কক্সবাংলা ডটকম :: ফিফা বিশ্বকাপ থেকে ইকুয়েডরকে ছিটকে দিয়ে গ্রুপ এ থেকে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেল সেনেগাল। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এই ম্যাচটি ড্র করলেই রাউন্ড অব সিক্সটিনে পৌঁছে যেতে পারত ইকুয়েডর। কাতারকে হারানোর পর নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ড্র করেছিল তারা। কিন্তু সেনেগালের কাছে ১-২ গোলে হেরে বিদায় নিল ইকুয়েডর। ডাচদের সঙ্গে সেনেগাল পৌঁছে গেল প্রি কোয়ার্টারে।
বিরতিতে সেনেগাল এগিয়ে ছিল ১-০ গোলে। ৬৭ মিনিটে মোজেস কাইসেডোর গোলে সমতা ফেরায় ইকুয়েডর। যদিও ৭০ মিনিটে সেনেগালের জয়সূচক গোলটি করেন অধিনায়ক কালিডো কোলিবালি। ২০০২ সালের পর এই প্রথম কোনও বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে গেল সেনেগাল। এদিন খেলার প্রথম থেকেই তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল সেনেগাল। প্রচুর দর্শকও সেনেগালকে সমর্থন করতে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে উপস্থিত ছিলেন। শেষ বাঁশি বাজতেই ২০ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান।
চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেয়ার প্লে পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল সেনেগাল, শেষ ষোলোয় গিয়েছিল জাপান। পয়েন্ট, গোলপার্থক্য, গোল করার নিরিখে জাপান ও সেনেগাল ছিল একই জায়গায়। কিন্তু কম হলুদ কার্ড দেখার সুবাদেই সেনেগালকে টেক্কা দিয়ে প্রি কোয়ার্টারে চলে যায় জাপান। তবে এবার নেদারল্যান্ডসের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করেই শেষ ষোলোয় গেল আলিউ সিসের প্রশিক্ষণাধীন দল। দেশের হয়ে ৬৭ ম্যাচ খেলা কোলিবালি এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক গোলটি পেলেন, যা নিশ্চিত করে দিল সেনেগালের পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া। ইকুয়েডরের সমতা ফেরানোর পরেই জয়সূচক গোলটি এলো তাঁর পা থেকে।
সাদিও মানে হাঁটুর চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় বিশ্বকাপ অভিযানের আগে ধাক্কা খেয়েছিল সেনেগাল। কিন্তু তারপরও ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে মূল্যবান জয় ছিনিয়ে নিয়ে নক আউটে যাওয়া নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের। প্রথম ম্য়াচে নেদারল্যান্ডসের কাছে পরাস্ত হয়েছিল সেনেগাল। দ্বিতীয় ম্যাচে কাতারের বিরুদ্ধে দারুণভাবে কামব্যাক করে ছিনিয়ে নেয় ৩-১ গোলে দুরন্ত জয়। এদিন ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে গোলের জন্য অন্তত ১৫টি প্রয়াসই বুঝিয়ে দিচ্ছে কতটা দাপট নিয়ে খেলেছে সেনেগাল।
বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ কোচ ভ্যান গাল জানিয়ে দিয়েছেন এটাই তার শেষ কোচিং করানো। নিজের দেশ নেদারল্যান্ডসকে না পাওয়া বিশ্বকাপ দিতে চান তিনি। এক পয়েন্ট পেলেই নক-আউটে জায়গা নিশ্চিত! এই সমীকরণেই মঙ্গলবার গ্রুপ এ’র ম্যাচে কাতারের মুখোমুখি হয়েছিল নেদারল্যান্ডস। আয়োজক দেশকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য ছিল ডাচদের।
এদিকে, প্রথম দু’টি ম্যাচ হেরে ইতিমধ্যেই বিদায় নিশ্চিত হয়েছে কাতারের। তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফেভারিট হিসেবেই নামবে লুই ফন গলের দল। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। তবে প্রত্যাবর্তনের আসরে ভাল ছন্দে রয়েছে গুলিত-বাস্তেনের দেশ।
শুরুটা জয় দিয়েই করেছিলেন ফ্র্যাঙ্কি ডে জংরা। সেনেগালকে ২-০ ব্যবধানে হারান তাঁরা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে আটকে যায় ইকুয়েডরের কাছে। সেই ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়াতে প্রত্যয়ী ছিল নেদরাল্যান্ডস। চলতি বিশ্বকাপে তাদের রক্ষণভাগকে বেশ জমাট দেখাচ্ছে। ভার্জিল ফন ডিক, আকেরা দারুণ ছন্দে আছেন। মাঝমাঠে ফুল ফোটাচ্ছেন ফ্র্যাঙ্কি ডে জং।
তবে আক্রমণভাগে ভেদশক্তির অভাব স্পষ্ট। ম্যাচফিট নন মেম্ফিস ডিপে। তাঁকে পরিবর্ত হিসেবে নামাচ্ছেন ফন গল। বার্গউইন চেনা ছন্দে নেই। তবে কোডি গাকপো আক্রমণভাগে ভরসা জোগাচ্ছেন। আজ প্রথমার্ধে গাকপো বিশ্বকাপের তিন নম্বর গোল করলেন কাতারের বিরুদ্ধে। ক্লাসেনের বল ধরে জোরালো শটে।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে নিল ডাচ ব্রিগেড। ডিপের বল ধরে গোল করে গেলেন ডি ইয়ং। এখানেই শেষ হয়ে গেল কাতারের প্রতিরোধ। বাকি সময়টা শুধুই খেলতে হয় তাই খেলা। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে এমনিতেও মোটিভেশন ছিল না আয়োজক দেশের।
আল হাইডস, আফিফ, আলময়েজ আলিরা দৌড়াদৌড়ি করলেন বটে, কিন্তু সেটা নেদারল্যান্ডের মতো দলকে বিপদে ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। আরো একটি গোল করেছিল নেদারল্যান্ডস। তবে বল হাতে লাগার কারণে বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দাপট বজায় রেখেই ম্যাচটা শেষ করল কমলা জার্সিধারীরা।
কাতার কয়েকটা বল ধরে কাউন্টার আক্রমণ করার চেষ্টা করছিল বটে, কিন্তু ভেদ শক্তির অভাব ছিল বেশি। সম্মানের ম্যাচে ও আয়োজক দেশকে খালি হাতেই ফিরতে হল। ভ্যান গাল জানিয়ে গেলেন এই জয় আত্মবিশ্বাস দিল, কিন্তু নেদারল্যান্ডকে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।
Posted ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ নভেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Chy