কক্সবাংলা ডটকম(২২ জানুয়ারি) :: দীর্ঘ ভ্রমণ এড়াতে বিশেষ বিমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পাঠানো হয়েছে পাকিস্তানে। তাতে অবশ্য বিসিবির খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকার মতো। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাকিস্তানে পৌঁছেছে মাহমুদউল্লাহর দল। বাংলাদেশ দলের নিরাপদে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিসিবি সূত্র।
১৫ জন ক্রিকেটার বাদে কোচিং স্টাফ, সাপোর্ট স্টাফ মিলে ২৩ সদস্যের দল পাকিস্তানে গেছেন। সঙ্গে গেছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খান ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) দুই সদস্য ও একাধিক গণমাধ্যমকর্মী। বিমানে পাকিস্তান সফর সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কোনও যাত্রী ছিলেন না।
শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ম্যাচকে ঘিরে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে পাকিস্তান সরকার। ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছে পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়াও সিরিজ চলাকালীন দায়িত্বে থাকবেন ১৭ এসপি, ৪৮ ডিএসপি, ১৩৪ ইনসপেক্টর ও ৫৯২ জন আপার সাবঅর্ডিনেট।
পাকিস্তান সফর নিয়ে শুরু থেকেই ছিল উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। শেষ পর্যন্ত এ সফর হবে কিনা তা নিয়েও ছিল শঙ্কা। তবে সব শঙ্কা দূর করে গতকাল রাত ৮টায় পাকিস্তানের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সময় বাঁচাতে ভাড়া করা বিশেষ বিমানে করে লাহোরের উদ্দেশে রওনা দেয় বহর। আগামীকাল বেলা ৩টায় দুইদল নামবে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথমটি খেলতে। পরের দুই ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে লাহোরেই।
এর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল ২০০৮ সাল। এরপর শ্রীলংকা ক্রিকেট দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটি থেকে নির্বাসিত হয় ক্রিকেট। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের পাকিস্তান সফর দিয়ে অচলাবস্থা কাটে। গত বছর পাকিস্তান গিয়ে টি২০ ও টেস্ট খেলে আসে ২০০৯ সালে আক্রান্ত হওয়া শ্রীলংকা। এর আগে টি২০ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। এই দুই দলের সফরের পরই মূলত নিজ দেশে ক্রিকেট আয়োজন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পিসিবি।
বাংলাদেশের পাকিস্তান সফর নিয়ে চলমান আলোচনার মাঝেই পিসিবি সভাপতি এহসান মানি বলেছিলেন, পাকিস্তান এখন থেকে নিজেদের দেশেই ক্রিকেট খেলবে। তাদের আয়োজিত কোনো ম্যাচ আর নিরপেক্ষ স্টেডিয়ামে খেলা হবে না। বাংলাদেশও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। শুরু থেকেই বিসিবির চাওয়া ছিল তারা টি২০ খেলবে। টেস্ট খেলার ব্যাপারে পরে আলোচনা করে ঠিক করা যাবে। পিসিবি চাইছিল যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট খেলতে। সিদ্ধান্তহীনতার এই দরকষাকষি শেষ হয় দুবাইয়ে। যেখানে তিন দফায় পাকিস্তান সফরের বিষয়টিও নিশ্চিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে পাকিস্তানের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
পাশাপাশি এই সফরকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ১০ হাজার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্বরত থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তা দেয়ার লক্ষ্যে।
এদিকে নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে ক্রিকেটারদের মধ্যেও। সেই দুশ্চিন্তা থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তাকে ছাড়াই তাই পাকিস্তানে গেল বাংলাদেশ। এই দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সফরে যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, নিরাপত্তা নিয়ে না ভেবে, মাঠে মনোযোগ দিতে চান তিনি।
পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একটি টি২০ খেলেছে। ২০০৮ সালে খেলা সেই ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হারে ১০২ রানে। সেই ম্যাচে পাকিস্তান দলের নেতৃত্ব দেয়া শোয়েব মালিক এবারো আছেন স্কোয়াডে। আর ৫৩ বলে ৮৭ রান করে ম্যাচসেরা হওয়া মিসবাহ-উল-হক এখন দলটির প্রধান কোচ ও নির্বাচক। বাংলাদেশের হয়ে খেলা তারকাদের মাঝে আছেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ। এবারো বাংলাদেশ দলের অন্যতম ভরসা এ দুজন। তবে পাকিস্তানের মাটিতে নিজেদের ইতিহাস বদলাতে হলে সব দুশ্চিন্তা ভুলে সেরাটাই দিতে হবে ক্রিকেটারদের।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান গতকাল বিমানন্দরে বলেন, ‘সব ট্যুরই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ দল সবসময় ভালো খেলতে চায়। আমরাও চাই ওরা ভালো খেলুক। এ সফর নিয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে খেলোয়াড়রা কম সময় পেয়েছে। তার পরও প্রায় ৯৯ ভাগ খেলোয়াড় যাচ্ছে। অফিশিয়ালরা যাচ্ছে। পাকিস্তানের পরিবেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো। ওখানে আমরা প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। যদি দল হিসেবে খেলতে পারি, তবে পারফরম্যান্স ভালো হবে।’
ক্রিকেটার শফিউল ইসলাম বলেন, ‘কোনো টেনশন নেই। বোর্ড তো আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েই পাঠাচ্ছে। ভালো কিছু করে এবং নিয়ে যেন দেশে ফিরতে পারি—এটাই লক্ষ্য।’
পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তিন মাসে তিনবার পাকিস্তান সফর করবে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানে সরাসরি বিমান না থাকায় ভাড়া করা বিমানে যাতায়াত করবে বাংলাদেশ। একটি সুত্রে জানাযায়, সরাসরি একবার পাকিস্তান যেতে-আসতে বিসিবির খরচ হবে দেড় লাখ মার্কিন ডলার বা এক কোটি ২৭ লাখ টাকারও বেশি।
আকাশ পথে পাকিস্তানে যাওয়ার নেই কোনো সহজ উপায়। দোহা বা দুবাই হয়ে যেতে হয় পাকিস্তানে। যে কারণে দুই-তিন ঘণ্টার রাস্তা ঘুরে যেতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। কিন্তু পাকিস্তান সফরের ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে দোহা আর দুবাই না ঘুরে বুধবার সরাসরি পাকিস্তান গেল বাংলাদেশ।
বুধবার রাত আটটায় বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভাড়া করা চার্টার্ড ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সরাসরি লাহোর যায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। রাত সাড়ে দশটায় নিরাপদে লাহোরে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। ওই বিমানে অন্য কোনো যাত্রী না থাকায় ১৬২ আসনের বিমানের বেশিরভাগ আসনই ফাঁকা পড়ে ছিল। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে আগামী ২৮ জানুয়ারি দেশে ফেরত আসবে বাংলাদেশ দল। এই বিমানটি তখন পাকিস্তান গিয়ে ক্রিকেটারদের নিয়ে আসবে।
পাকিস্তান সফরে প্রথম দফায় ২৪, ২৫ ও ২৭ জানুয়ারি তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে রাওয়ালপিন্ডিতে শুরু হবে দুই দলের প্রথম টেস্ট। এপ্রিল মাসে সফরে গিয়ে বাংলাদেশ খেলবে একটি ওয়ানডে আর সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি।
Posted ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy