কক্সবাংলা ডটকম :: একদিকে কট্টর ডান পন্থা, অন্যদিকে বিভাজন ঠেকাতে ধর্মনিরপেক্ষতার ডাক। দুই পক্ষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নিতে চলেছেন ইমানুয়েল মাখোঁ। আগেরবারের চেয়ে কম ভোটার উপস্থিতির মধ্যে সহজ ব্যবধানে ল পেনকে পরাজিত করেছেন তিনি। জ্যাক শিরাকের পর মাখোঁ হলেন পরপর দুবার জেতা ফরাসি রাজনীতিক।
শুরু থেকেই এ নির্বাচনে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত ইমানুয়েল মাখোঁর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫৩ বছর বয়সী কট্টর ডানপন্থী প্রার্থী ল পেন। প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে এবার তৃতীয়বারের মতো লড়েন তিনি। আগেরবার ২০১৭ সালে মাখোঁর কাছেই পরাজিত হয়েছিলেন ন্যাশনাল র্যালি পার্টির এ প্রধান। তবে গতবারের তুলনায় এবার তার জনসমর্থন ব্যাপক বেড়েছে। এক দশক ধরেই কট্টর ডানপন্থী অনুসারী বাড়াতে ল পেন ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। দিনের শুরুতে প্রথম ভোট দেন ল পেন। তিনি তার দল ন্যাশনাল র্যালি পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হেনিন বিউমন্টে ভোট দেন। তবে দিনের পরের ভাগে ভোট দেন ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি লাঞ্চ টাইমের আগ মুহূর্তে উত্তর উপকূলীয় লে তোকুয়েটের রিসোর্টে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন। তবে সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, এবার ভোটার উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। ২০১৭ সালের চেয়ে কম ভোটার এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ভোট গ্রহণের সময় শেষ হয়ে এলেও ভোটারদের উপস্থিতি তেমন বাড়েনি। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, এবার ভোটদানের হার পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২ শতাংশ কমেছে। এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার শেষ হয় প্রচার-প্রচারণা।
১০ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট পদে হয় প্রথম দফার ভোট গ্রহণ। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইমানুয়েল মাখোঁ, ম্যারিন ল পেনসহ ১২ জন প্রার্থী। গণনা শেষে মাখোঁ পান ২৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পেন পান ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট। এছাড়া আরেক প্রার্থী জ্য লুক মিনশ ২১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। প্রথম দফা ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়ে দ্বিতীয় দফার ভোট।
এবারের নির্বাচন শুরু থেকেই নানা ইস্যুতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। একদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে সরবরাহ সংকটসহ নানা কারণে ইউরোপ ও বিশ্ববাজারে জরুরি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে বেড়ে যায় জীবনযাত্রার খরচ। বিভিন্ন দেশে দেখা দেয় ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি। ফ্রান্সেও এই সংকট প্রভাব ফেলে নাগরিকদের জীবনযাত্রায়। কট্টর ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ম্যারিন ল পেন তার নির্বাচনী প্রচারে মাখোঁর বিরুদ্ধে এ ইস্যুকেই প্রধান বানিয়েছেন। এর পাশাপাশি অভিবাসন ও মুসলিম ইস্যুতে কঠোর অবস্থান তাকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থান দেয়। বিশেষ করে হিজাব নিষিদ্ধের ব্যাপারে ল পেনের সোজাসাপ্টা অবস্থান তাকে অতি ডানপন্থীদের আরো কাছের মানুষে পরিণত করে। মা যেমন তার সন্তানকে সুরক্ষা দেয়, সেভাবে ফ্রান্সকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন পেন।
তবে তাকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে ভোটারদের নির্বাচনে নিস্পৃহ হয়ে ওঠার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। ফ্রান্সের বিভিন্ন শহর যেমন প্যারিস, রিমস, ট্র্যাপসসহ একাধিক শহরে ভোটের সংবাদ সংগ্রহরত বিবিসির সাংবাদিকরা জানান, ভোট নিয়ে নাগরিকদের বড় অংশের মধ্যেই অনাগ্রহ দেখা গেছে। ‘দুপক্ষ একই’, ‘মাখোঁ কিংবা ম্যারিন দুজনের মধ্যে পার্থক্য নেই’, ‘রাজনীতি নিয়ে আমি ফেডআপ’ অনেকে এসব কথা বলেছেন। এটিও বাড়তি সুবিধা দিয়েছে ল পেনকে। তিনি মাখোঁকে ধনীদের প্রেসিডেন্ট বলেও মন্তব্য করেন।
এদিকে মাখোঁ তার নির্বাচনী প্রচারে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি এই ভোটকে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়ে একটি গণভোট বলে মন্তব্য করেন। ল পেনের বিরুদ্ধে বিভাজন ও সমাজে ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রান্স নিয়ে খুশি নন ল পেন ও তার দল। তার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিরও অভিযোগ করেন মাখোঁ।
Posted ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৫ এপ্রিল ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Chy