নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(২০ জুন) :: পেকুয়ায় টেকপাড়ায় মাতামুহুরীর ত্রিমোহনী পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এতে করে উপজেলার উপকুলবর্তী উজানটিয়া ইউনিয়নের বিপুল অংশ সাগরের জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা থেকে নেমে আসা প্রচন্ড পাহাড়ী ঢল ও আমাবস্যার ভরা তিথীতে উজানটিয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়।
প্রচন্ড স্রোত ও জোয়ারের পানির ধাক্কায় উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন ও পূর্ব অংশ টেকপাড়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সম্পূর্ন বিলীন হয়ে যায়। বিলীন ওই অংশ দিয়ে নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে গত ৫ দিন ধরে উজানটিয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে টেকপাড়ায় উজানটিয়া খালের রক্ষাবাঁধ বেড়িবাঁধের প্রায় ৩০ চেইনের বেশী বিলীন হয়। ক্রমান্বয়ে বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ আরও তীব্রতর ও দীর্ঘ হয়। ওই দিন থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উজানটিয়ার টেকপাড়া পয়েন্টে পাউবো নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধ নদীর সাথে একাকার হয়।
পানির প্রচন্ড স্রোতে এ ইউনিয়নের দক্ষিন পূর্ব পশ্চিম ও মধ্য অংশের বিপুল গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় উজানটিয়া ইউনিয়নের বেশীরভাগ এলাকায় ঈদের আনন্দ হয়নি। বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট সহ অবকাঠামো পানিতে নিমজ্জিত থাকে। মসজিদ পানিতে তলিয়ে যায়।
ঈদের জামায়াত হয়নি বেশ কয়েকটি মসজিদে। পানির স্রোতে এ ইউনিয়নের জনজীবন ব্যাহত হয়েছে। চিংড়ি ঘের, ব্যবসা প্রতিস্টান, শিক্ষা প্রতিস্টান, বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করে।
ঈদের ঠিক আগ মুহুর্তে বেড়িবাঁধ বিলীন সহ পানি প্রবেশ করায় এ ইউনিয়নে অর্থনীতির বিপর্যয় দেখা দেয়। পানির কারনে ঈদের আনন্দ ভেস্তে যায়। লোকজন যাতায়াত করতে পারেনি। এ দিকে টেকপাড়া পয়েন্টে গত ৩ বছরের ব্যবধানে একাধিক বার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এর ফলে উজানটিয়া ইউনিয়ন ও পাশর্^বর্তী মগনামা ইউনিয়ন ৩ বছর ধরে প্লাবিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বেড়িবাঁধের এ করুন পরিস্থিতির পাউবো দায়ী। গত ২০১৫ সালে টেকপাড়া পয়েন্টসহ উজানটিয়ার বেড়িবাঁধ সংষ্কারে পাউবো বরাদ্দ দেয়। সে বছর মাটি ভরাট কাজে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। ঠিকাদার মাটি ভরাট নামে সরকারী টাকা পানিতে ফেলে। বিশেষ করে নীতিমালা বহির্ভূত কাজে ব্যস্ত হয় ঠিকাদার ও পাউবো। বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটে তারা অসাধু অবলম্বনে ব্যস্ত ছিল। বাঁধের নিকট থেকে স্ক্যাবেটর দিয়ে মাটি কাটে। নদীর লেভেলে মাটি নি:সরিত হয়। ফলে সংষ্কারের ১ মাসের মধ্যে ওই অংশে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, উজানটিয়ার টেকপাড়া অংশ সহ বাধ সংষ্কারের কাজ চলমান। পাউবো টেকপাড়ায় সংষ্কার কাজ বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দেয়। ঠিকাদার চরম গাফিলতি ও নির্মাণ সময় ক্ষেপন করছিলেন। ফলে অর্থ বরাদ্দ দিলেও টেক পাড়া অংশে এখনও কাজ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি। টেকপাড়া পয়েন্টে মৎস্য চাষীরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাঁধ সংষ্কার করছিলেন। প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও আমাবস্যার ভরা তিথীতে সাগরে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাছাড়া রুপালীবাজারপাড়া, সুতাচোরা, সোনালীবাজার, ঠান্ডারপাড়াসহ ৭ টি পয়েন্টে বিলীন উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন অংশে টেকপাড়া পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। বেড়িবাঁধের পৃথক অংশ বিলীন হয়েছে। স্থানীয় সুত্র জানায়, এ অংশে প্রায় ৭শ ফিট বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে যায়। বিলীন ওই অংশ দিয়ে উজানটিয়া খালের পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।
এতে করে টেকপাড়া, পূর্ব উজানটিয়া, সুন্দরীপাড়া,
রুপালী বাজারপাড়া, মালেকপাড়া মিয়াজি পাড়া, নুরীরপাড়া, গোদারপাড়, আতরআলী পাড়া, মিডারপাড়া, ঠান্ডারপাড়া, ঘোষালপাড়া, ঘোরাঘোনা, করিয়ারদিয়া, ফেরাসিঙ্গাপাড়া, পাশ্চিম উজানটিয়াপাড়াসহ এ ইউনিয়নের বিস্তীর্ন এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়।স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম চৌধুরী ২ বছর বাঁধ সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়। জলাবদ্ধতা ও জনদুর্ভোগ লাঘর করতে চেয়ারম্যান ২ বছর আগে টেকপাড়া পয়েন্টে রিংবাঁধ দেয়। ওই রিংবাঁধ ছিল এ পর্যন্ত। এ দিকে পাউবো ভাঙ্গন কবলিত অংশ পরিদর্শন করেছেন।
বুধবার ২০ জুন দুপুরে পাউবো বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী নেতৃত্বে একদল কর্মকর্তা উজানটিয়ায় যায়। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম,শহিদুল ইসলামসহ জনপ্রতিনিধিরা ভাঙ্গন কবলিত অংশ পরিদর্শন করেছেন।
সুত্র জানায়, টেকপাড়া পয়েন্টে বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ সংষ্কার করতে জত্ররুরী ভিত্তিতে বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে সক্ষম হয় পাউবো। পানি টেকাতে টেকপাড়া অংশে বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট কাজ বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত পৌছে। সুত্র জানায়, ২/১ দিনের মধ্যে মাটি ভরাট কাজ আরম্ভ হবে। মাটি ভরাট সহ টেকপাড়া পয়েন্টে পানির স্রোত ধারা টেকাতে জিও ব্যাগসহ ফাইলিং দেয়া হবে ওই অংশে। এ ছাড়া উজানটিয়া নদী ও মাতামুহুরী নদীর হিংস্রোতা রুখতে বেড়িবাঁধের টেকপাড়া পয়েন্টে আরসিসি ব্লক বিছানোরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে পাউবো।
উজানটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম, শহিদুল ইসলাম জানায়, এ ধরনের দুর্ভোগ মানুষ আরও কতদিন বরদাশত করবে। পাউবো জনগনের সাথে তামাশা করছে। মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ আর রইল না। বরাদ্দ দেয় সরকার। টাকা গিলে ফেলে ঠিকাদার ও পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা। সরকার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে। জনগনের দুর্ভোগ ও জানমাল রক্ষা করতে আন্তরিক। তবে পাউবোর কিছু কর্মকর্তা সরকারের এ গতিশীলতাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। তারা চায় সরকারের বদনাম ও ইমেজ সংকট হউক। এরা ভিতর থেকে সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জনগনকে ফুঁসানোর চেষ্টা করছে।
Posted ১:২০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy