কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জুলাই) :: বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে এবং ভয়ভীতি ছাড়া কাজ করতে পারছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল সেটা জানতে চেয়েছে।
সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পৃথক আলোচনায় সোমবার(১৭ জুলাই) ইইউর ছয় সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী দলটি গণমাধ্যমকর্মীরা কাজের ক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ বোধ করেন, সেই প্রশ্নও করেছেন।
ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় সাংবাদিকেরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের সময় অবাধে কাজ করার স্বার্থে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন সাংবাদিকেরা।
ইইউ প্রতিনিধিদল সোমবার দিনের শুরুতে সাংবাদিকদের দুটি প্রতিনিধিদল ছাড়াও গণমাধ্যম নিয়ে গবেষণায় যুক্ত পাঁচজন বিশেষজ্ঞ এবং রাতে ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসায় ইইউ সদস্যদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে।
বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন ডেইলি অবজারভার–এর সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কি না, তা ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাঁরা সরাসরি প্রশ্ন তোলেননি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে আইনটির প্রসঙ্গ এসেছে।
এ বিষয়ে তিনি আইনটি নিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব, সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বিভিন্ন সুপারিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে আইনটির প্রয়োজনীয় সংস্কারে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসের কথাও তিনি জানিয়েছেন।
নির্বাচনের পরিবেশ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে হলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে ভোটাররা নির্বাচনে ভোট দিতে উৎসাহ বোধ করবেন। এ ছাড়া সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এড়াতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও এসেছে আলোচনায়।
জানা গেছে, ঢাকায় ইইউ দূতাবাসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সম্পাদকেরা নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের অবাধে এবং স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছাড়া অন্য কোনো চাপ আছে কি না, তা জানতে চেয়েছে ইইউ প্রতিনিধিদলটি।
এ বিষয়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ‘তাদের বলেছি, এত হাজার মাইল দূরে এসে আমাদের নির্বাচন সুন্দর করার জন্য চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে এটা বেদনাদায়ক যে আমাদের তো ব্রাসেলসের নির্বাচন ঠিক করার জন্য যেতে হয় না। বেদনাদায়ক যে বাইরের থেকে এখনো আপনাদের আসতে হয়। এ লড়াইটা আমাদের নিজেদের, এটা আমাদের একসময় সুরাহা করতে হবে। এ দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাবমূর্তি ভালো। তাই তাদের অনুরোধ করেছি, এমন কোনো সুপারিশ তাঁরা করবেন না, যাতে বাংলাদেশে তাদের ভাবমূর্তি অসুন্দর হয়ে যায়। বাংলাদেশের জনস্বার্থের ওপর নির্ভর করে তাঁরা যেন ব্রাসেলসে প্রতিবেদন জমা দেন।’
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে আলোচনার সূত্র ধরে নুরুল কবির বলেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনই একমাত্র সমস্যা নয়। বাংলাদেশে আইনবহির্ভূত অনেক তৎপরতা ঘটে, যা নানাভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। এ বিষয়গুলো আলোচনায় উল্লেখ করেছি।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল ইইউ প্রাক্–নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। এ বিষয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল২৪–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোর্শেদ হাসিব প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে গণমাধ্যম–সংক্রান্ত আইন শিথিল করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অবাধে কাজ করার প্রেক্ষাপট থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও তাঁরা জানতে চেয়েছেন।
সরকারের আমন্ত্রণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইইউর প্রাক্-নির্বাচন অনুসন্ধানী দলটি ৮ জুলাই ঢাকায় আসে। ১৬ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। তারা ব্রাসেলসে ইইউ সদর দপ্তরে যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Posted ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Chy