কক্সবাংলা ডটকম :: আগুনটা সামান্য জল ছিটিয়ে নেভানো হয়েছিল। নেভেনি। তুষের মধ্যে তা নিভু নিভু থেকে গিয়েছিল। আবার জ্বলে উঠছে। পাগলা হাওয়া চারদিক এলেমেলো করে দিয়ে মিলিয়ে গিয়েছিল। আবার তা ফিরে আসছে। গত গ্রীষ্মে লিওনেল মেসির আসন্ন বিদায় আশঙ্কা যেভাবে বার্সেলোনাকে তুমুল অস্থিরতায় ফেলেছিল, সেটি আবার হয়তো ফিরছে এই জানুয়ারিতে।
ইএসপিএন১২-এর খবর, নেইমার-এমবাপ্পে-ডি মারিয়াদের ক্লাব আগামী জানুয়ারিতেই মেসির সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। প্যারিসের ক্লাবই হবে বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন তারকার আগামী ঠিকানা, দাবি এই সংবাদমাধ্যমের। মেসির এজেন্ট তার বাবা হোর্হে মেসির সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে ক্লাবটি এরইমধ্যে কথা বলেছে।
আগামী ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি আছে মেসির। ফিফার নিয়মানুযায়ী চুক্তি শেষ হওয়ার ছয়মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্লাবের সঙ্গে কথা বলা যায়। তাই আগামী জানুয়ারিতেই পিএসজি মেসিকে নেওয়ার ব্যাপারে কথা বলবে। পিএসজি থেকে বলা হয়েছে, মেসিকে নিতে পারলে জোড়া উদ্দেশ্য সফল হবে তাদের। এক. তারা ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে পাচ্ছে। দুই. মেসিকে নিলে নেইমারও তাদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করবেন এবং দুই বন্ধু এক হয়ে দলটিকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবেন।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অনেক লম্বা সময়, এর মধ্যে ঘটে যেতে পারে অনেক কিছু। পিএসজি তাই একেবারেই সময় নষ্ট করতে চায় না।
গত ২৭ অক্টোবর বার্সেলোনা সভাপতি জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ তার বোর্ডসহ পদত্যাগ করেন। তখন ভাবা হয়েছিল সব অমঙ্গলের বাতাস উড়ে চলে গেল। মেসি যেহেতু থেকে গেছেন, বার্সেলোনা ছাড়বেন না, খেলা ছাড়ার আগ পর্যন্ত তার অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ক্লাবেই কাটবে বাকি দিনগুলো। বার্সেলোনার নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান বলেছিলেন, মেসির সঙ্গে তার কোনও ঝামেলা নেই, মেসিকে কেন্দ্র করেই সাজানো সব পরিকল্পনা। তখন মনে হয়েছিল, এই তো সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। মেসি বার্সেলোনারই, বার্সেলোনাও মেসির।
দুদিন আগেই সাবেক বার্সেলোনা কিংবদন্তি রিস্তো স্তয়চকভ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, মেসিকে তিনি বার্সেলোনাতেই ক্যারিয়ার শেষ করতে দেখছেন। আবার গত সেপ্টেম্বরে বার্সেলোনার ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা লুইস সুয়ারেজ আতলেতিকো মাদ্রিদে নাম লেখানোর কদিন পরেই বলে দেন, বার্তোমেউ বিদায় নিলে মেসির বার্সেলোনা ছেড়ে যাওয়ার কারণ দেখেন না। কিন্তু ছয়বারের ব্যালন ডি ’অর জয়ী আর্জেন্টাইন মহাতারকার বার্সেলোনা ছাড়ার গুঞ্জন তো আবার ছড়ালো। সিনিয়র মেসির পিএসজির সঙ্গে কথা বলা প্রমাণ করে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বার্সেলোনাতে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন মেসি।
গত ১৫ আগস্ট চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে বার্সেলোনার ৮-২ বিপর্যয়ের পর মেসি আর থাকতে চাননি। বার্সেলোনা বোর্ডের কাছে ব্যুরোফ্যাক্স পাঠিয়ে ক্লাব ছাড়ার অনুমতি চান। মেসির দাবি ছিল, করোনায় মৌসুম যেহেতু লম্বা হয়েছে, সেজন্য ১০ জুনের মধ্যে ক্লাব ছাড়ার অনুমতি চাওয়ার ভিত্তি নেই। তিনি আইনের মধ্যে থেকেই ক্লাব ছেড়ে যেতে চান।
বার্তোমেউ তাকে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু বার্তোমেউ সব অস্বীকার করে বলেন, রিলিজ ক্লজের ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েই কেবল মেসি ক্লাব ছাড়তে পারেন। না হলে নয়। কারণ ১০ জুনের মধ্যে মেসি যেহেতু ক্লাবকে কিছু বলেননি, তিনি আরও এক মৌসুমের জন্য বার্সেলোনার চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। বার্তোমেউ আদালতের রাস্তা দেখান মেসিকে, কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী তারকা সে পথ মাড়াননি। কারণ যে ক্লাব তাকে সবকিছু দিয়েছে সেই ক্লাবকে আদালতের কাঠগড়ায় নিতে মন সায় দেয়নি। এই ক্লাবকে, এই ক্লাবের সমর্থকদের তিনি ভালোবাসেন। কাতালানদের কাছে খলনায়ক সাজতে চাননি।
গত গ্রীষ্মে ম্যানচেস্টার সিটি মেসিকে নেওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল। তার সাবেক বার্সা গুরু পেপ গার্দিওলার কাছে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল প্রবল। ইংলিশ ক্লাবটি মেসিকে পাওয়ার আশা এখনও ছাড়েনি, জানুয়ারিতে প্রস্তাব দেবে বলে জল্পনা। এরইমধ্যে দৃশ্যপটে এসে পড়লো প্যারিস সেন্ত জার্মেই। আবার বার্সেলোনা সমর্থকদের দুশ্চিন্তার দিন এসে গেল হঠাৎ করেই।
Posted ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta