কক্সবাংলা রিপোট(২ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহাড়ছড়ার এপিবিএন চেকপোস্টে মেজর সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে একদিনে ৩টি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। চাদাঁ না পেয়ে টেকনাফের মুছা আকবর ও সাহাব উদ্দিন এবং চন্দনাইশ উপজেলার দুই সহোদর আজাদ ও ফারুক নামে মোট ৪ ব্যাক্তিকে হত্যার অভিযোগ এ মামলা হয়।
এর মধ্যে কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেই বহিস্কৃত ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকী ১টি হয়েছে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
বুধবার আমলি আদালত-৩ এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হেলাল উদ্দিনের আদালতে প্রথম এজাহারটি দায়ের করেন টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার বাসিন্দা শাহানা আক্তার। এজাহারে প্রদীপ ছাড়া আরও ২৬ জনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে ২২ জন পুলিশ সদস্য।এছাড়া চন্দনাইশ উপজেলার নিহত দুই সহোদরের ছোট বোন রিনাত সুলতানা শাহীন বাদি হয়ে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে ওসি প্রদীপসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে নিহত স্বামী মোহাম্মদ মুসা আকবরের হত্যার বিচার চেয়ে শাহানা আক্তার এই এজহার দায়ের করেন। আদালতের বিচারক এজহারটি আমলে নিয়ে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে এই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্যে টেকনাফ থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে একই দিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (টেকনাফ -৩) আদালতে হত্যার অভিযোগ এনে এজাহার দায়ের করেছেন টেকনাফের মধ্যম হ্নীলার কাঞ্জর পাড়ার আব্দুর রহমানের পুত্র হাফেজ আহমদ(৪০)। এজাহারে প্রধান আসামি করা হয়েছে টেকনাফ থানার সাবেক এসআই দিপক বিশ্বাস।২নং আসামী করা হয়েছে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাঞ্জর পাড়ার মওলানা সিরাজুল হকে পুত্র আমিনুল হক এবং ৩নং আসামী করা হয়েছে সাবেক ওসি প্রদীপ দাশকে। এছাড়া আরও ২৫ জনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ জন পুলিশ সদস্য এবং ৯ জন পলিশের সোস।
এজাহারে জানা যায়,২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল টেকনাফ দুপুরে এসআই দীপক বিশ্বাসের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাহাব উদ্দীনকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে দাবীকৃত টাকা দিতে না পাড়ায় ২০ এপ্রিল রাতে কাঞ্জরপাড়া ধানক্ষেতে ক্রসফায়ারে সাহাব উদ্দীনকে গুলি হত্যা করা হয়। আদালতের বিচারক এজহারটি আমলে নিয়ে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে এই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্যে টেকনাফ থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।
২ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার আদালতে দুটি মামলা দায়েরের পর চন্দনাইশের দুই ভাইকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি ও গুলি করে হত্যার অভিযোগ এনে টেকনাফ থানার বিতর্কিত ওসি প্রদীপসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চট্রগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন নিহত দুই ভাই ফারুক ও আজাদের স্বজনরা।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) তাদের ছোট বোন রিনাত সুলতানা শাহীন বাদি হয়ে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে ওসি প্রদীপসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে এই মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এএসপিকে (আনোয়ারা) মামলাটি তদন্ত করে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রদীপ কুমার দাশ ছাড়াও এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক ইফতেখারুল ইসলাম, কনস্টেবল মাজহারুল, দ্বীন ইসলাম ও আমজাদ। এছাড়া স্থানীয় চন্দনাইশ থানার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও এই ঘটনায় জড়িত দাবি করে তাদের নাম তদন্তে জানা যাবে বলে মামলার এজহারে উল্লেখ করেন বাদি।
মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট জিয়া আহসান হাবীব এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দুই সহোদরকে তুলে নিয়ে গিয়ে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে হত্যা করেন টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেশব চক্রবর্তীর যোগসাজশে ওই দুই ভাইকে তুলে নিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিলেন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত’ দুই ভাইয়ের স্বজনরা।
এর আগে গত ১৩ জুলাই প্রথমে বাহারাইন ফেরত ছোট ভাই আজাদ নিখোঁজ হয়। এর দুইদিন পর ১৫ জুলাই আজাদের বড় ভাই ফারুককে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের সামনের ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় চন্দনাইশ থানা পুলিশ। ওদিন সন্ধ্যায় ফারুককে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়। কয়েক ঘন্টার মাথায় ফারুক ও আজাদের মায়ের মোবাইলে একটি নম্বর থেকে ফোন করে অজ্ঞাত পরিচয় একজন বলেন, ‘তোর দুই ছেলে আমাদের কাছে আছে। দুই ছেলেকে জীবিত ফেরত চাইলে রাতের মধ্যে আমাদের ৮ লাখ টাকা দিতে হবে। না হলে সকালে ছেলের লাশ পাবি।’ একথা বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। যেমন কথা তেমন কাজ। এর পরদিন ১৬ জুলাই সকাল ৮টা নাগাদ টেকনাফ থানা থেকে তাদের মায়ের নম্বরে ফোন করে জানানো হয় দুই ভাই আজাদ ও ফারুক টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
Posted ৫:৩০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy