি খাতে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে বজ্রপাত

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
40 ভিউ
দেশের কৃষি খাতে উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে বজ্রপাত

কক্সবাংলা ডটকম(১৩ মে) :: দেশে বোরো ধান কাটা ও আমন রোপণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস এপ্রিল, মে ও জুন। গ্রীষ্মকালীন ফল ও সবজি উৎপাদন-সংগ্রহের প্রধান মৌসুমও এটি। আবার এ তিন মাসেই বজ্রপাত বেশি হয়।

যেসব জেলা কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বজ্রপাতের হটস্পট হিসেবে সেগুলোই চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

একদিকে কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বজ্রপাতের হটস্পট, অন্যদিকে ফসল উৎপাদন ও বজ্রপাতের মৌসুম একই সময়ে হওয়ায় বিষয়টি কৃষির জন্য নতুন বিপদ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার সকালে কাঁকরোল খেতে কাজ করা অবস্থায় বজ্রপাতে মারা যান চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কৃষক মোহাম্মদ ফিরোজ (৩৫)। গত রোববার বিকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর ও হোসেনপুর উপজেলায় বজ্রপাতের ঘটনায় তিন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

তারা হলেন ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের ফয়সাল মিয়া (২৮), রসুলপুর গ্রামের ফারুক মিয়া (৬৫) ও কুলিয়ারচর উপজেলার হাজারীনগর গ্রামের কবির মিয়া (২৫)। আহত হয়েছেন হোসেনপুর উপজেলার আড়াইবাড়িয়া গ্রামের আবু বকর (৬০)। স্থানীয়রা জানান, বেলা ৩টার দিকে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। তার আগে থেকেই জমিতে কাজ করছিলেন ওই তিন কৃষক।

বাংলাদেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। গবেষণাটি করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) দুজন শিক্ষক।

গবেষণায় বলা হয়, দেশের কৃষি খাতে বজ্রপাত উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে কৃষির জন্য পিক (প্রধান) মৌসুম ধরা হয় এপ্রিল, মে ও জুন মাস। এ তিন মাস আবার বজ্রপাতের পিক সময়। বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর পরোক্ষভাবে কৃষিতে প্রভাব ফেলছে।

বজ্রপাত কৃষিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের কৃষির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোই বজ্রপাতের হটস্পটে পরিণত হয়ছে। দেশের কৃষিনির্ভর জেলাগুলো বজ্রপাতের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

জেলাগুলো হলো সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়। এছাড়া ঢাকা, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।

গবেষক দলের সদস্য কুয়েটের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তন্ময় মজুমদার বলেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি যে বজ্রপাত সরাসরি কৃষি খাতে কর্মরত মানুষদের প্রভাবিত করছে। বোরো ধান ঘরে তোলা ও আমন ধান চাষের জন্য এপ্রিল থেকে জুনই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

এ সময়েই বাংলাদেশে বজ্রপাত বেশি ঘটে। ফলে মাঠে কাজ করা কৃষকরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এজন্য বজ্রপাতে মৃত্যুহার কৃষকদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার উপাত্তে দেখা গেছে, বজ্রপাতের ঘটনা সাধারণত ভোরবেলা, বেলা ১১টা থেকে ১টা এবং বিকাল ৫-৬টার মধ্যে বেশি ঘটে। এ সময়ে কৃষকরা মাঠে কাজ করেন।

তাছাড়া কৃষির জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব জেলা রয়েছে, সেগুলো বজ্রপাতের জন্য অন্যতম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বজ্রপাতে কৃষকদের মৃত্যু থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং বিস্তৃত এলাকাজুড়ে থাকা জমিতে বজ্রপাত প্রতিরোধী আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা, যাতে বজ্রপাত শুরু হলে কৃষকরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।’

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এপ্রিল থেকে জুন—তিন মাস দেশের কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বোরো শস্য কাটা হয়। এর পরই আমন ও আউশের জন্য জমি প্রস্তুত ও ধান রোপণ করা হয়। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি ও ফলের জন্য এ সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। বজ্রপাতের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘‌দেশের যেসব এলাকা কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, সেখানে যদি বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু বাড়তে থাকে তাহলে একসময় কৃষিতে আগ্রহী লোক পাওয়া যাবে না। কৃষকরা আমাদের কাছে আসেন। তাদের আশঙ্কার কথা বলেন। এক্ষেত্রে আমরা তাদের সচেতন করি। কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণলায় বা আবহাওয়া অধিদপ্তরকে। আমাদের মতো কৃষি কর্মকর্তাদের আসলে এখানে কিছু করার নেই।’

দেশের কৃষি নানা কারণেই হুমকির মুখে। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে বজ্রপাতের সমস্যা। বজ্রপাতে মৃত্যু ও আহতের ঘটনা নিয়ে ২০১৯ সালে একটি গবেষণা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান।

তার গবেষণায় দেখা যায়, ২০১২-১৬ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে ১ হাজার ২ জন মারা যান এবং ৬১৩ জন আহত হন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালের পর থেকে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে।

অন্য একটি গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বজ্রপাতে ২৭২ জন, ২০১৯ সালে ২৩৬, ২০২০ সালে ২১৩, ২০২১ সালে ২৯৬ ও ২০২২ সালে ২৫৩ জন মারা গিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বজ্রপাতে মৃত ও আহতদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এভাবে যদি কৃষকরা বজ্রপাতে আক্রান্ত হতে থাকেন তাহলে ভবিষ্যৎ কৃষি ঝুঁকিতে পড়বে। বিশেষ করে এপ্রিল, মে ও জুন হলো বোরো মৌসুম। কৃষকদের যদি সুরক্ষা দেয়া না যায়, তাহলে তারা পেশা বদলাতে বাধ্য হবেন।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ৮০ লাখ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও বজ্রপাতে একসময় অনেক মানুষের মৃত্যু হতো। কিন্তু বজ্র নিরোধক খুঁটি বা পোল স্থাপন ও মানুষকে সচেতন করে মৃত্যুহার কমিয়ে আনা হয়েছে। তাই বজ্রপাতে মৃত্যুহার কমাতে বজ্রপাতের পূর্বাভাসকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির কল্যাণে আগে থেকেই জানা যায়, কোন এলাকায় কোন সময় বজ্রপাত ঘটবে। অর্থাৎ কোনো এলাকার ওপর দিয়ে বজ্রমেঘ প্রবাহিত হবে কিনা তা বলা যায়।

এ বিষয়ে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‌আবহাওয়া অধিদপ্তর রাডার সিস্টেমের মাধ্যমে বজ্রপাতের আগাম ঘোষণাগুলো স্থানীয় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রেডিও-টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে ঘোষণার মাধ্যমে বজ্রপাতের সময় জানিয়ে দিতে পারি। এতে স্থানীয়রা সচেতন হয়ে বজ্রপাতের ৩০-৪৫ মিনিট সময় ঘরে অবস্থান করবে। বজ্রপাত প্রতিরোধের জন্য আগেকার অনেক ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহৃত হতো।

এখন এর ব্যবহার অনেকটা কমে এসেছে। এখনো নগরী বা দেশের পুরনো ভবনগুলোর চূড়ায় ত্রিশূল আকারের তিনটি লোহার ফলা এবং বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের মাধ্যমে তা মাটির নিচ পর্যন্ত সংযুক্ত রয়েছে, যাকে আর্থিং তার বলা হয়। আমরা ভবনগুলোয় এমন বজ্র নিরোধক দণ্ড ব্যবহার করতে পারি।

এছাড়া খোলা স্থানের বৈদ্যুতিক খুঁটি কিংবা টাওয়ারে লাইটনিং অ্যারেস্টার (যাকে লাইটনিং আইসোলেটরও বলা হয়) বসাতে পারি। লাইটনিং অ্যারেস্টার হলো বৈদ্যুতিক তার এবং স্থলের মধ্যে একটি ব্যবধান, যা বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেমের আস্তরণ এবং কন্ডাক্টরকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু কৃষকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের জন্য বিস্তৃীর্ণ হাওর অঞ্চলে শেল্টার সেন্টার নির্মাণ জরুরি।’

40 ভিউ

Posted ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com