কক্সবাংলা ডটকম(২৬ সেপ্টেম্বর) :: পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী ৩ অক্টোবর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ষষ্ঠ নিরাপত্তা সংলাপ। প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ঝুঁকি মোকাবিলার ইস্যু থাকলেও এবারের সংলাপে সেটি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি নয় ঢাকা।
সম্প্রতি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু ইস্যুতে নিজেকে আলাদা করেছে। অন্য দেশে সহযোগিতা না করার বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট।
ফলে বাংলাদেশ নিজ থেকে জলবায়ু ইস্যুতে এগিয়ে যাবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র যদি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চায় সে ক্ষেত্রে আপত্তি করবে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে নিরাপত্তা সংলাপে ওয়াশিংটন এখনো সামরিক চুক্তির বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক মিলিটারিবিষয়ক প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
সূত্র জানায়, মূলত চারটি ধাপে অংশীদারিত্ব সংলাপটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে কৌলশগত অগ্রাধিকার ও আঞ্চলিক ইস্যু, দ্বিতীয় ধাপে দ্বিপাক্ষিক সশস্ত্র বাহিনী ও নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা, তৃতীয় বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং সর্বশেষ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলা ও শান্তিরক্ষা। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে।
গত বছরের ২ অক্টোবর ঢাকায় ৫ম নিরাপত্তা সংলাপে দুই দেশের সামরিক চুক্তি, বাংলাদেশে হলি আর্টিজান বেকারি হত্যাকা-, শোলাকিয়ায় হামলা, বিদেশি হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন ও হত্যা, ব্লগার হত্যা, ভিন্ন মতাবলম্বীর ওপর আক্রমণ, মার্কিন মিশনের কর্মকর্তা ও সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা ও আইএসআইএস সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের ভূমিকাকে আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।
নিরাপত্তা সংলাপে দুই দেশের সম্পর্কের আগ্রাধিকার বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, নাগরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, দ্বিপক্ষীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়াদি, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইসু, শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকি মোকাবিলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়ে আসছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিরাপত্তা সংলাপ মূলত দুই দেশের বেসামরিক প্রশাসনের সংলাপ। এখানে সব ধরনের নিরাপত্তাজনিত ইস্যুগুলোতে আলোচনা হয়ে থাকে। ঠিক একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকি মোকাবিলা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হয়ে আসছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যৌথ দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘ডিজাস্টার রেসপনস এক্সসারসাইজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্চ (ডিআরইই)’ অনুষ্ঠানিক প্লাটফর্ম রয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশের সহযোগিতায় উপকূলীয় অঞ্চলে ৬০০ মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার তৈরি, বন সংরক্ষণ, বন নির্ভরশীল মানুষদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণসহ নানা ধরনের প্রকল্প মার্কিন অর্থায়নে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে।
মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্র্যন্ত বাংলাদেশে পরিবেশের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার খরচ করেছে। ২০১২ সালে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার বাংলাদেশের পরিবেশের পেছনে খরচ করার পরিকল্পনা থাকলেও, ওই বছর পরিবেশ খাতে কোনো অর্থ খরচ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সহায়তার যে অর্থ বরাদ্দের পরিকল্পনা করে, তার ৮ থেকে ৯ শতাংশ পরিবেশের পেছনে খরচের পরিকল্পনা থাকে। এর মধ্যে কখনো পরিকল্পনার থেকে বেশি খরচ করে। আবার কখনো পরিকল্পনার মাত্র অর্ধেক ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্র।
Posted ১:৫০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy