বিশ্বকাপেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তিউনিসিয়ার কাছে লজ্জার হার ফ্রান্সের : নক-আউটে অস্ট্রেলিয়া
বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২
100 ভিউ
কক্সবাংলা ডটকম(৩০ নভেম্বর) :: দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল হাতেনাতে পেলেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ দিদিয়ের দেঁসচ্যাম্পস। রিজার্ভ দলকে নিয়ে টিউনিসিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশ সাজিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু তাঁর ছাত্ররা কোচের মান রাখতে পারলেন না।
অলিভার জিরু, গ্রিজম্যান, এমব্যাপে, হুগো লরিস সহ প্রথম দলের মোট ৯ জন ফুটবলারকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন ফরাসি কোচ দেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতিমধ্যেই নক-আউটের টিকিট নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। পরের রাউন্ডে জায়গা নিশ্চিত হলেও জয়ের হ্যাটট্রিকেই চোখ ছিল ফরাসি-ব্রিগেডের। অন্যদিকে, চলতি আসরে এখনও জয়ের খোঁজে ছিল তিউনিশিয়া।
ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ড্র এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গ্রুপের তলানিতে ছিল তারা। নক-আউটের আশা জাগাতে হলে ফ্রান্সকে হারাতেই হত তিউনিশিয়াকে। তারপর তাকিয়ে থাকতে হত, ডেনমার্ক-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের ফলের দিকে। বুধবারের ম্যাচেও পরিষ্কার ফেভারিট ছিল ফ্রান্স। শক্তির বিচারে তাদের থেকে যোজন দূরত্ব পিছনে তিউনিশিয়া।
কিন্তু বুধবার রাতে টিউনিসিয়া ১-০ গোলে পরাজিত করল বিশ্বজয়ী ফ্রান্সকে। টিউনিসিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ওয়াহবি কাজরি।
প্রথম একাদশে দুই জন ফুটবলার ছাড়া পুরো দলটাই এই ম্যাচে বদলে দেন দেঁসচ্যাম্পস। মাঝমাঠে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে প্রথম একাদশের অউরেলিয়ান চুয়ামেনি এবং সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রাফায়েল ভারানে ছিলেন প্রথম একাদশের দুই ফুটবলার।
এ ছাড়া গোলরক্ষক থেকে মাঝমাঠ এবং সেন্ট্রাল লাইনে পরিবর্তন আনেন তিনি। সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না দেঁসচ্যাম্পসের। সামনে আরও কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই প্রতিটা ম্যাচ মাস্ট উইন।
এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ দলের শক্তি দেখে নেওয়ার জন্য এটাই সেরা সুযোগ ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু ইউরোপীয় ফুটবলের সেরা লিগগুলিতে খেলা ফুটবলাররা যে এ ভাবে তাঁকে আশাহত করবে তা হয়তো ভাবতে পারেননি বিশ্বকাপ জয়ী কোচ স্বয়ং।
প্রথমার্ধে খেলার ফলফল ছিল ০-০। এই ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন টিউনিসিয়ার ফরোয়ার্ড ওয়াহবি কাজরি। ৫৮ মিনিটে এইসা লাইদউনির বাড়ানো পাস থেকে দুই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ঘারের উপর নিয়ে গোলরক্ষকের বাম দিক থেকে গড়ানে শট বল জড়িয়ে দেন জালে।
এই ম্যাচে জিতলেও শেষ ষোলোয় যাওয়া সম্ভব হল না টিউনিসিয়ার। ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে শেষ করে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হল আফ্রিকার এই দেশটিকে। হারলেও গোল পার্থক্য ভাল থাকায় গ্রুপ ‘ডি’-এর শীর্ষে থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে নক-আউট পর্যায়ে পৌঁছে গেল ফ্রান্স।
হার এড়ানোর জন্য দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপে – অ্যান্টোয়াইন গ্রিজম্যানদের কোচ। তিন স্ট্রাইকার ওউসমানে ডিম্বেলে, কিলিয়ান এমবাপে এবং অ্যান্টোয়াইন গ্রিজম্যানকে তিনি নামান মাঠে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে। মাঠে নামান অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের অন্যতম নায়ক আদ্রিয়ান র্যাবিয়টকেও কিন্তু কাঙ্খিত গোলের সন্ধান তিনি পাননি।
দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে ৯০+৮ মিনিটে গ্রিজম্যান গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় নিয়ে এলেও সেই গোল বাতিল হয়ে যায় ভিএআর-এ। এই গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে নক আউটে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
গ্রুপ শীর্ষে থেকে শেষ করার ফলে গ্রুপ ‘সি’-এর রানার্স দলের বিরুদ্ধে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ফ্রান্স।
অবিশ্বাস্য হার ডেনমার্কের, শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়া
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২-এ গ্রুপ পর্বে আরও এক অঘটন। ধারে এবং ভারে, সব দিক থেকে এগিয়ে থাকা ডেনমার্ক দলকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেল অস্ট্রেলিয়া। ১-০ গোলে হারিয়ে নক-আউট পর্বের টিকিট নিশ্চিত করে নিল সকারুসরা। পূর্ণ শক্তির ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করে ম্যাথু লেকি।
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হত অস্ট্রেলিয়াকে। একই রকম ভাবে জয় প্রয়োজন ছিল ডেনমার্কেরও। ডেনমার্কের ক্ষেত্রে কাজটা আরও কঠিন ছিল কারণ তাদের এই ম্যাচে জয়ের পাশাপাশি অপেক্ষা করতে হল ফ্রান্স বনাম টিউনিসিয়া ম্যাচের ফলাফলের উপর। ওই ম্যাচ ড্র হলে এবং নিজেরে জিতলে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন – আন্দ্রেস ক্রিশ্চেনসেনরা পৌঁছে যেতেন শেষ ষোলোয়। অন্য দিকে, অস্ট্রেলিয়াকে জিতলেই চলত। কিন্তু ফিফা ক্রমতালিকায় ১০ নম্বরে থাকা ডেনমার্কের বিরুদ্ধে কাজটা অত্যন্ত কঠিন ছিল ফিফা ক্রমতালিকায় ৩৮ নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়ার। লড়াই কঠিন হলে অসম ছিল না। ফলে সকারুসরা নিজেদের উজার করে দিয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট অর্জন করে নেয়।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন রাইট উইঙ্গার ম্যাথু লেকি। ৬০ মিনিটে রিলে ম্যাকগ্রির পাস থেকে গোল করে যান তিনি। পুরো ম্যাচে ডেনমার্কের আধিপত্য থাকলেও অ্যাটাকিং লাইনের ব্যর্থতায় তারা পরাস্ত হয়। অস্ট্রেলিয়া যেখানে ৪টি শট টার্গেটে রেখেছিল সেখানে ডেনমার্ক পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েও প্রতিপক্ষের গোলে মাত্র তিনটি শট রাখতে সক্ষম হয়। ম্যাচে ৬৯ শতাংশ বল পজিশন ছিল ডেনমার্কের দখলে। ডেনমার্ক সারা ম্যাচে ৬৬৪টি পাস খেলে যার মধ্যে নির্ভুল পাস ছিল ৫৫০টি, অন্য দিকে, অস্ট্রেলিয়া ৩০৪টি পাস খেলে যার মধ্যে ১৯৫টি নির্ভুল ছিল। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় কতটা দাপট ছিল ম্যাচে ডেনমার্কের।
গ্রুপ ‘ডি’ দ্বিতীয় স্থানে শেষ করায় অস্ট্রেলিয়া প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে গ্রপ ‘সি’-এর চ্যাম্পিয়ন দলের। গ্রুপ ‘ডি’-এর চ্যাম্পিয়ন দল হওয়ার দৌড়ে রয়েছে আর্জেন্টিনা, পোল্যান্ড এবং সৌদি আরবিয়া। তবে, এই তিন দলের শক্তি যদি বিচার করা যায় তা হলে ফেভারিট আর্জেন্টিনা। সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে গেলে অস্ট্রেলিয়াকে মুখোমুখি হতে হবে মেসির দেশের বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ে নিশ্চিত ভাবেই চাপে থাকবে অস্ট্রেলিয়া। তবে, যে ভাবে তারা খেলছে তাতে ম্যাচটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তা আশা করা যায়।