কক্সবাংলা ডটকম(১১ মে) :: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে শুক্রবার বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদিও ৩১৭ মিলিয়ন ডলারের এই আধুনিকায়ন প্রকল্প দেশটির ব্যয়বহুল বিদেশী কোম্পানিগুলোর ওপর নির্ভরতা কমাবে কিন্তু এই কর্মসূচির আর্থিক জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
বাংলাদেশের জাতির জনক এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে এই স্যাটেলাইটের নাম রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু-১ (বিএস-১) স্যাটেলাইট। এবছরের শেষ দিকে নির্বাচনের পথে অগ্রসর হওয়া দেশটির সরকার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের দৃশ্য জনগণকে দেখাতে আউটডোর লাইভ স্ক্রিনের ব্যবস্থা করেছে। এর মাধ্যমে সরকার তার এক দশক ক্ষমতায় থাকার সাফল্য তুলে ধরতে চায়।
বিএস-১ স্যাটেলাইট বাংলাদেশ ও আশপাশের দেশগুলোকে কেইউ-ব্যান্ড ও সি-ব্যান্ড টেলিভিশন ব্রডকাস্ট ও ডাটা সম্প্রচার সুবিধা দেবে। ৩.৭ টন ওজনের বিএস-১ তৈরি করে থালেস এলেনা স্পেস এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট এটি পরিচালনা করবে।
টেলিযোগাযোগের জন্য ২০০৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরতা এড়িয়ে চলে। তখন সামরিক সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার গোয়েন্দাগিরির আশংকা থেকে এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। দেশটির ২৮টি টিভি চ্যানেল তাদের সম্প্রচারের জন্য চীনা, ভারতীয় বা সিঙ্গাপুরের স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। এ জন্য বছরে তাদেরকে ১৪ মিলিয়ন ডলার দিতে হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জাব্বার বলেন, বিএস-১ শুধু কারিগরি বা বাণিজ্যিক ইস্যু নয় এটি দেশের জন্য একটি অতুলনীয় গর্বের বিষয়। এই স্যাটেলাইট থেকে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের অর্ধেক বিদেশীদের কাছে ভাড়া দেয়া যাবে। এর মানে হলো এই প্রকল্পের ব্যয় মাত্র ৮ বছরেই তুলে আনা যাবে।
কিন্তু বাংলাদেশের টিভি কোম্পানিগুলোর এ নিয়ে সন্দেহ রেয়ছে। দেশটির অন্যতম বৃহৎ টিভি চ্যানেল-চ্যানেল-৭১ এর এমডি ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন এই চ্যানেলের অরবিটাল স্লট স্থানীয় চ্যানেলগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করবে এবং এর কেইউ-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডারগুলোও একটি সমস্যা।
তিনি বলেন, আমরা এই ব্যান্ড ভালোভাবে অপারেট করতে পারবো না। এমনকি সামান্য বৃষ্টি হলেও এই ব্যান্ডের ফ্রিকোয়েন্সি এমন বিকট শব্দ করবে যে আমাদেরকে অপারেশন বন্ধ রাখতে হবে।
এই স্যাটেলাইট কর্মসূচিতে অর্থায়নের জন্য সরকার এইচএসবিসি হোল্ডিং থেকে ১৮৮.৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে।
শ্রীলংকা ভিত্তিক থিংক ট্যাংক এলআইআরএনই-এশিয়া’র সিনিয়র পলিসি রিসার্স ফেলো আবু সাইদ খান বলেন, বর্তমান অবস্থায় সাত-আট বছরে এই স্যাটেলাইটের খরচ তুলে আনা অসম্ভব বিষয়।
বাংলাদেশে মোবাইল টেলিফোন অপারেটর এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব খান বলেন, স্যাটেলাইট কোম্পানির বর্তমান প্রধান একজন আমলা। স্পষ্টতই তিনি কোন বাণিজ্যিক কোম্পানি পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ নেননি।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, বিএস-১-এর ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় করার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ ভারতের ৮৪টি এবং চীনের ২৪৪ স্যাটেলাইট রয়েছে। সেগুলোর দরের সঙ্গে বাংলাদেশ পাল্লা দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট একটি নতুন কোম্পানি এবং এর কোন অভিজ্ঞতা বা এক্সপার্টাইজ না থাকায় নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে বলেও মনে করেন তিনি।
Posted ১২:৪৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy