কক্সবাংলা ডটকম :: দেশের আনাচকানাচ থেকে সম্ভাব্য প্রতিভা খুঁজে বের করো। সেই কাঁচা হিরা ঘষেমেজে চকচকে করো। এরপর চড়া দামে বিক্রি করে দাও! ব্রাজিলের প্রায় সব ফুটবল ক্লাবই এটা করে। এ কারণেই তো বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে ফুটবলার রপ্তানিতে এগিয়ে ব্রাজিল। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার ব্রাজিলীয় ক্লাবগুলোর দলবদল-বাণিজ্যে বেশ মন্দা। ট্রান্সফারমার্কেট ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ব্রাজিল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফুটবলারদের দলবদল কমে গেছে ৬২ শতাংশ।
গত বছর ১ জুন থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯৪ জন ফুটবলার ব্রাজিলের ক্লাবগুলো থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এঁদের কেউ স্থায়ী চুক্তি করেছেন, কেউ আবার খেলতে গেছেন ধারে। এ বছর সংখ্যাটা কমে মাত্র ৭৪ জন! ইএসপিএনের ধারাভাষ্যকার গুস্তাভো হফম্যানের বিশ্লেষণটা এ রকম, ‘দলবদলের বাজার এবার শ্লথ। ক্লাবগুলো এবার খুব বেশি খরচ করতে চাচ্ছে না। কারণ সবার আর্থিক অবস্থাই বেশ খারাপ।’
সুইজারল্যান্ডের সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজের মে মাসের হিসাব অনুযায়ী মুহূর্তে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ব্রাজিলের ২৭৪২ জন ফুটবলার। ২৩৩০ জন নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফুটবলার রপ্তানিকারক দেশ আর্জেন্টিনা। ফ্রান্স আছে তৃতীয় স্থানে। সারা বিশ্বে খেলছে দেশটির ১৭৪০ জন ফুটবলার। পেলে, গারিঞ্চা, রোনালদো, রোমারিও, নেইমারদের দেশ ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর আয়ের বড় একটা অংশ আসে খেলোয়াড় বিক্রি থেকে। এই খাত থেকে ক্লাবগুলো তাদের মোট আয়ের এক চতুর্থাংশ পায়, যেটা আয়ের খাতের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। টিভি-সত্ত্ব থেকেই মূলত সবচেয়ে বেশি আয় তাদের।
এবার যে দলবদলের সংখ্যাই শুধু কমেছে তা নয়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার চুক্তির অর্থের অঙ্কটাও কমেছে। গত বছর ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর সর্বোচ্চ অঙ্কের তিনটি চুক্তি থেকে এসেছে ৭ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। এর মধ্যে ছিল সান্তোস থেকে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে তরুণ উইঙ্গার রদ্রিগোর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার চুক্তিটাও। এবার সর্বোচ্চ আয়ের তিনটি চুক্তি থেকে এসেছে ৬ কোটি ২০ লাখ ইউরো। সবচেয়ে বড় চুক্তিটি এভারটনের। গ্রেমিও থেকে ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গারকে নিতে ২ কোটি ৮০ লাখ ইউরো খরচ করেছে পর্তুগালের ক্লাব বেনফিকা।
লিসবনের ক্লাব বেনফিকা ব্রাজিল থেকে আরও এক ফুটবলারকে নিয়েছে, আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার পেদ্রিনিও। করিন্থিয়ানস থেকে তাঁকে নিতে খরচ করেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। হফম্যান বলেছেন, ‘অন্য যেকোনো বছর হলে এভারটনের জন্য বেনফিকা আরও বেশি খরচ করত।’
দলবদলের বাজারে এই মন্দাটা ব্রাজিলের ক্লাবগুলোর জন্য সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ সময়েই এসেছে। ঋণের ভারে নুব্জ্য ক্লাবগুলো দলবদলের বাজার থেকে কিছু অর্থ উপার্জন করে হাঁপ ছেড়ে বাঁচার কথা ভাবছিল। এমন সময়েই কি না আক্রমণ করল করোনা! ব্রাজিলের ক্রীড়া-বাণিজ্য বিষয়ক সাংবাদিক রদ্রিগো কাপেলো বলেছেন, ‘করোনা মহামারির কারণে ক্লাবগুলোর আর্থিক অবস্থা আরও বাজে হয়েছে।’ মহামারির কারণে প্রায় চার মাস ফুটবল বন্ধ ছিল ব্রাজিলে। এভাবে ফুটবল বন্ধ থাকায় স্পনসরশিপ, টিভি সত্ত্ব ও টিকিট বিক্রি থেকে আয় কমেছে ক্লাবগুলোর।
ফুটবলার রপ্তানিতে ব্রাজিল যেমন শীর্ষে, তেমনি দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুটবল আমদানি করার ক্ষেত্রেও শীর্ষ পর্যায়েই আছে। উরুগুয়ে, কলম্বিয়া, পেরু—এই সব দেশ থেকে তরুণ ফুটবলার নিয়ে আসে ব্রাজিলের ক্লাবগুলো। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার তারা নিজেদের দেশের খেলোয়াড়দের নিয়েই ব্যস্ত আছে। ব্রাজিলের ক্লাবগুলোতে ফুটবলার সরবরাহ করে থাকেন কলম্বিয়ার এজেন্ট কার্লোস কালেরো। প্রতি মৌসুমে গড়ে তিনি তিনজন ফুটবলার ব্রাজিলের ক্লাবগুলোয় সরবরাহ করেন। এবার এখন পর্যন্ত একটি চুক্তিও করাতে পারেননি কালেরো!
Posted ৬:২৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta