কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুন) :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গত মানুষের উদ্দেশে বলেছেন, বন্যায় ভেঙে পড়বেন না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। গতকাল সকালে সিলেট সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা হস্তান্তর করেন এবং পরে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও বিতরণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম তাঁর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান সার্কিট হাউসে উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকাল ৮টায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে ঢাকা থেকে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘লো-ফ্লাইং মুডে’ হেলিকপ্টার থেকে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর সকাল ১০টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখানে প্রায় সোয়া ২ ঘণ্টা তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।
বেলা ২টার দিকে হেলিকপ্টারে ঢাকা ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল (রহ.) এবং হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকে। সরকার বা বিরোধী দল যেখানেই আওয়ামী লীগ থাকুক না কেন, আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা সর্বদা সারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে যান, যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেননি এবং ওই এলাকার ছবি তাঁকে পাঠিয়েছেন যা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করেছে। সেই ছবি আমি সেনাপ্রধান, আমাদের অফিস, বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে এমনটা আগেভাগেই অনুমান করা যাচ্ছিল। তাই খাদ্যগুদাম রক্ষা ও সেগুলো থেকে খাদ্যসামগ্রী বের করার রাস্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সিলেটের এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। প্রতিবার বন্যায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা এলে এমন দুবার-তিনবার করেই আসে। এটাই প্রকৃতির খেলা।
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে মাটি উঁচু করে আর কোনো রাস্তা করা হবে না, এলিভেটেড রাস্তা হবে। এটা সহজে নষ্ট হয় না, বন্যার মতো দুর্যোগে যাতায়াতেও সুবিধা হয়। পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা ঠিক রাখতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু একবার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করলে হবে না। তারপর নিয়মিত মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে। ছোটবেলায় সিলেটে বেড়াতে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশাল বিশাল ড্রেন ছিল, সব বাড়ির সামনে পানি যাওয়ার ড্রেন ছিল, তার ওপর স্ল্যাব দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা। দুর্ভাগ্য, এখন কিন্তু নেই। বিল্ডিং বানিয়ে এমন অবস্থা পানি যাওয়ার জায়গা নেই। তিনি বলেন, সে সময় যারা তৈরি করেছিলেন, প্রকৃতির কথা চিন্তা করেই করেছেন। কিন্তু এখন আমাদের সময়ে যারা করছেন, তারা হয়তো চিন্তাভাবনা করছেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যত খাদ্য ও ওষুধ লাগে সব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, রোগবালাই যাতে না ছড়াতে পারে সেজন্য যেখান থেকে পানি নামবে সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা যাতে চাষাবাদ করতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্যা একটু দীর্ঘস্থায়ী হলে ধানের চারার জন্য সংরক্ষিত বীজ ও সার আমরা কৃষকদের সঙ্গে সঙ্গে দেব। কৃষক যাতে ফসল ফলাতে পারে সে ব্যবস্থাটাও আমরা নেব। তিনি বলেন, মৎস্য খামারিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাদের খামারের মাছ ভেসে গেছে। তবে বন্যায় পুকুরে মাছের পোনাও ঢুকবে। যেসব মৎস্য খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।
বন্যায় বিএনপির কাছ থেকে কী পেয়েছেন মেয়র আরিফকে প্রধানমন্ত্রী :
সিলেট সার্কিট হাউসে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় বন্যায় বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে কী পেয়েছে তা মেয়র আরিফের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। মতবিনিময়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বক্তব্য দেওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মেয়র আরিফের উদ্দেশে বলেন, ‘তার দলের কেউ (বন্যা উপদ্রুতদের সহযোগিতায়) আসেন নাই। উনিই (মেয়র আরিফ) বলুক তার দলের কাছ থেকে কী পাইছেন, আমরা শুনি।’ সিসিক মেয়র আরিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার উপস্থিতির পর এখানকার মানুষ আশার আলো দেখতে পেয়েছে। তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। আপনার এখানে আসার খবরের পর থেকেই মানুষ অনেক আশায় ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আসছেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই কোনো ব্যবস্থা নেবেন। নগরীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি মেয়র অসাধু ব্যবসায়ীদের শুকনো খাবারের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।
মতবিনিময়কালে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি মতিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন প্রমুখ।
পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে দুই থানা উদ্বোধন :
গতকাল পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে দুটি থানাসহ পুলিশের পাঁচটি উন্নয়ন ও বিশেষ কাজ গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ মে সারদা পুলিশ একাডেমিতে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জনগণের সাহায্য-সহযোগিতায় এদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। আমি দুনিয়ার অনেক জায়গায় গিয়েছি। গ্রেট ব্রিটেনে দেখেছি একজন সিপাহিকেও জনসাধারণ শ্রদ্ধা করে। কোনো পুলিশ কর্মচারীকে দেখলে তারা আশ্রয় নেওয়ার জন্য তার কাছে দৌড়ে যায়। তারা মনে করে পুলিশ তাদের সহায়।’ “জাতির পিতার এ নির্দেশ আপনারা মেনে চলবেন, সেটাই আমি চাই।
আমাদের দেশেও পুলিশ বাহিনী সেভাবেই জনগণের আস্থা অর্জন করবে, যেন জনগণ মনে করে তার জীবন রক্ষায়, মান রক্ষায় পুলিশই হচ্ছে শেষ ভরসা। কাজেই সেই ভরসার স্থান হিসেবে পুলিশকে জনগণের সামনে নিজেকে তুলে ধরতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে ‘পদ্মা সেতু (উত্তর) থানা’ ও ‘পদ্মা সেতু (দক্ষিণ) থানা’ উদ্বোধনের পাশাপাশি গৃহহীন, ভূমিহীন অসহায় মানুষের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক নির্মিত ১২০টি গৃহ হস্তান্তর, নবনির্মিত ১২টি পুলিশ হাসপাতাল, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ছয়টি নারী ব্যারাক এবং অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আখতার হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
Posted ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Chy