কক্সবাংলা ডটকম(৭ অক্টোবর) :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ যা করে দেখিয়েছে; অনেক উন্নত দেশও তা করে দেখানোর সাহস করতে পারে নি। এতে করে আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আগের যেকোনো সময়ের থেকে বেড়েছে।
টানা ২০ দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে গুণীজনদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পরে আওয়ামী লীগের গণসংবর্ধনা মঞ্চে দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: রোহিঙ্গা সমস্যার শুরুটা ১৯৭৮ সাল থেকেই। এবার প্রথম যখন তারা আসতে শুরু করলো-আমরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ ছিলাম, কী করবো। লাখ লাখ মানুষ চলে আসছে! পরে আমি খোঁজ নিলাম। জানলাম-সেখানে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করলো রেহানা। সে বললো, তুমি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারছো; আর ৫-৭ লাখ মানুষকে খাওয়াতে পারবে না?
তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছুটে গেলাম নির্যাতনের শিকার হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মানুষ গুলোর মাঝে। আমরা তখনও জানতাম না কী করবো-কী খাওয়াবো! এখন অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এগিয়ে এসেছে আমরা তাদের ধন্যবাদ জানায়। বিপন্ন মানুষ গুলোকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা এক বেলা খাবো; আরেক বেলা আমাদের খাবার তাদের দেবো। আজ বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিতো; পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।
মিয়ানমারকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো যেনো কখন যুদ্ধ বেধে যায়। আসলে তারা চাইছিলো; উত্তেজনা সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক বিশ্বের চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতে। তাদের চেষ্টা সফল হয়নি। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী,বর্ডারগার্ড, নৌবাহিনীসহ সকল সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করলাম। আমাদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরী ছিলো। আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম। আপনাদের সমর্থন আগেই ছিলো; এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বের সমর্থনও আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের থাকার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন: রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে রাখা হবে। প্রথমে নাম নিয়ে বিভ্রান্তি ছিলো। নোয়াখালীরা বলে ঠেঙার চর-চট্টগ্রামের মানুষ বলে ভাসান চর। রোহিঙ্গারা যেহেতু ভাসমান মানুষ ওই জায়গার নাম ভাসানচরই থাক। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখানে আসছে। স্বদেশে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত আমরা তাদের সাহায্য করে যাবো।
পদ্মাসেতুর কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর কথায়। তিনি বলেন: একটা সময় ছিলো অনেকেই বিশ্বাস করতে পারতো না বাংলাদেশ পদ্মাসেতু করতে পারবে। এমন খরস্রোতা নদীতে বিশ্বের খুব কম জায়গায়ই সেতু আছে। সেটাও সর্বোচ্চ তিনটির মতো। তার ওপর বিশ্বব্যাংকও চলে গিয়েছিলো। আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করতে চাইলাম। আমরা ক্যাবিনেটেরও অনেকে বলেছিলো; এটি সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা তা করে দেখিয়েছি। পিলারের উপর স্প্যান বসানোয় সেতুর দৃশ্যমান অগ্রগতি এখন সকলের সামনে দৃশ্যমান।
পরপর দু’বার ক্ষমতায় থাকার কারণেই এটা করা সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন: পরপর দু’বার ক্ষমতায় থাকার কারণে উন্নয়ন গুলো এখন দৃশ্যমান। স্বাধীনতার পর থেকে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সকলেই লুণ্ঠন এবং নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যস্ত ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ সব সময় মানুষের রাজনীতি করে। দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। পদ্মা সেতু সে সাক্ষর রাখে।
পদ্মাসেতুতে দূর্নীতির অভিযোগ একটা সময় তাকেও ভুগিয়েছে জানিয়ে বলেন: এটা সময় ছিলো কোথাও যেতে পারতাম না। আমার আর রেহেনার দিকে এমন ভাবে তাকানো হতো যেনো; আমরা কোনো বড় অপরাধ করেছি। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করেছিলাম দূর্নীতি করে থাকলে প্রমাণ করুন। তা তারা কখনও করতে পারেনি। বিশ্ব ব্যংকে একজন পর্যবেক্ষক ছিলেন: তিনি এক একটা অফিসে যেতেন আর আমাকে এবং রেহেনাকে ইঙ্গিত করে বলে বেড়াতেন বড় দূর্নীতিবাজ! এখন শোনা যাচ্ছে চল্লিশ হাজার পৃষ্ঠার দূর্নীতি আমল নামা বের হচ্ছে। ওই সময়টা ছিলো আন্তর্জাতিক ভাবেও আমাদের জন্য দুঃসময়।
এখন পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানো হয়েছে। যেদিন উদ্বোধন করা হলো; ওবায়দুল কাদের আমাকে ম্যাসেজ পাঠালো। তার সচিব ফোন করলো। তখন নিউইয়র্কে রাত ৩টা। আমি তাদের বললাম আমাকে ছবি পাঠাও। তারা আমাকে ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ পাঠানো। আমরা যখন দু’বোন এগুলো দেখছিলাম আর বারবার চোখ মুছছিলাম।
৯টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট হয়ে ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
তাকে বরণ করে নিতে বিমানবন্দরে এসময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সমাজের বিশিষ্ট ও গুণীজনেরা।
Posted ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৮ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy