কক্সবাংলা ডটকম(৭ আগস্ট) :: জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ পেছানোর আবেদন করেও পার পেলেন না সুশান্তের প্রেমিকা অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত বলিউড তারকা রিয়া চক্রবর্তী। তিনি শুক্রবার ভারতের অর্থনৈতিক আইন-কানুন প্রয়োগ ও আর্থিক অপরাধ দমনসংক্রান্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দপ্তরে হাজির হলেন। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এ অভিনেত্রী এখন গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে আছেন।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই উঠে আসছে চমকে দেওয়া নানা তথ্য। বেশির ভাগ তথ্যই সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে কেন্দ্র করে। তদন্তের অভিমুখ এখন রিয়া চক্রবর্তীর সম্পত্তি, টাকাপয়সা ও বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে। একটানা প্রায় ছয় ঘণ্টার উপর ইডি দফতরে রিয়ার জেরা চলছে। ঘুরেফিরে উঠছে রিয়ার সম্পত্তি আর টাকাপয়সা খরচের প্রশ্ন। ২০১৮-’১৯-এ রিয়া চক্রবর্তী যেখানে ১৪ লাখ টাকা রোজগার করেন, সেখানে কী ভাবে ৬৫ লাখ টাকা খরচ করলেন তিনি? সে টাকা কোথা থেকে কী ভাবে পেলেন রিয়া? প্রশ্ন ইডির।
ইডি সূত্রে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, রিয়ার নামে মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় দুটো ফ্ল্যাট আছে। জানা গিয়েছে, মুম্বাইয়ের খারে-তে ৮৫ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। আর একটি ফ্ল্যাট আছে ৬০ লক্ষ টাকার। অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার টাকা কোথায় পেলেন রিয়া? প্রশ্ন উঠছে সেখানেও। সুশান্তের বাবা আগেই অভিযোগ করেছিলেন, সুশান্তের টাকা আত্মসাৎ করেছেন রিয়া। সুশান্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা তিনি সরিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। অন্য দিকে, গতবছর রিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল ১০ লাখ টাকা। সেখান থেকে সেই নগদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশান্তের মোট চারটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। তার মধ্যে দু’টি থেকে বড় অঙ্কের টাকা গিয়েছিল রিয়ার অ্যাকাউন্টে। মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় যে বাড়ি দু’টি কিনেছিলেন রিয়া, তার কাগজপত্রও দেখতে চাওয়া হয়েছে ইডির তরফে।
সুশান্তের বাড়ির পরিচারক, ম্যানেজার, ড্রাইভার, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সকলেই জানাচ্ছেন, সুশান্তকে সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিলেন রিয়া। সমস্ত খরচ করতেন সুশান্তের ক্রেডিট কার্ডে। শপিং থেকে শুরু করে ইউরোপ ভ্রমণ, সবটাই হতো সুশান্তের টাকায়।
এর পাশাপাশি জোর করে সুশান্তকে বান্দ্রার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে নিয়ে আসা, পরিবারের সমস্ত খরচ চালানো, বিলাসবহুল গাড়ি কেনা— সবটাই নাকি সুশান্তের থেকে আদায় করেছিলেন রিয়া। সুশান্ত যে দুটো কোম্পানি খুলেছিলেন তার মধ্যে একটা ছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি, যার অংশীদার ছিলেন রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী। সুশান্তের দ্বিতীয় কোম্পানি ভিভিড্রেজ রিয়ালিটিক্স চালু হয়েছিল ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে। এই কোম্পানি কাজ করে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নিয়ে। কোম্পানিটির পার্টনার ছিলেন সুশান্ত নিজে, রিয়া এবং রিয়ার ভাই। তবে কোম্পানি খোলার সময় যে বিনিয়োগ করতে হয় তার পুরোটাই করেছিলেন সুশান্ত। আর তৃতীয় কোম্পানিটি ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশনের হয়ে কাজ করে। নাম, ‘ফ্রন্ট ইন্ডিয়া’। ‘কেদারনাথ’-এর তারকার এই কোম্পানিটি ভারতের মানুষের স্বাস্থ্য, দারিদ্র ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করে। এই কোম্পানিতে অর্থের লেনদেন রিয়ার হাত দিয়েই করতেন সুশান্ত। যদিও সেই অর্থ যে কোম্পানির খাতেই খরচ হয়েছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় ইডি।
রিয়া চক্রবর্তী প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মুম্বাইয়ের সংবাদমাধ্যমকে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সম্পর্কিত দাদা নীরজ কুমার সিংহ জানান, রিয়া চক্রবর্তী যদি নির্দোষ হন, তাহলে তিনি যেন পালিয়ে না বেড়ান। সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সুশান্তের দাদা বলেন, রিয়া নির্দোষ হলে তদন্তে তার সাহায্য করা উচিত।
ধারণা করা হচ্ছে,জিজ্ঞাসাবাদে বেকায়দায় পড়তে পারেন বাঙালি অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। বেশ কিছু কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে তাঁকে। কেননা, ইতিমধ্যে একটি অর্থ সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রিয়া চক্রবর্তীর আয় ছিল মাত্র ১৪ লাখ টাকা। তাঁর আয়কর রিটার্ন ফাইলে এটা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু এত কম টাকা আয় করা সত্ত্বেও সম্প্রতি নাকি রিয়া মুম্বাইয়ে দুটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি কেনেন। একটি সম্পত্তি রিয়ার নিজের নামে, অন্যটি রিয়ার পরিবারের এক সদস্যের নামে। সেই টাকা কোথা থেকে এল? এ তথ্য রিয়ার কাছে জানতে চাইতে পারে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
এদিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু তদন্তের ভার হাতে নিয়েছে সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলিউডের এই তরুণ নায়ক। প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে এই মৃত্যুরহস্যের কোনো কিনারা করতে পারেনি মুম্বাই পুলিশ। তাই বারবার সব জায়গা থেকে তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়ার দাবি ওঠে। বিহার সরকারের আবেদন অনুযায়ী সুশান্তর আত্মহত্যার ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া সুশান্ত পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট। তাঁর বড় চার বোন আছেন। ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সুশান্তর। একই বছর মুক্তি পায় ‘শুদ্ধ দেশি রোমান্স’। ২০১৬ সালে ‘ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ মুক্তির পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সুশান্তকে। তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’।
Posted ৪:২২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৮ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy