কক্সবাংলা ডটকম(২৯ নভেম্বর) :: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য ইসলামিক রাজনৈতিক দলের ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থানের কারণে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভাস্কর্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্বক অবস্থান নিলে ধর্মভীরুদের মনে আওয়ামী লীগ বিদ্বেষ তৈরি করতে পারে, এমন চিন্তায় ভাস্কর্য বিতর্ককে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলাসহ তিন কৌশল নিয়ে আগাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
প্রায় দুই মাস ধরেই ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরি করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে অনেকগুলো ইসলামপন্থী দল। অক্টোবর মাসে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশও করে কয়েকটি ইসলামিক দল।
তবে ভাস্কর্য ইস্যুতে সারাদেশে তোড়পাড় শুরু হয় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব ও খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হকের মন্তব্যের পর। নভেম্বরের ১৩ তারিখ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভাস্কর্য তৈরির বিরোধিতা করে এই নেতা হুশিয়ারি দেন, ঢাকায় ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করা হবে।
মামুনুলের এই বক্তব্যের সমর্থনে আরো কড়া মন্তব্য করেন হেফাজতের নবনির্বাচিত আমির জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি সারাদেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানান।
বাবুনগরীর বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ যথাসময়ে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর শরিক রাাজনৈতিক দলগুলো।
আওয়ামী লীগের শীর্ষমহলের ইঙ্গিতে এরই মধ্যে রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার হয়েছে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বৃদ্ধ সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের বাইরেও ঢাকা মহানগরের ইউনিটগুলো, অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো সামনের দিনে ভাস্কর্যের পক্ষে মাঠে থাকবে। একইভাবে সারাদেশেই আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলোও ভাস্কর্যের সমর্থনে ব্যাপক প্রচারণা চালাবেন বলেই জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষমহল।
রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বাইরে পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠন যেমন ডাক্তার, সংস্কৃতিকর্মীদের সংগঠন, শিক্ষকসহ সকল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষকে রাজপথে নামবেন ভাস্কর্যের সমর্থনে।
রাজনৈতিকভাবে হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামিক রাজনৈতিক দলকে মোকাবেলার পাশাপাশি ভাস্কর্য ইস্যুতে বিতর্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথও খোলা রেখেছে আওয়ামী লীগ। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতে, ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করলে হেফাজত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে হেফাজত ব্যাপক সহিংসতা ও জ্বালাও পোড়াও চালায়। সেই ঘটনায় হেফাজতের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। হেফাজতের বর্তমানের আমির জুনাইদ বাবুনগরীসহ অন্যান্য হেফাজত নেতারা সেই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। এর বাইরে হেফাজতের যুগ্ন-মহাসচিব মামুনুল হক বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল খেলাফতে মজলিশের আমির। তার বিরুদ্ধে সারাদেশ ব্যাপী বাসে আগুনসহ নাশকতার মামলা দেওয়ার সুযোগও রয়েছে সরকারের। সরকার হেফাজতের নেতাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা সচল করার পথও খোলা রেখেছে। তবে সরকারের এই কৌশলটি ব্যবহার পুরোপুরি হেফাজতের নেতৃবৃন্দের অবস্থানের উপর। ভাস্কর্য নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করলেই কেবলমাত্র এই কৌশল ব্যবহার করবে সরকার।
ইসলামের কোথাও ভাস্কর্য নিয়ে কোন কথা নেই। আর ভাস্কর্য মানেই মূর্তি নয় এই অবস্থান নিয়ে ইসলামের আলেম ওলামা ও মনীষীদের মাধ্যমে হেফাজতকে ভাস্কর্য বিরোধী অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করবে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে এই সমঝোতায় দেশের বরণ্য ইসলামের আলেম-ওলামাগণ অংশ নিবেন বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
সংকটে নীরব আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা
ভাস্কর্য বিতর্ক নিয়ে সৃষ্ট বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা প্রতিক্রিয়া জানালেও আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা অনেকটাই আড়ালে রয়েছেন।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মোস্ট সিনিয়র নেতাদের ‘রাজনৈতিকভাবে’ এমন নিষ্ক্রিয়াকে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ‘অপব্যাখ্যাজনিত নীরবতা’ হিসেবে দেখছেন।
প্রায় দুই মাস ধরেই ঢাকার ধোলাইপাড় চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য তৈরি করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে অনেকগুলো ইসলামপন্থী দল। অক্টোবর মাসে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভাস্কর্য নির্মাণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশও করে কয়েকটি ইসলামিক দল।
তবে ভাস্কর্য ইস্যুতে সারাদেশে তোড়পাড় শুরু হয় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব ও খেলাফত মজলিশের নেতা মামুনুল হকের মন্তব্যের পর। নভেম্বরের ১৩ তারিখ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভাস্কর্য তৈরির বিরোধিতা করে এই নেতা হুশিয়ারি দেন, ঢাকায় ভাস্কর্য নির্মাণ করা হলে তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করা হবে।
মামুনুলের এই বক্তব্যের সমর্থনে আরো কড়া মন্তব্য করেন হেফাজতের নবনির্বাচিত আমির জুনাইদ বাবুনগরী। তিনি সারাদেশের সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানান।
বাবুনগরীর বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ যথাসময়ে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর শরিক রাাজনৈতিক দলগুলো। মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলো। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও কড়া প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
ভাস্কর্য বিতর্ক নিয়ে আওয়ামী লীগ কিছুটা অস্বস্তিতে আছে। বিএনপি ও জামায়াতের ইন্ধনে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ভাস্কর্যকে মূর্তি হিসাবে ইসলামিক দলগুলো বিতর্ক তৈরি করলেও আওয়ামী লীগ বিতর্ক সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে সরকারকে ধর্ম বিরোধী হিসাবে অ্যাখ্যা দিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা নেওয়া চেষ্টা করবে বিএনপি ও জামায়াত জোট।
আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ভাস্কর্য সংকটকে দলটির বড় সংকট হিসাবেই হিসাবেই দেখছে। তাদের মতে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আরোহনের পর অতীতে এত বড় সংকটের সম্মুখীন হয়নি আওয়ামী লীগ। এই ইস্যুতে একটি ভুল পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলটির পুরো রাজনৈতিক অবস্থানকে টালমাটাল করে দিতে পারে।
এই গভীর সংকটে প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক জ্ঞানে বলিষ্ঠ সিনিয়র নেতাদের যখন দলের অতি প্রয়োজন, ঠিক তখন এক অজানা কারণে মোস্ট সিনিয়র নেতাদের সবাই মৌনব্রত পালন করছেন।
রাজনীতির মাঠে অতি পরিচিত এই সকল নেতারা জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অতীতে আওয়ামী লীগের সংকটকালে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন তারা। জনগণকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে জাতিকে অনেক সংকট থেকে উদ্ধার করেছেন এই সব নেতারা।
আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, ‘অতীতে সমস্যা সংকটে দলের সিনিয়র নেতারা কান্ডারীর ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু আজ যখন দল ও জাতি চরম সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। মৌলবাদীরা যখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করার চেষ্টা করছে, তখন সিনিয়র নেতাদের নিশ্চুপতা বরং দল ও জাতিকে আরো গভীরে সংকটে পতিত করছে’।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ মনে করেন, সিনিয়র নেতারা খুব দ্রুতই ভাস্কর্য বিতর্কতে তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে জনগণের সামনে আসবেন। এবং তারা যত দ্রুত সামনে আসবেন, ততই দ্রুত দল ও জাতি এই সংকট থেকে মুক্ত হবে।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy