কক্সবাংলা ডটকম(৬ ডিসেম্বর) :: দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা দিন দিন করুণ হয়ে উঠছে। টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীরা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট থেকে টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
পরবর্তীতে ফের দরপতনের পথে হাঁটে পুঁজিবাজার।
গত চার মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। এই সময়ে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিহীন হয়ে পড়েছেন। দৈনিক লেনদেন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। ৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একদিনে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ৩৩৫ কোটি টাকায়।
দিনের পর দিন পুঁজি হারানোর কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে রাষ্ট্রের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এবং বৈষম্য দূর করতে সংস্কার করছে। অর্থ পাচার ও লুটপাটের কারণে যে অর্থনীতি ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল, সেখান থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর আশা জাগাচ্ছে। ডলার সংকটে আগে কোম্পানিগুলো এলসি খুলতে পারছিল না, এখন সে সমস্যা নেই। তবে এসবের ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। বিত্তশালীরা ব্যাংকের আমানত ও ট্রেজারি বন্ডকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। ফলে বাজারে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা লোকসানের শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। আর ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা চাকরি হারানোর শঙ্কায় আছেন।
দেশের দুই প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বেশির
ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমে এসেছে। গতকাল লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমতে থাকে। দুপুর ১টার পর থেকে শুরু হওয়া ঢালাও দরপতনে দিনশেষে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর নিম্নমুখী ছিল।
ডিএসইতে গতকাল ৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে, বিপরীতে ৩০৮টির দর কমেছে, আর ৩৮টির দর অপরিবর্তিত ছিল। দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্ট কমে ৫,১৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাছাই করা ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১,৯১১ পয়েন্টে, আর শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে ১,১৬৩ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৪১ কোটি টাকা কম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৬৪ পয়েন্ট কমে গেছে। বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির শেয়ারদর বেড়েছে, ১২৫টির কমেছে, আর ২৯টির অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
দর পতনের এমন হালের কারণে বিনিয়োগকারীরা দলে দলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করছেন। বিনিয়োগকারীদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, অর্থনীতির চার স্তম্ভের মধ্যে পুঁজিবাজারের অবস্থা করুণ।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। আর ব্রোকার হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে নীরব কান্না। বাজরের এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তাদের ছাঁটাইয়ের তালিকায় থাকতে হবে। ফলে তারা চাকরি হারানোর ভয়ে রয়েছেন।
অর্থনীতির সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের উদ্যোগ সত্ত্বেও শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকারের সুস্পষ্ট নীতি, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। এ সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি আরও বাড়বে এবং বাজার থেকে অনেকেই সরে যাবেন।
Posted ২:০৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta