সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য দমনসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব বিলীনের জন্য দায়ী সব ধরনের হুমকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিত ও সঠিকভাবে গণমাধ্যমগুলোতে তুলে ধরতে পারলে তা বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের ধরণ এবং গতিধারা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেতে সাহায্য করবে। শুধু তাই ই নয়, এতে করে সরকারি কর্তৃপক্ষও বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে উৎসাহী হবেন। ফলে বিশ্বব্যাপী বিপদাপন্ন অনেক বন্যপ্রাণী যেমন বাঘ, বনরুই, কচ্ছপ, হাঙ্গর ও শাপলাপাতার বেশ কিছু প্রজাতিকে চিরতরে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এমন প্রজাতিসহ অসংখ্য প্রজাতির স্থলজ এবং জলজ বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবৈধ ব্যবসা- বাণিজ্যের কারণে এদের একটা বড় অংশ আজ বিলুপ্তপ্রায়। দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডাব্লিউসিএস) বাংলাদেশ বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর একটি ডাটাবেস সংরক্ষণ করে আসছে।
২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিবেদনকৃত ৬০৯টি বন্যপ্রাণীর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত ঘটনার মধ্যে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষেত্রেই বন্যপ্রাণী প্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে প্রাণীকে ভুল নামে সনাক্ত করা হয়েছে। অনেক প্রতিবেদনেই জব্দকৃত প্রাণী বা দেহাংশের পরিমাণ, গ্রেফতারকৃত অপরাধীর সংখ্যা কিংবা পরবর্তী বিচারকার্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। বিস্তারিত এসব তথ্য-উপাত্ত বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরণ ও গতিধারা সম্পর্কিত ধারনার পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগনের মাঝে বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্য দমনে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এ সংক্রান্ত অপরাধগুলোর প্রতিবেদনের গুণগত মানোন্নয়নে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক ও সম্পূর্ণ প্রতিবেদন লেখার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ ও বন অধিদপ্তর যৌথভাবে ২৯শে জানুয়ারি কক্সবাজারের তারকা হোটেল লং বিচে একটি দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমস্মূহের ৩২ জন প্রতিনিধি এই কর্মশালাটিতে অংশ নিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ, জনাব মোঃ ইসমাইল তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে একটা বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা হলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা। বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আমাদের সকলের একাত্ম হয়ে লড়তে হবে। সাংবাদিক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের বন্যপ্রাণীরা আমাদের সম্পদ। যদি আমরা দ্রুতই কোন পদক্ষেপ না নেই অচিরেই আমরা এদের চিরতরে হারিয়ে ফেলবো।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন “বন্যপ্রাণী অপরাধ বা অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত সঠিক এবং সম্পূর্ণ প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে মানোন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আংশিক তথ্য নয়, বিস্তারিত ও সঠিক খবরাখবর তুলে ধরতে হবে। কোন প্রজাতি, কোথা হতে আসছে, কিভাবে আসছে, কোথায় যাচ্ছে, কতজন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পরবর্তী বিচারকার্যের কি হলো, সবকিছু। তাহলেই কেবল বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
কর্মশালার প্রশিক্ষক ও ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এই কর্মশালাটি অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীদেরকে বন্যপ্রাণীর ব্যবসা- বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রতিবেদনসমূহের ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে সঠিক ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন লেখার ও জনগণকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে সহায়ক ভূমিকা পালনের সুযোগ করে দিবে।”
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমকর্মীরা বিভিন্ন অনুশীলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবেদনের ত্রুটি ও তথ্য অপ্রতুলতা চিহ্নিত করে সঠিক ও তথ্যবহুল প্রতিবেদন লেখা, নিয়মিতভাবে বাণিজ্যকৃত প্রাণীসমূহ সনাক্ত করার উপায় ও বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বন্যপ্রাণীর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ও বিধিমালাসমূহ সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মশালায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সকল স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সার্কেলের বন সংরক্ষক মোঃ আব্দুল আউয়াল সরকার তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে, গ্রেফতার করতে এবং বিচারকার্য সম্পন্ন করতে দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বন অধিদপ্তর এবং ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় কার্যকরি প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়মিতভাবে পরিচালনা করছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও জনমত তৈরির মাধ্যমে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্যের বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরে গণমাধ্যমকর্মীরাও আমাদের এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।”
এছাড়াও প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. লস্কর মাকছুদুর রাহমান, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার; মোঃ তারিকুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাডভাইজার; সামিউল মোহসেনিন, কো-অর্ডিনেটর,বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রাম; এবং নাদিম পারভেজ, এডুকেশন কো-অর্ডিনেটর, ডাব্লিওসিএস বাংলাদেশ।
Posted ২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy