মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৪ ডিসেম্বর) :: পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমারের সামরিক সেনাও উগ্রবাদী রাখাইন সশস্ত্র জনগোষ্টির পৈচাষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ,শিশুর সাথে কথা বলেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্ব্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।
(১ ডিসেম্বর শুক্রবার) বিকেল ৫টায় ঢাকার সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে আন্তঃধর্মীয় সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গারা পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি ১২টি দাবী উত্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পের ১৬ সদস্য বিশিস্ট রোহিঙ্গা দল নেতা আহমদ হোসেন(৬০)।
পোপের সাথে সাক্ষাৎকালে রোহিঙ্গারা ১২ দাবী উত্থাপন করে বলেন, মিয়ানমারে ১৩৫ জাতি রয়েছে। তৎমধ্যে রোহিঙ্গাদেরও জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। আরকানে অবস্থানরত মিয়ানমার সামরিক জান্তাদের ব্যারেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। মিয়ানমারের আইটিবি ক্যাম্পে আশ্রয়ের নামে নজরবন্ধি করে রাখা ৭হাজার রোহিঙ্গা নারী,পুরুষ,শিশুকে যার যার বাড়ী ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
মিয়ানমার জান্তারা রোহিঙ্গাদের জীবন নাশের জন্য সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে মাটির নিচে স্থল মাইন্ড পুঁতে রেখেছে ওইসব মরণাস্ত্র সরিয়ে ফেলে নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। ২৫ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সামরিক জান্তা কর্তৃক বর্বরোচিত হামলা ও পুড়িয়ে দেওয়া বাড়ী ঘর পুনঃ নির্মাণ ও লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দিতে হবে।
মিয়ানমারের জেলখানায় দীর্ঘদিন থেকে আটক ৫হাজার রোহিঙ্গাকে নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। ২৫ আগষ্টের পর থেকে কোন কারণ ছাড়া আটক রোহিঙ্গাদের ছেড়ে দিতে হবে। আরকানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে স্বাধীন ভাবে চেলাফেরাসহ ব্যবসা বাণিজ্য করার অনুমতি দিতে হবে।
ওআইসি,জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি মিয়ানমারে রাখতে হবে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা যুবকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সম্পাদিক চুক্তিতে আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি রাখতে হবে। আরকান রাজ্যে বসবাসরত ছেলে/মেয়েদের স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসায় পড়ালেখার সুযোগ দিতে হবে।
মিয়ানমার সামরিক জান্তা হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে রোহিঙ্গাদের চোরা বাঙ্গালী হিসেবে আখ্যায়িত করছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য লিখিত চুক্তি করতে হবে। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক তা সারাবিশ^কে জানিয়ে দিতে হবে, মিয়ানমার সরকারকে। রোহিঙ্গাদের এসব দাবীর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন পোপ ফ্রান্সিস।
১৬জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের মধ্যে রয়েছে- বালুখালী ক্যাম্পের আহমদ হোসন (৬০) কামাল হোসন(৪৮) লালু মাঝি(৪০) ব্লক মাঝি ফয়েজুল্লাহ(৩৮) আইয়ুব আলী মাঝি(৪০) খাইরুল আমিন(৪৫) কলিম উল্লাহ(৩৫) মোহাম্মদ ইউনূছ(৩২) গুলিবিদ্ধ মিয়া হোসন(২৫) মৌলভী কলিম উল্লাহ(৩৫) ও ধর্ষিতা ৩মহিলা ও শিশুসহ ১৬জন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জানা যায়, পোপ ফ্রান্সিস তাদের ১২টি দাবীর কথা শুনে পোপ তার নিজ বাসায় বলেন, আজ ঈশ^রের উপস্থিতি তা রোহিঙ্গারূপে আর্ভিভূত হয়েছে।
তিনি বঞ্চিত,নিপীড়িত,নির্যাতিত মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য বিশ^বাসির প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সরকার মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে।
রোহিঙ্গারা সাংবাদিকদের আরো জানান, তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে পোপ তাদের মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন। এসব উপস্থিত রোহিঙ্গা শিশুদের আদর করে বলেন, যারা তোমাদের আঘাত করেছে তাদের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি। তোমরা (রোহিঙ্গারা) আমায় ক্ষমা করো। পরে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল ১২টি দাবী সম্বলিত বার্মিজ ভাষায় লিখা একটি দাবী নামা পোপ ফ্রান্সিসের হাতে তুলে দেন।
Posted ৩:৩৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy