নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় ভোলা খালে ফেলছে রাসায়নিক দ্রব্য। বিষে মরছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। নাইট্রেট রাসায়নিক দ্রবণ নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক গ্যাসীয় পাউডারের বিরুপ প্রভাবে নদীর পানি বিবর্ণসহ বিষে রুপান্তর হয়েছে।
গত এক মাস ধরে পেকুয়ার প্রধান শাখা নদী ভোলা খালের পানিতে বিষাক্ত দ্রবণের দেখা মিলছে। কাঠ থেকে শুকনো গ্যাসীয় পাউডার নি:সরণ করা হচ্ছে। নি:সরিত পাউডার ফেলা হচ্ছে প্রবাহমান ভোলা খালে। জোয়ার ভাটার ভোলা খালের পানিতে দেখা মিলছে রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশ্রিত সাদা পাউডার।
সুত্র জানায়, এসব পাউডারগুলি নাইট্রেট জাতীয়। সাদা রংয়ের এসব কেমিক্যাল খালের পানিতে মিশে পানিও বিষে রুপান্তর হচ্ছে। এতে করে খালের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে। রাসায়নিক কেমিক্যাল নদীতে ছড়িয়ে পড়ার পর পেকুয়ায় মাতামুহুরীর প্রধান শাখা নদী ভোলা খালে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। নদীর পানি এখন বিষে রুপান্তর হওয়ায় মিষ্টি ও লবণাক্ত পানির মিশ্রণে নদীটির মাছসহ বিভিন্ন জৈব বিচিত্রা ও জলজ প্রাণী মারা পড়ছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, পেকুয়া বাজারের উত্তর প্রান্ত বারবাকিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জালিয়াকাটার ৫/৬ টি মোকাম থেকে রাসায়নিক কেমিক্যাল পাউডার নদীতে ফেলা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাঠ আনা হচ্ছে পেকুয়ায়। জাহাজের পরিত্যক্ত অংশ বিশেষ কাঠ গুলি এখানে এনে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঠগুলিতে ফসফরাস জাতীয় এক ধরনের পাউডার মিশ্রণ রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, কাঠমিশ্রিত পাউডারগুলি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পরিষ্কার করানো হয়। কাঠ থেকে নি:সরিত এসব পাউডারগুলি মূলত রাসায়নিক দ্রবণ। সে গুলি বিষাক্ত গ্যাসীয়। পানিতে মিশ্রিত হওয়ার পর সাদা পাউডার গুলো বিষে পরিনত হয়। এর ক্ষতিকারক প্রভাবে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। বারবাকিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জালিয়াকাটার আবুল শরীফ, হাকিম আলীসহ ৫/৬ জন ব্যক্তি পাউডার নি:সরণ কাজে জড়িত।
তারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাঠ এনে বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরী করে থাকে। এ সব মানুষের কাছে তারা বিক্রি করে। ভোলা খালের নিকটতম স্থানে জাহাজ থেকে আনা কাঠগুলি পরিশোধন করা হয়। এর অবশিষ্ট অংশ গুলি সহজে নদীতে ফেলানো হচ্ছে।
পেকুয়া বাজারের বাঁশ ব্যবসায়ী মহি উদ্দিন, আবদু রহিম, আলমগীর জানান, ভোলা খালে বাঁশ স্তুপ রেখে আমরা ব্যবসা করছি। নদীর অবস্থা খুবই মারাত্মক। পাউডারগুলি এক প্রকার মারাত্মক বিষ। মাছ মরতে আমরা চোখে দেখেছি। ভোলা খালে মাছসহ অন্যান্য প্রাণীজ মারা যাচ্ছে।
পেকুয়া বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, আবু হানিফ, পলাশ দে, সম্রাটসহ আরো অনেকে জানান, পাউডারগুলি নদীর পানি নষ্ট করছে। শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পাউডারগুলি বাতাসে মিশ্রিত হয়ে মানুষের শরীর স্পর্শ করছে। এর ক্ষতিকারক অংশ আমাদের নাকে মুখে লাগছে। চোখে লাগছে বাতাসে উড়ন্ত সাদা দ্রবণগুলি। আমরা অনেককে বলেছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
পেকুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেনজির আহমদকে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মীকি মারমা জানান, আমি সরেজমিনে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যানকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।
বারবাকিয়া ইউপির চেয়ারম্যান বদিউল আলম জিহাদি জানায়, সহকারী কমিশনার (ভুমি) মীকি মারমার ফোন পেয়ে আমি তাদের এসব খালে না ফেলতে নিষেধ করেছি।
Posted ৬:৫৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy