কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৭ জানুয়ারি) :: বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি খরচের শহর এখন পর্যটন শহর কক্সবাজার।২৭ জানুয়ারী সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার।রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ গেজেট প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, একটি নির্দিষ্ট শহরে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য শহরটি কতটা ব্যয়বহুল, তার ভিত্তিতে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে বাড়ি ভাড়া, যানবাহন ভাড়া, খাদ্য ও পোশাক সামগ্রীসহ অন্যান্য ভোগ্য পণ্যের দামের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকাসহ দেশের ব্যয়বহুল এলাকাগুলোতে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া পেয়ে থাকেন। এখন কক্সবাজারের চাকরিজীবীরাও তা পাবেন। বর্তমানে এই হার ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া টিএ-ডিএসহ আরও কিছু সুবিধা বাড়বে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতেই মূলত এ সিদ্ধান্ত।ওই সম্মেলনে কক্সবাজারের ডিসি বলেছিলেন, বাস্তুচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আসার পর সেখানে দেশি-বিদেশি অসংখ্য বেসরকারি সংস্থা কাজ শুরু করে। এর ফলে কক্সবাজারে থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়ে গেছে। ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর আর্থিক চাপ পড়ছে। এ বিবেচনায় কপবাজার শহরকে ব্যয়বহুল শহর ঘোষণার প্রস্তাব করেন তিনি। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন। এখন অর্থ বিভাগ আর্থিক বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে।
কক্সবাজারের ডিসি কামাল হোসেন বলেন, এ এলাকায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ফলে এখানে বাড়ি ভাড়া, নিত্যপণ্যের দামসহ অনেক কিছুর দাম বেড়ে গেছে। বাড়ি ভাড়া অনেক ক্ষেত্রে ঢাকার চেয়েও বেশি।
এদিকে কক্সবাজারকে ব্যয়বহুল শহর হিসাবে সরকারী গেজেট প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।কেউ কেউ বলছেন এ গেজেট প্রকাশের সুবিধা পারে সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীজীবিরা।এর ফলে তাদের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অনেক বেড়ে যাবে। আবার অনেকে বলেছেন এ গেজেট প্রকাশে স্থানীয়দের সুযোগ সুবিধা পাওয়া তো দুরের কথা এর মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে দাম বেড়ে যাবে।এর ফলে প্রাত্যাহিক জীবনে স্থানীয়দের অতিরিক্ত ব্যায়ের ভার বহন করতে হবে।
অপরদিকে অনেকে বলেছেন যেহেতু কক্সবাজার শহরকে ব্যয়বহুল হিসাবে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে তাই সরকারের উচিত স্থানীয়দের জন্য সেভাবে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো। অন্যথায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্তিরতা দেখা দিতে পারে জেলা জুড়ে।
কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন-“এজাতীয় স্থানীয় বিষয়ক সরকারি গেজেট করতে অনেক ত্যাগেরও দরকার পড়ে। কিন্তু এটা হয়েছে একদম নিরবে। তাই মনে হচ্ছে নেপথ্যে বড় ধরনের শক্তি কাজ করেছে। এ গেজেট ব্যাপক প্রচারের কারনে অভাগা পর্যটন শহরটির সবকিছুতে কিছুটা নৈরাজ্যেরও সৃস্টি হতে পারে। তবে আমরা পোড়া কপাইল্যাদের দূর্ভোগ বেড়েই গেল।“
তিনি আরও লিখেন-“এতদিন ব্যয়বহুল অর্থাৎ ‘ কষ্টের বাজার ‘ ছিল অঘোষিত। এখন গেজেটেড কষ্টের বাজার। সুতরাং টমটম ভাড়া ৫ টাকায় এখন ১০ টাকা। আবার টমটমের মালিকও ৭০০ টাকার ভাড়া এখন বাড়িয়ে করবে এক হাজার টাকা। এভাবে সবকিছুতেই কেবল বাড়বে। এর বিরুপ প্রভাব পড়বে সাধারণের উপর।“
ফেসবুকে কক্সবাজারের বিশিষ্ঠ কবি মানিক বৈরাগী লেখেন- “কক্সবাজার ব্যয়বহুল জেলা আমলা তন্ত্রের দুরভিসন্ধি রাজনীতিকের অদুরদর্শিতার কুফল সাধারণ মানুষকে ভোগতে হবে।“ তিনি আরও লিখেন “লুটপাটের শহরে আবার ব্যয়বহুল ঘোষণা নাগরিকের কথা কেউ ভাবেনা। কলিম আবারও লড়াইয়ে নামি“
Posted ২:৫০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy