বিশেষ প্রতিবেদক,পেকুয়া(২১ মার্চ) :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় জায়গার বিরোধকে কেন্দ্র করে দোকানপাট বন্ধ রাখতে ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগ করছে একটি চক্র। আলম স্টোরের স্বত্তাধিকারী গোঁয়াখালীর রব্বতআলী সওদাগরের ছেলে নুরুল আলমকে তার জায়গা থেকে বিতাড়িত করতে ৫/৬ জনের একটি চক্র অভিনব কৌশলে দোকানপাট বন্ধ রাখার চাপপ্রয়োগ করছে।
এতে করে পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষুদ্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থকে চরিতার্থ করতে গুটিকয়েক ওই চক্র বাজারের ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার হিসেবে দেখছে।
তবে ব্যবসায়ীরা এর প্রস্তাবে অনেকটা বিব্রতবোধ ও কঠিন অবস্থায় পড়েছে। সম্পত্তির বিরোধ নেহায়াত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কেন তারা একপক্ষকে জিতিয়ে দিতে রাস্তায় নামবে এখন এ প্রশ্ন। গত কয়েক দিন ধরে পেকুয়া বাজারে ব্যবসায়ীদের কর্মসূচীমুখী করতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা ও গোপন উদ্যোগ চলছে।
পেকুয়া বাজারের একটি জায়গার আধিপত্য নিতে পেকুয়া বাজারে একটি চক্র জোরালো ভাব প্রকাশ করছে। আক্তার আহমদ, জাফর আলম, নুর মোহাম্মদ, মুজিবুর রহমান, শাহজাহানসহ কয়েকজন মিলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে।
সংঘাতময় ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে পরিস্থিতি মোড় নিচ্ছে। রব্বতআলী সওদাগরের পুত্র নুরুল আলম ও তার অপর ভাইগন পেকুয়া বাজারের প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ী। বাজার প্রবর্তন সময় থেকে রব্বতআলী সওদাগর ও তার সন্তানরা পেকুয়া বাজারে সওদা করছিলেন। বর্তমানে দুটি মুদির দোকান ও দোকানের পিছনে মালামাল রাখার গোডাউন রয়েছে। এ ছাড়া দোকানের লাগোয়া বসতবাড়িও রয়েছে।
১৯৯৭ সালে নুরুল আলম গং বাজার থেকে দলিল মুলে জমি ক্রয় করে। ওই জমিতে তারা বাজার প্রতিষ্টার সময় থেকে ভোগ দখলে আছে। ব্যবসা প্রতিষ্টান ও এর নিকটবর্তী জায়গার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আক্তার আহমদ গং চক্রের। এ নিয়ে পেকুয়া থানা ও স্থানীয়ভাবে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। সালিশি বৈঠকে আক্তার গংদের দাবী অযৌক্তিক হিসেবে সম্মত হয়েছে। তারা জায়গার উপযুক্ত কাগজপত্র ও দলিল দস্তাবেজ উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি। কিন্তু নুরুল আলম গং জায়গার স্থিতিবস্থার স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিল ও এর প্রয়োজনীয় তথ্যাদি উপস্থাপন করেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জমাভাগ খতিয়ানের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা ও ১৪৪ ধারা বলবৎ এর স্বপক্ষে এমআর মামলাও রুজু আছে। আক্তার আহমদ গংদের অনুকুলে নোটিশ প্রেরিত হয়। এ সময় স্থিতিবস্থা বজায়সহ বিবাদীপক্ষকে জায়গায় অনুপ্রবেশ না করতে বারণ করা হয়। তবে এ সব অবজ্ঞা করে আক্তার আহমদ গং একটি পক্ষ তৈরী করে। তিনি কাগজপক্ষীয় দাবী করলেও তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ৫/৬ জনের ওই চক্র দালিলিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত নন। তারা গায়ের জোরে ও পেশীশক্তির জোরে নুরুল আলম গংদের জায়গায় অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেকুয়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, ৫/৬ জনের একটি পক্ষ আমাদেরকে রাস্তায় নামাতে তৎপর হয়েছে। এরা দোকানে দোকানে এসে আমাদেরকে দোকান বন্ধ রাখতে চাপ প্রয়োগ করছে। প্রয়োজনে টাকাও দিতে চাচ্ছে। আসলে আমরা উভয়ই ব্যবসায়ী। জায়গার বিরোধে আমরা কেন দোকান পাট বন্ধ রাখব। এটা ওদের অযৌক্তিক দাবী। আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনেকের সাথে ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাকবিতন্ডা ও মনোমালিন্য হচ্ছে। বাজার সমিতির কার্যক্রম বন্ধ আছে। নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। আক্তারসহ ওই কমিটির দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। জাফর, মুজিবসহ ওই সিন্ডিকেট বাজার সমিতির দায়িত্বে নেই। সমিতির টাকা আত্মসাত ও লোপাট করতে তারা সিন্ডিকেট করছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নুর মোহাম্মদ, আক্তার আহমদ ও শাহজাহান দুর্ণীতিবাজ। নুর মোহাম্মদ বাজার সমিতি থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার আলিসান বাড়ি, বাজারের দোকান পাট সম্পদ অর্জনের পিছনে সমিতির অর্থ আত্মসাৎ ছাড়া আর কোন অবলম্বন নেই। এক কোটি ১৯ টাকা লোপাটের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে টীম এসেছিল। তারা অনুসন্ধান করেছে।
সেখানে নুর মোহাম্মদ লোপাটের সাথে জড়িত প্রমাণিত হয়েছে। একটি দোকান বিক্রি করে কিছু টাকা পরিশোধও করেছে। যা সবাই জানে। আক্তার আহমদও মসজিদ মার্কেটের দোকান বরাদ্ধের চুক্তি করে কোটি টাকা নিজের পকেটে ভরেছে। শাহজাহান ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাতের হদিস মিলছে। জমি বিক্রি করে ১২ লক্ষ টাকা সমিতিকে দিয়েছে। এখন পুরাতন মক্কেলরা ফের ধান্ধাবাজীতে মেতেছে। ওদের সঙ্গে সঙ্গীয় করেছে ৩/৪ জনকে। আসলে ওদের দৃষ্টি সমিতির টাকা।
ব্যবসায়ী নুরুল আলম জানান, আমি আমার প্রতিষ্টান ও সংলগ্ন জায়গায় ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। তারা আমাকে উচ্ছেদ করতে চাই। ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগ করছে। ওই কথা আমার কানেও এসেছে। তবে বিষয়টি আমি লোকেমুখে শুনেছি। এ সব প্রস্তাবে ব্যবসায়ীরা প্রত্যাখ্যান করছে।
এ ব্যাপারে মুজিবুর রহমান জানান, পেকুয়া বাজারের ২০/৩০ জন বিশেষ ও নামী দামী ব্যবসায়ী বৈঠক করেছি। তাদের সিদ্ধান্তে আমাদের ৫ জনকে পেকুয়া বাজার সমিতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে সব ব্যবসায়ীর মতামতের প্রয়োজন নেই। সব ব্যবসায়ী একই ক্যাটাগরির নই। বাজারের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসেছি।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম জানান, বিষয়টি আমাদের নজরদারী রয়েছে।

Posted ৫:১৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২২ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta