এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১৯ ডিসেম্বর) :: চকরিয়া উপজেলার উপকুলীয় জনপদ বদরখালীতে ভুয়া মৎস্য উন্নয়ন সমবায় সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে একটি চক্র নিরীহ ২৭জন চাষীর ভোগদখলীয় একটি মৎস্য প্রকল্প দখলচেষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে প্রকৃত মালিকদেরকে ওই মৎস্য প্রকল্প থেকে উচ্ছেদে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয় জমি মালিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ভুয়া মৎস্য উন্নয়ন সমিতির নামে জমি মালিকদের উচ্ছেদ ঘটনায় জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা থাকলেও অভিযুক্ত দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে ঘুরাফিরা করছে। এ অবস্থায় অভিযুক্ত দুর্বৃত্তরা জমি থেকে উচ্ছেদে প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়ার কারণে ভোগদখলীয় মালিকরা জমি রক্ষা নিয়ে চরম আতঙ্কে ভুগছেন।
অভিযোগে জমি মালিকরা জানিয়েছেন, পেকুয়া উপজেলার করিয়াদ্বিয়া মৌজার ২৭ জন গরীব মৎস্য চাষীর নামীয় বিএস সিট ৬ ও বিএস দাগ নং- ৩৫০২ এর আন্দর বি.এস ২৭টি খতিয়ানভুক্ত ৩৯ একর জমির বিপরীতে মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখিত জমির মৎস্য প্রকল্পটি বৈধভাবে ভোগদখলে থেকে মৎস্য চাষ করে আসছেন মালিকপক্ষের ২৭ জন চাষী।
ভুক্তভোগী চাষীরা অভিযোগ তুলেছেন, সম্প্রতি সময়ে তাদের মৎস্য প্রকল্পটি অবৈধভাবে জবরদখলে নিতে স্থানীয় একটি ভুয়া মৎস্য সমিতির স্বঘোষিত নেতা পরিচয়ে বদরখালী ১নং ব্লক এলাকার মৃত তজু মিয়ার পুত্র নুরুল হোছাইন ও আবদুল কাদের প্রকাশ আব্দুলুর পুত্র আবুল হোছাইন ও তাদের সহযোগি একই এলাকার মৃত দলিলুর রহমানের পুত্র তমিজ উদ্দিন একটি অপচেষ্ঠা চালাতে শুরু করেছে। অভিযুক্তরা মৎস্য প্রকল্প থেকে উচ্ছেদে প্রতিনিয়ত নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়ার কারণে ভোগদখলীয় প্রকৃত জমি মালিক মৎস্য চাষীরা নিজের জমি রক্ষা নিয়ে চরম আতঙ্কে ভুগছেন।
জমি মালিকরা দাবি করেছেন, অভিযুক্ত চক্রের অন্যতম হোতা নুরুল হোছাইন, আবুল হোছাইন ও তাদের সহযোগিদের বিরুদ্ধে চকরিয়া ও পেকুয়া থানায় চাঁদাবাজি, শিশু ও নারী নির্যাতন, হত্যার হুমকি সহ একাধিক ফৌজদারী মামলা রয়েছে। প্রতিটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশী তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে ইতিমধ্যে দাখিল হয়েছে। সর্বশেষ চকরিয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এন জিআর মামলা (নং- ২৪/২০১৯) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ আদালতে দাখিল করেছে।
এছাড়াও ভুক্তভোগী মৎস্য প্রকল্প মালিকপক্ষ বাদি হয়ে অভিযুক্ত আবুল হোছাইন, নুরুল হোছাইন ও তমিজ উদ্দিন গংদের বিরুদ্ধে পেকুয়া থানায় দায়েকৃত দুইটি মামলা ৬৪১/১৮ ও জি.আর ৯৪/১৮ এবং চকরিয়া থানায় দায়েরকৃত জি.আর ২৩৭/১৮ ও জি.আর ৩৩৩/১৮ মামলা দায়ের করেন। অতিসম্প্রতি উল্লেখিত মামলা সমূহে তাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার সংবাদ পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা বর্তমানে মৎস্য প্রকল্পের প্রকৃত মালিকদের হয়রানী করে যাচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ৭ তারিখ ২৩৪১ নং নিবন্ধিত একটি ‘ভরাট চর মৎস্যচাষ উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিঃ নাম দিয়ে ইতিমধ্যে অভিযুক্তরা অন্যের জায়গায় মৎস্য চাষ করে গত দেড়বছরে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ভুয়া মৎস্য সমিতির নাম ব্যবহার করে মৎস্য প্রকল্পের জমি দখল চেষ্ঠার ঘটনায় কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা সমবায় কার্যালয়ে এলাকার নিরীহ লোকজন উল্লেখিত সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোন ধরণের প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জহিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হোছাইন, মাষ্টার আবদুল জলিল, আবদুল গফুর ও করিম দাদসহ অনেকে।
এলাকাবাসি জানিয়েছেন, গরীব মৎস্য চাষীদের প্রকল্প দখলচেষ্ঠার ঘটনায় অভিযুক্ত আবুল হোছাইনের বাবা আবদুল কাদের (আব্দুলু) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের উপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। পাক-বাহিনীর সহায়তায় চালানো নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওইসময় এলাকার অনেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৮বছর পর মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতনকারী আব্দুলুর ছেলে আবুল হোছাইন এখন ভূয়া সমবায়ী সেজে এলাকার নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে নির্যাতন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
এ অবস্থায় দরিদ্র মৎস্য চাষী ও এলাকার লোকজন অভিযুক্ত দখলবাজ চক্রের বিরুদ্ধে আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহনে জেলা পুলিশ সুপার ও চকরিয়া থানার ওসির জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Posted ১০:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Chy