মো: ফারুক,পেকুয়া(২৪ জুলাই) :: পেকুয়ায় ডাক্তার সেজে চৌমহুনীস্থ আল হেরা ফার্মেসী মালিকের অপচিকিৎসায় আহমদ ছবি (৫৫) ও তার মেয়ের জামাই নুরুল ইসলাম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগি রোগী ও ফার্মেসী মালিক এর মধ্যে ব্যাপক বাকবিতন্ডাও হয়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ওই দুই রোগীকে উদ্ধার করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা দিলে তারা কোন রকম সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে,সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরে পেকুয়া চৌমহুনীস্থ আল হেরা ফার্মেসীর মালিক হাবিবুল্লাহর চেম্বারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগী নুরুল ইসলাম জানান, আমি ইটভাটার শ্রমিক হিসাবে কাজ করি। বিগত ২ মাস আগে সর্দি জ্বর হয়। আমার এক আত্বীয় পেকুয়া চৌমহুনীস্থ ডাক্তার আব্দু রহিমের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলে। সেই সময় আমি আল হেরা ফার্মেসীতে এসে ডাক্তার আব্দু রহিমের কথা জানতে চাইলে তিনি আব্দু রহিম বলে আমাকে জানায় এবং আমাকে চিকিৎসা দিয়ে ওষুধসহ ৩হাজার টাকা নেই। ১মাস ওষুধ খাওয়ার পর ভাল না হওয়ায় আবারো তার কাছে আসলে দুই হাজার টাকার ওষুধ দেই। সর্বশেষ ভাল না হওয়ায় অন্যত্র চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়।
আরেক অপচিকিৎসার স্বীকার বৃদ্ধ আহমদ ছবি বলেন, আমি গত ১৫দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। চট্টগ্রামস্থ আমার এক আত্বীয় চৌমহুনীস্থ ডাক্তার আব্দু রহিমের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলে। গত শুক্রবার আল হেরা ফার্মেসীতে এসে আব্দু রহিমের খোঁজ করি। তখন আল হেরা ফার্মেসীর মালিক আমাকে তার চেম্বারে অবস্থানকারী পল্লী চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিনকে আব্দু রহিম পরিচয় দিলে তার কাছ থেকে চিকিৎসা পত্র নিয়ে আল হেরা থেকে ২হাজার টাকার ওষুধ কিনি।
এ সপ্তাহও জ্বর একই অবস্থায় থাকায় চিকিৎসাপত্র দেখে ফোন দিলে ২৪ জুলাই সোমবার সকালে চেম্বারে আসার জন্য বলে। তাকে না পাওয়ায় ফার্মেসী মালিক ২টি ইনজেকশন দেয় এবং ১৩শ টাকা নেয় আমার কাজ থেকে। ইনজেকশন দেওয়ার সাথে সাথে আমি বেহুশ হয়ে পড়ি।
কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে দেখি আসল চিকিৎসক আব্দু রহিমের চেম্বারে আমি। পরে তিনি একটা ট্যাবলেট আমাকে খাওয়ার সাথে সাথে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেটে যায়। তাৎক্ষনিকভাবে এ বিষয়টি আল হেরা ফার্মেসীর মালিককে আসল আব্দু রহিমসহ আমি জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধরের চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসে ঘটনাটি জানলে বেশি নেওয়া ১হাজার টাকা তিনি ফেরৎ দেন।
এ বিষয়ে চিকিৎসক আব্দু রহিম জানান, দুই বছর আগে আল হেরা মেডিকেল এর মালিক হাবিবুল্লাহর ফার্মেসীতে আমি চেম্বার করেছিলাম। তার অনৈতিক কিছু কর্মকান্ডের কারণে সরিয়ে আসি। সেই ওই সুযোগে অনেকদিন ধরে আমার নাম দিয়ে চিকিৎসা করে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকে আমাকে বললেও আমি প্রতিবাদ করিনি।
সর্বশেষ আহমদ ছবির এক আত্বীয় আমাকে ফোন করে অপচিকিৎসার কথা বললে আমি হতবাগ হয়ে পড়ি। কারণ ওই লোককে আমি চিকিৎসা দিই নাই। পরে কিছু লোক আহমদ ছবিকে গুরুতর অবস্থায় আমার চেম্বারে নিয়ে আসলে আসল ঘটনা ধরা পড়ে এবং একটা ট্যাবলেট দিয়ে তাকে ভাল করি।
আল হেরা মেডিকেল হল এর মালিক মৌ: হাবিবুল্লাহ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে আমি অপচিকিৎসা দিই নাই। পল্লী চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিন আমাকে ফোন করে ওই লোককে ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বললে আমি ইনজেকশন দিই মাত্র। তার কাছ থেকে অতিরিক্ত নেওয়া টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। কেন আব্দু রহিম নাম ধারণ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি কোন ধরণের উত্তর দেননি।
পল্লী চিকিৎসক গিয়াস উদ্দিন জানান, আহমদ ছবি আমার কাছ থেকে শুক্রবারে চিকিৎসা নেয়। রাতে ফোন করলে সকালে আসতে বলি। আমাকে না পাওয়ায় আল হেরা মেডিকেল এর মালিক হাবিবুল্লাহকে ট্রাইজেক্ট ২গ্রাম ইনজেকশন দেওয়ার জন্য বলি। কেন সামান্য রোগে কঠিন রোগের ইনজেকশন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন গায়ের জ্বর বেশি তাই দিতে বলেছি।
এ বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, ট্রাইজেক্ট ২গ্রাম দেওয়া হয় রোগের শেষ পর্যায়ে চলে গেলে। সামান্য গায়ের জ্বরে এ ইনজেকশন দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। ভাগ্যে ভাল দ্রুত তাকে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া কাটানোর জন্য ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছিল। না হলে বড় ধরণের ক্ষতি হতো তার।
Posted ৯:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৪ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy