কক্সবাংলা ডটকম(২৭ নভেম্বর) :: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সম্পর্কে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে নানা কারণে মৌলবাদের উত্থান ঘটছে। মৌলবাদী সংগঠন গুলো প্রকাশ্যে এবং গোপনে নতুন করে তৎপরতা চালাচ্ছে। আর ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করার কারণে এই মৌলবাদীদের হাতে অবৈধ অস্ত্র এবং টাকা-পয়সাও আসছে। যার ফলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের রোল মডেল এই দেশটি নতুন করে সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মৌলবাদীদের উত্থানের শঙ্কা করছে। তারা মনে করছে যে বাংলাদেশে মৌলবাদী গোষ্ঠী গুলো নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করছে যে, বাংলাদেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদী এবং জঙ্গি সংগঠনগুলোর নিঃশেষিত হয়ে যায়নি। বরং বিক্ষিপ্ত কোণঠাসা অবস্থায় থাকা এই সংগঠনগুলো আবার নতুন করে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি সংগঠনগুলো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির কারণে এদের পরিকল্পনাগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারপরও সারাদেশে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
এই জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল ধারার রাজনৈতিক কয়েকটি সংগঠন ভূমিকা রাখছে বলেও গোয়েন্দারা মনে পড়ছে। গোয়েন্দাদের এই মতামতের সাথে একমত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলো এখন মূল ধারার রাজনীতির আশ্রয়-প্রশ্রয় পাচ্ছে।
মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তাদেরকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। আবার জঙ্গী সংগঠনের বাইরেও প্রকাশ্যে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশ ক্রমশ দৃশ্যমান মনে হচ্ছে এবং তাদের আস্ফালন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, ফ্রান্সের ঘটনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বড় ধরনের শোডাউন করেছে। বাংলাদেশে আগে মৌলবাদি ধর্মান্ধগুলো বলতে জামাত ইসলামকে মনে করা হতো। কিন্তু এখন জামাত ইসলামের বাইরেও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন এবং হেফাজতে ইসলামের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর দাপট দেখানো হচ্ছে। তাদের কর্মী সংগ্রহের হার অনেক বেশি।
ইউরোপিয় ইউনিয়ন বলছে যে অতীতে এই জঙ্গি সংগঠনগুলো, ইসলাম ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। কিন্তু এখন তারা মত ও পথের ব্যবধান কমিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে আসতে চাইছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এই মৌলবাদের উত্থান এর একটা বড় কারণ মনে করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের অবস্থান। বাংলাদেশের যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছে, তাদের অধিকাংশই মৌলবাদির চিন্তাচেতনা এবং ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী। সরকার চেষ্টা করেও তাদেরকে সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারছে না। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে মাদক এবং রাষ্ট্রের একটি বড় রুট তৈরি করেছে বলেও মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এদের মাধ্যমেই জঙ্গী সংগঠনগুলোর কাছে অস্ত্র আসছে। আর মাদকের অর্থ বিক্রি করে তারা সংগঠন গোছানোর চেষ্টায় সক্ষম হচ্ছে।
তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে যে, জঙ্গীবাদি সংগঠন অতীতেও বাংলাদেশে নানা রকম চেষ্টা করেছিল। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জানে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এখন সব সক্ষমতা আছে এই জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করা এবং দমন করার। তবে প্রকাশ্যে যে ইসলাম পছন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্পর্শকতার ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির করছেন, সেটি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বলে মনে করছে পশ্চিমা দেশগুলো।
নতুন করে জোটবদ্ধ হচ্ছে মৌলবাদি ও স্বাধীনতা বিরোধীরা
বাংলাদেশে নতুন করে ধর্মান্ধ মৌলবাদি এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা জোটবদ্ধ হচ্ছে। তারা বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে, আস্ফালন দিচ্ছে, কর্মসুচী দিচ্ছে, সংগঠিত হচ্ছে। সরকারের জন্য নতুন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এই স্বাধীনতা বিরাধি অপশক্তি। বিশেষ করে হেফাজতের সম্মেলনের পর স্বাধীনতা বিরোধি শক্তি নতুন করে বিভিন্ন কর্মসুচি নিয়ে এগাতে চাচ্ছে।
বাংলাদেশে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। টানা তিন মেয়াদে এই সরকার দেশ পরিচবালনার দায়িত্ব পালন করছে। এই সময় যুদ্ধাপরাধিদের বিচারসহ নানা রকম গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং একটি অসম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলাদেশ নির্মাণের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আস্তে আস্তে স্বাধীনতা বিরোধি শক্তিগুলো জঙ্গীবাদী গোষ্ঠির সঙ্গে আতাত করে নতুন করে জানান দেয়ার চেষ্টা করছে নিজেদেরকে। যেসব ইস্যু নিয়ে তারা আবার নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে:-
১। ভাস্কর্য: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বিরোধীতা করছে স্বাধীনতা বিরোধি, ধর্মান্ধ মৌলবাদি অপশক্তি। তারা এই ভাস্কর্যকে মূর্তি নামে আক্ষায়িত করে এটি অপসারণের দাবী জানাচ্ছে। এ নিয়ে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছে এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু কর্মসুচীও ঘোষণা করছে। সাম্প্রতিক সময় এই ইস্যুতে তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া করছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে হেফাজতের নতুন মহাসচিব কাশেমির একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। এই বিষয়টিকে তিনি উস্কে দিচ্ছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র নিশ্চিত করেছে।
২। ব্লাসফেমী আইন: দীর্ঘদিন ধরে ধর্মান্ধ মৌলবাদি শক্তিগুলো বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াহ আইন জারি করার দাবী করে আসছিল। এই শরিয়াহ আইনের মধ্যে অন্যতম ছিল ব্লাসফেমী আইন। অর্থাৎ যারা ধর্মের বিরুদ্ধে বিরোধিতা করবে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার যে বিধান সেটি তারা কার্যকর করতে চাচ্ছে। অনেগুলো সম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কর্মসুচী পালনকারি ইসলামি আন্দোলন ইসলামি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের কথাও বলছে। আর এটি তাদের ঐক্যের একটি অভিন্ন প্লাট ফর্ম হিসেবে মনে করছে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো।
৩। ফ্রান্স ইস্যু: যদিও ফ্রান্স ইস্যু ইরিমধ্য ইতি হয়েছে। তারপরেও এটিকে নতুন করে চাঙ্গা করতে চাইছে কিছু কিছু ইসলামি সংগঠনগুলো। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবী নিয়ে মৃদু হলেও কিছু কিছু কর্মসুচী পালন করছে।
৪। ইসরায়েল ইস্যু: সামনে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে যেটি ইসরায়েল ইস্যু। ইতিমধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে, ইসরায়েলকে সমর্থন দিতে চাপ রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক মেরুকরণ গঠতে যাচ্ছে। এর ফলে ইসরায়েল ইস্যুটি বাংলাদেশের ধর্মান্ধ মৌলবাদিদের জন্য নতুন হট কেক বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
৫। পাঠ্যপুস্তক: হেফাজত গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্ককের ওপর হস্তক্ষেপ করছে। পাঠ্যপুস্তকে যে অসম্প্রদায়িক চেতনা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ইস্যুগুলো আছে, সেগুলোকে বাদ দেয়ার একটি পরিকল্পিত নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছে হেফাজত। এই সব বিষয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারও তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। এখন পাঠ্যপুস্তকগুলোকে আরো মৌলবাদী কায়দায় ঢেলে সাজানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করছে এই মৌলবাদি গোষ্ঠি।
আর এই সমস্ত ইস্যু নিয়েই আবার নতুন করে আন্দোলন এবং সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে যে, অতিতে আল্লামা শফীর নেতেৃত্বে হেফাজতের কোন রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। এখন নতুন নেতেৃত্বের একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং উদ্যেশ্য রয়েছে। তারা সরকারকে ইসলামের নামে চাপে ফেলার কৌশল নিয়ে এগোতে চায়। আর এজন্যই তারা ইস্যুগুলোকে নিয়ে মাঠে নামছে বলে মনে করা হচ্ছে।
Posted ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy