কক্সবাংলা ডটকম :: ঘানা এবং উরুগুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম দুটো ম্যাচে জয়ের ফলে আগেই বিশ্বকাপের শেষ ১৬ নিশ্চিত করে ফেলেছিল পর্তুগাল। শুক্রবার সেই অর্থে ছিল নিয়ম রক্ষার ম্যাচ। দুটো বিষয় দেখার ছিল। প্রথম একাদশে কটা পরিবর্তন করা হয়, পাশাপাশি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে খেলানোর ঝুঁকি নেন কিনা কোচ ফার্নান্দো স্যানতস।
পর্তুগাল দলে ৬টি পরিবর্তন হল। তবে নিজের জায়গা ধরে রাখলেন রোনাল্ডো। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে এই ম্যাচটা শুধু জিতলেই হত না, উরুগুয়ে এবং ঘানা ম্যাচের দিকেও চোখ রাখতে হত। ম্যাচ শুরু হওয়ার প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে গেল পর্তুগাল। ডান দিক থেকে দিয়েগো দ্যালোর একটা দুর্দান্ত মাইনাসে বল জালে পাঠিয়ে দিলেন রিকার্ডো হোরতা।
পর্তুগিজ লিগে ১৯ গোল করে আসা ফুটবলারটিকে লম্বা রেসের ঘোড়া বলা হচ্ছে। তবে লড়াই থেকে হারিয়ে যায়নি দক্ষিণ কোরিয়া। তার ফল পাওয়া গেল ২৭ মিনিটে। কর্নার থেকে ভেসে আসা একটা বলে সমতা ফিরিয়ে আনল তারা। বলটা অবশ্য রোনাল্ডোর পিঠে লেগে দক্ষিণ কোরিয়ার কিম ইয়ং গুণের সামনে পড়ল। কোনাকুনি শটে ১-১ করলেন তিনি।
এরপর ভিতিনহার একটা শট কোরিয়ান গোলরক্ষক আংশিক প্রতিহত করলে রিবাউন্ড বল ফলো করে হেড দিয়েছিলেন রোনাল্ডো। কিন্তু লক্ষ্যে অভ্রান্ত থাকতে পারেননি। আজ একটি পয়েন্ট পেলেই গ্রুপের শীর্ষে থেকে শেষ করত পর্তুগিজরা। তাই মরিয়া আক্রমণ নয়, বরং কাউন্টার এটাক নির্ভর ফুটবল খেলার পথে হেঁটেছিল রোনাল্ডোর দল।
অন্তত প্রথমার্ধে এটাই ছিল পর্তুগালের স্ট্র্যাটেজি। দেখার ছিল দ্বিতীয় আর্ধে পর্তুগাল ড্র করে খুশি থাকে, নাকি জয়ের হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্যে আক্রমনাত্মক হয়। ৬৫ মিনিটে তিনটে পরিবর্তন নিল পর্তুগাল। রাফায়েল লীয়াও, আন্দ্রে সিলভা, পাওলিনহাকে নামানো হল।
পর্তুগাল খেলাটা কন্ট্রোল করল, কিন্তু একবারও জয়ের জন্য মরিয়া হল না। তাদের দেখেই মনে হচ্ছিল এক পয়েন্ট পেলেই সন্তুষ্ট। জয় এলে বোনাস। ক্যানসেলোর হাতে বল লেগেছে বলে পেনাল্টির দাবি তুলেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলাররা। নাকচ করে দেন আর্জেন্টিনার রেফারি।
৬ মিনিট অতিরিক্ত সময়ের শুরু হতেই দক্ষিণ কোরিয়ার অধিনায়ক সং হিউ মিন একটা দুর্দান্ত দৌড়ে পর্তুগিজ ডিফেন্সকে ভেঙে পাস বাড়ালেন। হোওয়াং দুর্দান্ত ফিনিশ করে গেলেন। দেখিয়ে দিলেন বিশ্বাস থাকলে এবং স্বপ্ন দেখার ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। তবে এরপরেও তাদের নির্ভর করতে হচ্ছিল উরুগুয়ে এবং ঘানা ম্যাচের দিকে। উরুগুয়ে দুই গলের ব্যবধানে জিতেও ছিটকে গেল বিশ্বকাপ থেকে। দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে পর পৌঁছে গেল নক আউটে।
পেনাল্টি মিসের ভূত ফিরে এলো ১২ বছর পর। প্রতিশোধ নেওয়া হল না ঘানার। অন্যদিকে, ঘানার বিরুদ্ধে গোটা ম্যাচে দাপট দেখিয়ে ২-০ গোলে জিতেও নকআউটে যাওয়া হলো না উরুগুয়ের। দক্ষিণ কোরিয়া পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেওয়ায় একই পয়েন্ট ও গোল পার্থক্য থাকা সত্বেও, শুধু গোল দেওয়ার নিরিখে কোরিয়া এগিয়ে থাকায়, ছিটকে গেল দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
ম্যাচ শেষে উরুগুয়ের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার সুয়ারেজের কান্নাই বুঝিয়ে দিল কাছে এসেও, দূরে চলে যাবার বেদনা। নক আউটে যেতে হলে ম্যাচটা জিততেই হত আলনসোর ছেলেদের। তাই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে উরুগুয়ে। ৯ মিনিটে পেলিস্ত্রি, ১৪ মিনিটে সুয়ারেজের পাস থেকে নুনেজের আক্রমণ দানা বাধেনি।
১৭ মিনিটে ঘানা প্রথম আক্রমণ করে। জর্ডন আইও থেকে বল পেয়ে আন্দ্রে আইওর শট উরুগুয়ের গোলকিপার রচেট বাঁচিয়ে দেন, কুডোস বলের নাগাল পাননি। এর মধ্যেই রচেট কুডোসকে ফেলে দিলে ভার পরীক্ষার পর পেনাল্টি পায় ঘানা। আন্দ্রে আইওর শট বাঁচিয়ে দেন রচেট। ১২ বছর আগে ঘানার গ্যানের পেনাল্টি মিসের ছবি তখন চোখে ভাসছিল ঘানা সমর্থকদের।
এরপরই উরুগুয়ের আক্রমনের ঝড় দেখা যায়। ৬ মিনিটের মধ্যে ২ টি গোল করে ঘানার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে দেয় উরুগুয়ে। নক আউটে যাওয়ার সুযোগও তৈরি করে ফেলে। ২৬ মিনিটে সুয়ারেজের শট ঘানা কিপার এটি জিগি ঠিকমত সেভ করতে পারেননি, ফিরতি বলে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন এরাসকেইটা। ৩২ মিনিটে সেই সুয়ারেজের থেকে পাস পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে ঘানার জালে আবার বল জড়ান এরাসকেইটা।
৩৬ মিনিটে কুডোসের আক্রমণ দানা বাঁধেনি। ৪১ মিনিটেই এরাসকেইটার কাছে হ্যাট্রিকের সুযোগ এসেছিলো কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দুটি পরিবর্তন হয় ঘানার। আন্দ্রে আয়েও ও জর্ডনের জায়গায় বুকারী ও সুলেমান আসেন, তাতে আখেরে কোনো লাভ হয়নি। ৫১মিনিটে উইলিয়ামসের ক্রস সতীর্থ কেউ পাননি।
৫৭ মিনিটে নুনেজ বক্সে পরে গেলে উরুগুয়ে পেনাল্টির আবেদন করে কিন্তু ভারের মাধ্যমে তা বাতিল হয়। ৬৮ মিনিটে আবার সুযোগ নষ্ট করে ঘানা। একই সঙ্গে উরুগুয়ে গোল সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করলেও, তাতে সাফল্য আসেনি। ৭১ মিনিটে ঘানার কুডোসের শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
৭৬ , ৭৯ মিনিটেও সুযোগ মিস করে ঘানা। ৮১ মিনিটে কুডোসের বা পায়ের জোরালো শট সার্জিও রচেট সম্পূর্ণ শরীর ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন। ৮৮ মিনিটে কাভানির গোলমুখী হেড বাঁচিয়ে দেন ঘানা গোলকিপার। এর মধ্যেই অতিরিক্ত সময়ের এক মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়া ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় চাপে পড়ে যায় উরুগুয়ে।
মাত্র একটি গোল বেশি করলেই তারা কোরিয়াকে হারিয়ে নক আউটে যাবে। কাঙ্খিত গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাপায় উরুগুয়ে।অতিরিক্ত সময়ের তিন মিনিটে বক্সের মধ্যে পরে যান কাভানি। পেনাল্টির আবেদন গৃহীত হয়নি। খেলার একেবারে শেষ লগ্নে উরুগুয়ে ভালো জায়গা থেকে ফ্রিকিক পেলেও দিলাক্রুজ সোজা ঘানা গোলকিপারের হাতে মেরে বসেন। ফলে জিতেও দেশে ফিরতে হচ্ছে উরুগুয়েকে।
Posted ১:৩৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Chy