নাজিম উদ্দিন,পেকুয়া(১৮ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় বাংলাদেশী বংশদ্ভূত সুইডেনের নাগরিক স্বামী-স্ত্রী দম্পতি খাবার বিলি করলেন ৬শ শিক্ষার্থীর মাঝে। দরিদ্র মানুষের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে সুদুর ইউরোপের দেশ সুইডেন থেকে পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশে এসেছেন। ওই দম্পতি পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে এসে বিলি করেছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে রান্না করা খাবার। ওই দম্পতির নাম ছগির দুভাস ও রোকেয়া ছগির। তারা সুইডেনে বাংলাদেশী বংশদ্ভূত নাগরিক। মিড ডে মিল কর্মসূচীর আওতায় ওই দিন স্বামী-স্ত্রী দম্পতি বিলি করেছেন খাবার।
১৮ জানুয়ারী (শনিবার) দুপুরে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের আরবশাহ বাজার জমিদার বাড়ীতে এ খাবার বিলি করা হয়েছে। এ দিকে একই দিন রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদ্রাসা ভবনে ট্রেনিং সেন্টারও শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেলাই, কম্পিউটার, ট্রেনিংসহ ৪ টি সেক্টরে প্রশিক্ষন কর্মসুচীর আওতায় ওই ট্রেনিং সেন্টারের কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। রোটারী ক্লাব অব আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম ওই ট্রেনিং সেন্টারের উদ্যোক্তা।
পেকুয়ার প্রখ্যাত জমিদার মরহুম মোহাম্মদ কবির চৌধুরীর বাড়ির সন্তান শিক্ষানুরাগী, রোটারিয়ান এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার সহধর্মিনী অধ্যক্ষ রেবেকা সোলতানা রোটারী ক্লাব অব আগ্রাবাদ যৌথ উদ্যোগে এ কর্মসুচী পেকুয়ায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। ওই দিন দুপুরে বিইউআই ফাজিল মাদ্রাসা ভবনে “রাজাখালী ট্রেনিং সেন্টার” উদ্বোধন ও ওই কার্যক্রমের শুভ সূচনা করা হয়েছে। মিড ডে মিল কর্মসূচীর আওতায় খাবার বিলি ও ট্রেনিং সেন্টার উদ্বোধন শেষে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির উঠানে অনুষ্টিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রোটারী ক্লাব অব আগ্রাবাদ, চট্টগ্রামের প্রাক্তন সভাপতি ও প্রাক্তন জেলা সচিব, ডিষ্ট্রিক্ট (৩২৮২) রোটারিয়ান এস.কে আজিম পিন্টু, রোটারী ক্লাব অব আগ্রাবাদের প্রেসিডেন্ট (নমিনী) রোটারিয়ান শফিউল আলম, সাবেক সভাপতি রোটারিয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, রোটারিয়ান মাহমুদুর রহমান, সচিব রোটারিয়ান সুইডেনের নাগরিক ছগির দুভাস, তার স্ত্রী সদস্য রোটারিয়ান রোকেয়া ছগির, কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা রোটারিয়ান জেবুন্নেছা, রোটারিয়ান এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী নারী উদ্যোক্তা রোটারিয়ান অধ্যক্ষ রেবেকা সোলতানা, রোটারী ক্লাব অব চট্টগ্রামের সাবেক সচিব বশিরুল হক, চট্টগ্রাম শহরের ভিআইপি টাওয়ারের স্বত্তাধিকারী আবুল হোসেন ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া উপজেলা যুবলীগ যুগ্ম সম্পাদক, তরুণ রাজনীতিবিদ এম,আকতার হোসাইন, ফৈয়জুন্নেছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছরওয়ার কামাল, আরবশাহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মৌলভী আবদুল করিম, ফৈয়জুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ হোসাইন, বিইউআই মাদ্রাসার সহ-অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর সহধর্মিনী রোটারিয়ান রেবেকা সোলতানা জানান, রোটারিয়ানরা আমাদের এলাকায় ছুটে এসেছেন। আসলে তারা আর্ত মানবতার সেবার জন্য কাজ করে থাকেন। আমার শাশুড় মানুষের কল্যাণের জন্য এ বাড়ি থেকে অনেক আগেই সেবামুলক কাজ করে গিয়েছেন। এখন তার উত্তরসুরী হিসেবে এ কাজগুলি আমরা ধরে রেখেছি ও সে গুলি আরও বেগবান করছি। আমি রোটারী ক্লাব চট্টগ্রামকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমাদের সাথে একীভূত হয়ে আর্ত মানবতার সেবাকে আরও উৎসাহিত ও বেগবান করেছে। ট্রেনিং সেন্টার উম্মুক্ত করেছি। সেলাই, কম্পিউটারসহ ৪ টি সেক্টরে আমরা বিনামূল্যে প্রশিক্ষন দিচ্ছি।
দারিদ্র বিমোচন ও আত্মনির্ভরশীল খাতে আমরা যুবক যুবতীসহ বেকার সন্তান, শিক্ষার্থীদেরও এ খাতে অন্তর্ভূক্ত করেছি। ট্রেইনার নিয়োগ দিয়েছি। বেতনভাতা রোটারী ক্লাব ও আমরা দিচ্ছি। একই সাথে স্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌছাতে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি। ভবিষ্যতে এখানে হাসপাতালে রুপান্তরিত করার পরিকল্পনা আছে। একই সাথে উচ্চ শিক্ষার জন্য এখানে কলেজ প্রতিষ্টারও পরিকল্পনা আছে।
রোটারিয়ান জেবুন্নেছা জানান, আমি আজীবন শিক্ষকতা করেছি। অবসরে গিয়েছি। যা টাকা সঞ্চিত ছিল তা আর্ত মানবতার জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য আমি ১৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও টাকা দেব।
সুইডেন নাগরিক রোটারিয়ান রোকেয়া ছগির জানান, আমরা বিদেশ থেকে এসেছি। এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী রেবেকা সোলতানা হচ্ছে আমাদের অনুপ্রেরনা। মিড ডে মিল কর্মসূচী তারা এ বাড়ি থেকে অনেক আগেই শুরু করেছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের পড়ালেখার জন্য এ পরিবারটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আমরা যুক্ত হয়েছি মাত্র। ৬শ শিক্ষার্থীকে রান্না করা খাবার বিলি করেছি।
রোটারিয়ান এসকে আজিম পিন্টু জানান, ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর থেকে রোটারি ক্লাবের উৎপত্তি হয়েছে। এর জনক ছিলেন পল পি-হেরিস। পীড়িত, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণের জন্য এ সংস্থার আত্মপ্রকাশ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ২শতের বেশী দেশে এ কার্যক্রম চলমান আছে। বিশ্বে ১২ লক্ষাধিক মানুষ রোটারিয়ানে যুক্ত হয়েছে। ১৯৭৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রোটারী ক্লাব অব আগ্রাবাদ প্রতিষ্টা হয়েছে।
রোটারিয়ান এজেএম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, পেকুয়ায় আমরা এ কার্যক্রম আগে থেকে গ্রহন করেছি। তিন দফা মেডিকেল ক্যাম্প শেষ করেছি। আড়াই হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষধ সরবরাহ দিয়েছি। প্রায় ৪শ শিশুকে খৎনায় চিকিৎসা সুবিধা দিয়েছি। বৃক্ষরোপন কর্মসুচী হয়েছে গত বছর। আমরা গরীব অসহায়দের জন্য এ বাড়ি থেকে কার্যক্রম অনেক আগে থেকে গ্রহণ করেছি। ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের জন্য নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় করে থাকি। খাবার বিলি, শিক্ষা সামগ্রী, স্কুল ড্রেসসহ নানাবিধ আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছি। এতিম ও হেফজখানাও আমরা চালু রেখেছি। শিক্ষকদের বেতন ও খাওয়ার দিচ্ছিও আমরা।
Posted ১০:৫০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy