কক্সবাংলা ডটকম(১০ জানুয়ারি) :: বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মোসলেহ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও খেতাবসহ আরও ৫১ জনের মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনও বহাল রয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের শীর্ষ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী মেজর (অব.) শরীফুল হক (ডালিম) এর মুক্তিযুদ্ধের সনদ ও বীরউত্তম খেতাব।
৫২ জনের তালিকায় জঘন্যতম এই খুনির নাম না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ১৯ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভায় মোসলেহ উদ্দিনসহ ৫২ জন মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।
তবে বাতিল হওয়া এই তালিকায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের জঘন্যতম ওই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী মেজর (অব.) শরীফুল হক (ডালিম) এর নাম নেই। বরং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) প্রকাশিত বীরউত্তম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ১৯ নম্বরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী মেজর ডালিমের নাম।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য বীরত্বের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ সর্বোচ্চ খেতাব) এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সর্বোচ্চ খেতাব বীরউত্তম হিসেবে ৬৮ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বের। সেনা, নৌ, বিমান এবং মুক্তিযুদ্ধে গঠিত গণবাহিনী থেকে ৬৮ জনকে দেয়া হয় অনন্য এই বীরউত্তম খেতাব। যেখানে সেনাবাহিনী থেকে ৪৯ জন, নৌবাহিনী থেকে ৮ জন, বিমান বাহিনী থেকে ৬ জন এবং গণবাহিনী থেকে ৫ জনকে মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই খেতাব দেয়া হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও সরাসরি অংশগ্রহণকারী হিসেবে মেজর (অব.) শরীফুল হক ডালিমের নাম অনেক আগেই বাতিল করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ.বি তাজুল ইসলাম। রোববার (১০ জানুয়ারি) মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করে প্রকাশিত গেজেটে ৫২ জনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি ডালিমের নাম না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
এ.বি তাজুল ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, ৫২ জনের তালিকায় তো ডালিমের নাম থাকার কথা। কেন নাই বুঝছি না। আমার জানা মতে জামুকার যে কমিটি ছিল সেখানে ডালিমের নামও সুপারিশ করা হয়েছে। তার নাম বাতিল না হলে দ্রুত যেন বাতিল করা হয় সে ব্যাপারে আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে আগামী বৈঠকে কমিটিকে (স্থায়ী কমিটি) বিষয়টা জানাবো।
বাতিলের তালিকায় ডালিমের নাম থাকা উচিত ছিল মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ৫২ জনের তালিকায় ডালিমের নাম নাই এটা আমি জানি না। আমি দ্রুতই মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইবো। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কার কি ভূমিকা ছিল সেটা আর প্রধান থাকে না, যখন স্বাধীনতার স্থপতির হত্যাকাণ্ডে কেউ জড়িত থাকে।
তবে এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল ও ক্ষুদ্রবার্তা পাঠানো হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর খুনিসহ ৫২ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রিসালদার (বরখাস্ত হওয়া) মোসলেহ উদ্দিন খানসহ ৫২ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করেছে সরকার। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭০তম সভায় সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়। জামুকার সুপারিশের পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে।
গত ৫ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর জামুকার সভায় খুনি মোসলেহ উদ্দিনের বীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া আরও ৫১ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি মোসলেহ উদ্দিন বর্তমানে পলাতক রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় এই বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা। মোসলেহ উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরের দত্তেরগাঁও গ্রামে। মোসলেহ উদ্দিনের সেনা গেজেট নং-৬৪৩। কিছু দিন আগে মোসলেহ উদ্দিনকে ভারতে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হলেও সরকার তা নিশ্চিত করেনি।
এছাড়া সনদ বাতিল করাদের মধ্যে রয়েছেন—নরসিংদী সদরের আবুল ফজল, মো. জয়নাল, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের মৃত গোলাম মোস্তফা, গাজীপুরের কালীগঞ্জের আবদুল কাদের, মো. আলতাফ হোসেন, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের মো. ওয়াহিদুর রহমান ও মরহুম মো. আবদুল মালেক, কক্সবাজার উখিয়ার রুহুল আমিন, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ডা. এ গাফফার মিয়া (যুদ্ধাহত)।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির মো. সামাদ আলী, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঁদ মোহাম্মদ, মো. ওসমান আলী, মো. জাকির হোসেন, আ. কাদের মোল্লা, আ. রহমান, আ. জব্বার, সরদার মো. বয়েত রেজা, মো. শামসুল হক, মৃত সিরাজুল ইসলাম, মো. আ. গফুর খান, মো. শফি উদ্দিন, মো. নাজিম উদ্দিন, মো. আ. রব, মো. জামাত আলী, মো. আ. সামাদ, মো. আফজাল হোসেন, মো. আ. আউয়াল, মো. রফিকুল ইসলাম, মৃত আনছার আলী এবং মৃত নুরুল ইসলামের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
সনদ বাতিল হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন পাবনার ঈশ্বরদীর মো. তরিকুল ইসলাম, পাবনা সদরের মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের মো. আব্দুল বাছেদ করিম ও সখিপুরের মো. আ. বছির মিয়া, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মৃত ইলিয়াস মিয়া, তোফাজ্জল হোসেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মো. শহীদুল্লাহ সরদার, মৃত আলী আকবর, মনিরুল ইসলাম, রহমত উল্লাহ, আবদুল মাজেদ।
বরিশালের উজিরপুরের মো. বেলায়েত আলী বিশ্বাস, মো. আবদুল হাকিম মোল্লা, এছাহাক মুন্সি, আবদুল মাজেদ আলী হাওলাদার, মৃত মো. আ. রহিম, হারুন অর রশিদ ও আ. রহমান সরদারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়।
এছাড়াও কিশোরগঞ্জের মৃত মো. মুখলেছুর রহমান, মো. নাসিরুল ইসলাম খান ও মো. আজিজুল হকের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
Posted ৮:০৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy