কক্সবাংলা ডটকম(২৯ জানুয়ারি) :: বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। গত এক বছরে পাকিস্তান একের পর এক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে বাংলাদেশ সন্তুষ্ট হয় এবং বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের যে তিক্ত কূটনৈতিক সম্পর্ক সেটা স্বাভাবিক হয়। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র বলছে যে, চীনের পরামর্শ এবং চাপেই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পাকিস্তান। আর এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কূটনৈতিক পাড়ায় গুঞ্জন, মার্চে বড় ধরনের চমক আসছে।
আগামী মার্চ মাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালোরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্মম অত্যাচার এবং বর্বরোচিত হামলা চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরণের বর্বরতা এবং নারকীয় কাণ্ড। অপারেশন সার্চলাইট নামে এই সামরিক অভিযানে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা করা হয় এবং অকাতরে গণহত্যা করা হয় নিরীহ জনগণকে, ধর্ষিত হন লাখো মা-বোন, জ্বালিয়ে দেয়া হয় শত সহস্র ঘরবাড়ি। আজও পৃথিবীর ইতিহাসে এই একাত্তরের গণহত্যা একটি বড় বর্বরোচিত অধ্যায় হিসেবে পরিচিত।
১৯৭১ সালে একটি যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়ে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বীর বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই আক্রমণের কাছে নতি স্বীকার করেনি। বরং জাতির পিতার আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতা সারাবিশ্বে সমালোচিত হলেও দীর্ঘ ৫০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত পাকিস্তান এই গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, একাত্তরের বর্বরোচিত গণহত্যার ৫০ বছর উপলক্ষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান একটি ক্ষমা প্রকাশের বাণী দিতে পারেন। এই বাণী প্রস্তুতির প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে অবশেষে পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবে।
তবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল বলছে শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশই যথেষ্ট নয়। পাকিস্তান যে বর্বরতার ১৯৭১ সালে করেছে, তার জন্য তাদেরকে ক্ষমাও চাইতে হবে। ক্ষমা পাকিস্তান চাইবে কিনা সেটা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে কূটনৈতিক মহল বলছে যে, আসছে ২৫শে মার্চ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশের একটি নাটকীয় ঘোষণা আসতে পারে।
উল্লেখ্য যে, গত একবছরে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য প্রানন্ত চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পাকিস্তান বাংলাদেশে ভিসা সহজীকরণ করেছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুইবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিআলাপ করেছেন, পাকিস্তানের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। এই সমস্ত ধারাবাহিকতায় এই আবহ তৈরি করা হচ্ছে মূলত দুঃখ প্রকাশের আয়োজন হিসেবে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সমস্ত মানুষই মনে করেন পাকিস্তান যদি শুধু দুঃখ প্রকাশ করে তাহলেই হবে না, পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের যে ন্যায্য পাওনা রয়েছে সেই পাওনা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকার করতে হবে। তবে চীনের চাপেই হোক আর যে কারণেই হোক, ইমরান খান যে বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক নমনীয় এবং বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক করতে আগ্রহী সেটা গত এক বছরেই প্রমাণিত হয়েছে।
Posted ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy