কক্সবাংলা রিপোর্ট(২ জানুয়ারী) :: কক্সবাজার শহরে ও টেকনাফের হ্নীলায় নাশকতার অভিযোগে মামলায় কক্সবাজার জেলা ও হ্নীলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৪৫ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার বিকেলে আদালতের এই আদেশ পাওয়ার পর সন্ধ্যায় নেতাকর্মীদের কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর কক্সবাজার শহরের ফায়ার সার্ভিসের পূর্ব পাশে টমটম পুড়িয়ে নাশকতার অভিযোগে কক্সবাজার পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সহ বিএনপি-ছাত্রদল-শ্রমীক দলের ১৬ জন এবং সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা শহীদুল ইসলাম বাহাদুর সহ ১৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সদর থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে(১৫/৩) মামলা হয়। একই মামলায় দুইজন এডভোকেট সহ ১৭ জন নেতাকর্মীর নামে নাশকতার মামলা দেয় পুলিশ। পরে আসামিরা হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন।
বুধবার সেই জামিনের সময় শেষ হয়। এদিন নেতাকর্মীরা জোট বেঁধে আত্মসমর্পণ করেন আদালতে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ আত্মসমর্পণ করা আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জেলহাজতে যাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-কক্সবাজার পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ও সাবেক কমিশনার রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা শহীদুল ইসলাম বাহাদুর(ভিপি বাহাদুর), জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাদত হোসেন রিপন,ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমান ফাহিম, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মিজানুল আলম মিজান, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরওয়ার রোমন, শহর ছাত্রদলের সভাপতি এনামুল হক এনাম, ছাত্রনেতা রাশেদুল হক রাশেদ, তারেক বিন মোকতার, এম.ইউ বাহাদুর ও মহিউদ্দিন সিকদার।
তবে আদালত আইনজীবী বিবেচনায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মনির উদ্দিন ও শিক্ষানবীস আইনজীবী মিনারুল কবির মোঃ আল আমিনকে জামিন প্রদান করেন। আর এ মামলায় কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার হাসান মো: ইদ্রিস পালাতক রয়েছেন।
অপরদিকে টেকনাফ থানার পৃথক ২টি নাশকতা মামলায় আদালতে জামিন নিতে গিয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের ৩১ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাকর্মীকেও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত বছরের ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করার সময় পুলিশি অভিযানে জব্দ করা হয় বিস্ফোরকসহ আরো সরঞ্জাম। এ ঘটনায় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক মো. রাজু আহমেদ গাজী ৬০ জন আসামির নাম উল্লেখ করে আরো ১৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি নাশকতার মামলা দায়ের করেন।
২ জানুয়ারী দুপুরে টেকনাফের পৃথক ২টি নাশকতা মামলায় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চাইলে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজ আত্মসমর্পণ করা আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
জেলহাজতে যাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা নাইক্ষ্যংখালীর সৈয়দ হোছনের পুত্র সিরাজ উদ্দিন, হায়দর আলমের পুত্র রশিদ আহমদ,হ্নীলা পূর্ব সিকদার পাড়ার ইসলাম মিয়ার পুত্র রবি আলম, শামসুল আলমের পুত্র মোহাম্মদ ইসমাঈল, মৃত ছিদ্দিক আহমদের পুত্র মোক্তার আহমদ, হ্নীলা পানখালীর মৃত আব্দুল মজিদের পুত্র নুর জাফর, মমতাজ আহমদের পুত্র দিলদার আহমদ, মৃত আব্দুস সালামের পুত্র আবু বক্কর, মৃত নুর আহমদের পুত্র মোক্তার আহমদ, মৃত রশিদ আহমদের পুত্র রফিক,হ্নীলা সিকদার পাড়ার সৈয়দ নুরের পুত্র ডাঃ সোহেল, মৃত সৈয়দ হোসনের পুত্র মোঃ আব্দুল্লাহ, মৃত আব্দুস সবুরের পুত্র সরওয়ার, রশিদ আহমদের পুত্র ওসমান, পশ্চিম সিকদার পাড়ার আব্দুল কাদেরের পুত্র আব্দুল্লাহ, জাদিমোরা নয়াপাড়ার সৈয়দ হোসনের পুত্র মোঃ আলী, তৈয়ব আলমের পুত্র অলি হোসেন, নাজির আহমদের পুত্র নুর বশর, খুইল্যা মিয়ার পুত্র দিল মোহাম্মদ, পূর্ব পানখালীর মাষ্টার শাহ আলমের পুত্র রফিক, মৃত আব্দুস সালামের পুত্র মোঃ জাহাঙ্গীর ও আব্দুল মোনাফের পুত্র বাহাদুর শাহ, জাদিমোরার মৃত অলি আহমদের পুত্র আবু তাহের, মাষ্টার জাকের হোছনের পুত্র মুরাদ জিয়া, হ্নীলা পূর্ব সিকদার পাড়ার মৃত আবু বক্করের পুত্র মফিজুর রহমান, সালামতের পুত্র শাহজাহান, আবুল বশরের পুত্র নুরুল কবির, উলুচামরীর নাজির হোছনের পুত্র মকবুল আহমদ, পশ্চিম সিকদার পাড়ার হাজী লাল মিয়ার পুত্র মোঃ হারুন, মমতাজ আহমদের পুত্র রশিদ আহমদ ও ফরিদ আহমদসহ ৩৩জন জামিনের আবেদন করেন। তম্মধ্যে পশ্চিম সিকদার পাড়ার আবু বক্করের পুত্র আব্দু রহিম ও পূর্ব সিকদার পাড়ার শামসুল আলমের পুত্র মোঃ ইব্রাহীম অনুপস্থিত ছিল। আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
উল্লেখ্য,আগেই উক্ত মামলায় হ্নীলা ইউপির ৫নং ওয়ার্ড সাবেক ইউপি মেম্বার আলী আহমদকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। টেকনাফ থানার জি/আর-৬৮৫/১৮ইং মামলায় ২৪জন এবং অপর একটি নাশকতা মামলায় ৭জনসহ মোট ৩১জনকে কারাগারে প্রেরণের খবর লোকজনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মমতাজ আহমেদ জানান, মামলার অভিযুক্তরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মোঃ ফিরোজের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে পুলিশের রুজু করা নাশকতা মামলাগুলোকে ‘মিথ্যা, হাস্যকর, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলেছে জেলা বিএনপি। আর স্যোশাল মিডিয়ায় এনিয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
Posted ৮:৩৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Chy