কক্সবাংলা ডটকম(১১ ডিসেম্বর) :: ১০ ডিসেম্বর ছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মব্যস্ত একটি দিন। সকালে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া আরও নানা কাজের মধ্যে দিনভর ছিলো তার ব্যস্ততা। এই ব্যস্ততার মধ্যে তিনি নজর রাখছিলেন পদ্মা সেতুর দিকে।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান অর্থাৎ ৪১ নাম্বার স্প্যান বসানো হলো। এর ফলে পুরো পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বস্তুত এই পদ্মা সেতু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একক ইচ্ছা, আগ্রহ এবং দূরদর্শিতার কারণে।
বিশ্ব ব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়নে অস্বীকৃতি জানালো তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। তখন এনজিওগুলো অর্থায়ন করা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলো। তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য তৎপর ছিলেন। মূলত তার আগ্রহ এবং পরিকল্পনার কারণেই নিজের টাকায় বাংলাদেশ পদ্মা সেতু করেছে।
গতকাল যখন প্রধানমন্ত্রীকে এই পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর খবর দেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তখন প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখ চিক চিক করে ওঠে, যেন এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। শুধুমাত্র উচ্চারণ করলেন আলহামদুলিল্লাহ। সামান্য সময়ের আবেগ।
এরপর আবার তিনি কর্ম ব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন। এভাবেই আবেগকে সংযত করে বাংলাদেশকে নিত্য নতুন উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মা সেতুর ‘আনসাং হিরোস’
পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। আগামী বছর ডিসেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর বুক চিরে মানুষ চলাচল করতে পারবে। এটি বাংলাদেশের গৌরব ,অহংকার। বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার এক প্রতীক বিজ্ঞাপন। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার সাহসিকতা, দূরদৃষ্টি এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার এক বড় পরিচয় বহন করবে। এই পদ্মা সেতুর মাধ্যমেই ইতিহাসে অমরত্বের স্বাদ পেলেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু বিনির্মাণের এই চিন্তা এবং নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সাহসী পদক্ষেপ , শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত এবং একক অবদান। তবে পদ্মা সেতু বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু নেপথ্যের নায়ক রয়েছেন যারা শেখ হাসিনাকে সাহস যুগিয়েছেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। তাদের এই সমর্থন, অবদান এবং সহযোগিতা ছাড়া পদ্মা বাস্তবায়ন শেষ পর্যন্ত হত কিনা সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। শেখ হাসিনা যে সাহস এবং প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন তার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসব ব্যক্তিরা নেপথ্যে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। পদ্মা সেতুর সাফল্য নিয়ে শেখ হাসিনার কথা যখন বলা হচ্ছে এবং ওবায়দুল কাদের প্রশংসা করা হচ্ছে তখন এই নেপথ্যের নায়কদেরকেও একটু চিনে রাখা দরকার। পদ্মা সেতু বিনির্মাণে যারা পিছন থেকে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আলোচিত কয়েকজনকে নিয়েই এই প্রতিবেদন।
১। শেখ রেহানা
শেখ রেহানা সবসময় শেখ হাসিনার সাহস, নির্ভরতা ও আস্থার জায়গা। প্রধানমন্ত্রী যখন কোন বিষয় সঙ্কটে পরেন, যখনই শেখ হাসিনার নিবিড়, নিরপেক্ষ ও নির্মোহ কোন পরামর্শের প্রয়োজন হয় তখনই তিনি শেখ রেহানার শরনাপন্ন হন। শেখ রেহানা তার শুধু ছোট বোনই নন, শেখ হাসিনার সাহস ও অনুপ্রেরণার জায়গা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ রেহানাই প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন মানবিকতার হাত বাড়াতে। পদ্মা সেতু নিয়ে যখন বিশ্বব্যাংক জটিলতা সৃষ্টি করে এবং অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় তখন এই শেখ রেহানাই সাহস জুগিয়েছিলেন। শেখ রেহানাই বলেছিলেন নিজেরদের টাকায় পদ্মা সেতু করা সম্ভব, এতে দেশের মানমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। শেখ রেহানার এ পরামর্শ শেখ হাসিনা গ্রহণ করেছিলেন।
২। আবুল মাল আব্দুল মুহিত
পদামা সেতু বিনির্মাণের আরেক জন আনসাং হিরো। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুকে নির্মান এই চিন্তাকে অনেকে অবাস্তব ও অকল্পনীয় বলেছিলেন এবং শেখ হাসিনা যখন এই ব্যাপারে ঘোষনা দেন তখন এটাকে অসম্ভব বলে সমালোচনা করেছিল বিভিন্ন মহল। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে সহমত পোষন করেছিলেন। এ ব্যাপারে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা কতটুকু হবে, কিভাবে অর্থ জোগাড় হবে তার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি আবুল মাল আব্দুল মুহিত। মুহিত শুধু সমর্থনই জানাননি, অর্থ সংগ্রহের কাজটিও নীরবে নিভৃতে করেছেন।
৩। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম
পদ্মা সেতু নিয়ে যখন সংকট তৈরি হয় বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে তখন বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে সেতু সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন কে সরিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম কে এই সেতু বিভাগের সচিব নিয়োগ দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল দুর্নীতির অভিযোগ থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে মুক্তি দেয়া। কারণ খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম একজন সৎ এবং নিষ্ঠাবান সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন । পদ্মা সেতু বিভাগের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি এই পদ্মা সেতু নিয়ে সব বিতর্কের অবসান ঘটান। এই পদ্মা সেতু প্রকল্পকে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতি মুক্ত ভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দৃঢ়তার পরিচয় দেন। কাজেই এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে তিনিও একজন নেপথ্যের নায়ক।
৪ । সৈয়দ আবুল হোসেন
বাংলাদেশ পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন সাবেক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল । যদিও সে অভিযোগ সত্য হয়নি কিন্তু পদ্মা সেতুর রূপ পরিকল্পনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন।
৫ । মোশারফ হোসেন
সাবেক সেতু সচিব এবং পরবর্তীতে এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন পদ্মা সেতুর প্রাথমিক কাজ এবং এর ভূমি অধিগ্রহন, আনুষ্ঠানিকতা, টেন্ডার প্রক্রিয়া ইত্যাদি কর্মকাণ্ড ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছিলেন ।পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার হয়ে নির্যাতিত হয়েছিলেন । এছাড়াও আরো অনেক নেপথ্যের নায়ক রয়েছেন যাদের কারণে আজ বাংলাদেশ পদ্মা সেতু পেয়েছে এবং বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশ চাইলে সব কিছুই করতে পারে।
Posted ৭:২২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy