নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া :: পেকুয়ায় হাইব্রিডকে নিয়ে যুবলীগ উপজেলা কমিটির নেতাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক সময় করতেন শিবিরের রাজনীতি। পরবর্তীতে জোট সরকারের সময়ে প্রচন্ড ক্ষমতাধর নেতার হাতকে শক্তিশালী করতে জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক চেতনাকে ধারণ করেন। বর্তমানে ওই ব্যক্তি নিজেকে স্বঘোষিত আ’লীগ কর্মী প্রচার করছে। ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই ব্যক্তি এখন চেয়ারম্যান পদে ভোট করার জন্য মনস্থির করেছেন। দাড়ি-পাল্লা ও ধানের শীষের কোলস পাল্টিয়ে ওই ব্যক্তি ইউপি নির্বাচনে নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনয়ন পেতে প্রচার প্রচারনায় ব্যস্ত।
এ দিকে সম্প্রতি ওই ব্যক্তিকে নিয়ে পেকুয়ায় ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের পদবীতে অন্তর্ভূক্ত হতে লবিং করছেন। এমনকি বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ওই ব্যক্তিকে গোপনে পদ পাইয়ে দিতে একটি প্রভাবশালী চক্র মিশন বাস্তবায়ন করছেন। এ নিয়ে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের মধ্যে দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সুত্র জানায়, উজানটিয়ার মালেকপাড়ার আমিনুল ইসলামের ছেলে এম,এম আকরাম হোছাইন নামক ব্যক্তিকে নিয়ে যুবলীগে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সুত্র জানিয়েছে, আকরাম হোছাইনকে সহসভাপতি পদে অন্তর্ভূক্তির জন্য গোপন মিশন বাস্তবায়ন হচ্ছে। যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের পদ পদবী দখলে নিতে আকরাম হোছাইন নামক ব্যক্তি টাকার মিশন নিয়ে এগোচ্ছে। গত কয়েক দিন আগে যুবলীগের কমিটিতে তাকে পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য খাতায় দস্তখতও নেয়া হচ্ছে। এ দিকে রাজনৈতিক দল আ’লীগের ভেনগার্ড হিসেবে পরিচিত যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী সেই আকরাম হোছাইনকে নিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। তাকে গোপনে পদ দেওয়ার মিশন ফাঁস হওয়ার পর যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে যুবলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। আকরামকে যুবলীগে ঠাই দেয়া হচ্ছে। এ খবর জানাজানি হলে যুবলীগ নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ জানাতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে আকরামকে নিয়ে তোলপাড় ও নিন্দা দেখা দিয়েছে। এমনকি যুবলীগ পেকুয়া উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের পক্ষ থেকে অনানুষ্টানিক বৈঠকও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে ও বিকেলে দু’দফা বৈঠকে মিলিত হন উপজেলা যুবলীগ। এ সময় গোপনে পদবীর বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়। উপজেলা যুবলীগ সহসভাপতি জিয়াবুল হক জিকু জানান, আকরাম হোছাইন উজানটিয়া এ,এস সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। ওই মাদ্রাসায় থাকতে তিনি শিবির করতেন। জোট সরকারের সময়ে আকরাম ও তার পরিবারের সকল সদস্যরা প্রভাবশালী মন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের আস্থাভাজন ছিলেন। উপজেলা যুবলীগ সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউপির চেয়ারম্যান এম, শহিদুল ইসলামকে বিএনপি সরকারের সময় পানপাড়ার একটি দোকান থেকে ধরে দিন দুপুরে অস্ত্র দিয়ে পুলিশে দিয়েছে আকরামসহ এ পরিবারের সদস্যরা।
যুবলীগ পেকুয়ার যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক জালাল উদ্দিন বলেন, মালেকপাড়ার সমস্ত গোষ্টীর মধ্যে একজনও আ’লীগ নেই। এ পরিবারের প্রতিটি সদস্য বিএনপি জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক পদে আছেন। ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফ আহমদ আকরামের চাচা। আকরামের আপন ভাই এডভোকেট মোকারম হোসেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম চট্টগ্রামের নেতা। স্বেচ্ছাসেবকদল কক্সবাজার জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মোশারফ হোসেন টিটু আকরামের চাচাতো ভাই। উজানটিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির নেতা তৌহিদ চেয়ারম্যানও তার চাচা। উজানটিয়া বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোছাইন এমজারুলও তার চাচা। এ ছাড়া যুবদল উজানটিয়ার সভাপতি ওয়াহিদও আকরামের চাচা। তাকে যুবলীগে ঠাই দিলে আমরা মেনে নিবনা।
উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন জানান, আকরামকে যুবলীগ করতে হলে ওয়ার্ড কমিটি থেকে আসতে হবে। যুবলীগে হাইব্রিডদের স্থান নেই। সাবেক ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমরা চাই ত্যাগীদের মূল্যায়ন।
সাংগঠনিক সম্পাদক ও মগনামা ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সাংবাদিক মুহাম্মদ হাসেম বলেন, গণতন্ত্র চর্চার ব্যর্থয় ঘটলে আমরা কঠোর জবাব দেব। কোন ব্যক্তির একক ইশারায় কাউকে পদ দেয়া যাবেনা। আমরা আকরামসহ তার পরিবারকে অনেক আগে থেকে জানি ও চিনি। সাংগঠনিক সম্পাদক আজগর হোছাইন বলেন, হাইব্রিডকে দিয়ে ভোট করানোর রাজনীতি আমরা মেনে নেবনা। প্রয়োজনে দলত্যাগ করব। দপ্তর সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, দলীয় ফোরাম ছাড়া গোপন সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। আগে শিবির করলে এখন আ’লীগ করবে তা আমরা অনেক দেখেছি।
যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন বলেন, এখানে মানুষের অভাব নেই। আগে যারা ছাত্র রাজনীতি করেছে এমন অনেক প্রতিভাময় ও জনপ্রিয় ত্যাগী কর্মী আছে। শূন্যপদে এদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। শহীদ চেয়ারম্যানকে অস্ত্র দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়েছে। এখন আ’লীগের জন্য মায়াকান্না। উপজেলা যুবলীগ নেতা আবদুল করিম বলেন, আকরাম শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার ছিল। তার ভাইও শিবির ছিল। এখন তাকে নিয়ে আমরা যুবলীগ করব এটা হাস্যকর।
উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক আক্তার হোছাইন জানান, আকরামকে গোপনে কমিটিভূক্ত করা হলে যুবলীগ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মূলত ইউপি নির্বাচনে আ’লীগকে দ্বিধাবিভক্ত করতে এটি চক্রান্ত। সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদুজ্জামান জানান, বংশগত ও জন্মগতভাবে এরা বিএনপি জামায়াত। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে আমরা চাটুকারদের বিরুদ্ধে যাব।
সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদ ইকবাল ও আসাদুল হক চৌধুরী জানান, যুবলীগ কারও ব্যক্তিগত সংগঠন নয়। এখানে আকরামকে কমিটিতে স্থান দেবে আমরা বসে থাকব তা হতে পারেনা। যুবলীগ নেতা হোছাইন মো: বাদশাহ বলেন, মূলত বিএনপি জামায়াতের গোপন মিশন বাস্তবায়ন করায় আকরামদের কাজ। আমরা তাকে বয়কট করব।
টইটং ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারন সম্পাদক মো: বাচ্চু মিয়া বলেন, আকরামকে যুবলীগে স্থান দেওয়া হাস্যকর বিষয়। শিলখালীর সভাপতি শেখ মো: ফরিদ বলেন, বিষয়টি শুনে আমি অবাক হয়েছি। আসলে আকরাম উনি কে। যুবলীগে হাইব্রিডদের ঠাই নেই।
রাজাখালীর সভাপতি রিয়াজ খান রাজু বলেন, আমরা এ সব মেনে নেবনা। ফেইসবুকে আমরা লেখালিখি করছি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন আকরামকে আমরা গোপনে পদ দেওয়ার পক্ষে নয়। বিএনপি কেমনে যুবলীগ করবে।
মগনামার সভাপতি রোকন উদ্দিন বলেন, আমরাতো আকরামকে চিনিনা। সাবেক ছাত্রনেতাদের ত্যাগের মূল্যায়ন না করে শিবির ও বিএনপিকে দিয়ে কমিটিতে পদ দেবে তা গঠনতন্ত্র বিরোধী। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধী।
এ বিষয়ে যুবলীগ পেকুয়া উপজেলার সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ বারেক জানান, আমি ছাপের মধ্যে ছিলাম। আকরামকে পদ দিতে আমিও স্বাক্ষর দিয়েছি। যুবলীগ পেকুয়া উপজেলার সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, আকরামের বিষয়ে জেলার সভাপতি সেক্রেটারী মত দিয়েছেন।
যুবলীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক শহিদুল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা ওয়াকিফহাল নয়। তবে কেউ যদি রাজনীতি করতে চান তাকে আগে শিকড় থেকে আসতে হবে। যুবলীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর জানান, আকরামকে ইউনিয়ন অথবা ওয়ার্ড কমিটিতে যুক্ত থাকতে হবে। এরপর পরবর্তী বিবেচনা।
Posted ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy