কক্সবাংলা ডটকম(১০ জানুয়ারি) :: ভূমিপুত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম এ দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের যদি অতীত ইতিহাস দেখেন, তাহলে একমাত্র ভূমিপুত্র বলতে, এই মাটির সন্তান বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই প্রথম এ দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন। তার আগে যারাই ছিলেন, তাদের জন্ম কিন্তু এ দেশে ছিল না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা শাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে গণমুখী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেটা যদি করে যেতে পারতেন তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার সব ভিত তৈরি করে গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সব কাজে আমি যখন দেখি প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার অবাক লাগে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত আইন, এত নীতিমালা, এত কাজ তিনি কীভাবে করেছেন! এটা একটা বিস্ময়। এটা যদি গবেষণা করেন তাহলে আপনারা দেখতে পাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে দাঁড়াক, বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলুক, সম্মান নিয়ে চলুক—এটা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি কখনো চায়নি। চায়নি বলেই তারা শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেনি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকেও মানুষকে বিচ্যুত করেছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়নি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের যে কত কিছুতে গর্ব করার রয়েছে, সেই কথাটা অনেকে জানতেই পারেনি। পুরো ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে জানার একটা আগ্রহ জন্মেছে, এটা আশার বিষয়। স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল আজ তারাই ব্যর্থ। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে যে মর্যাদা ধারণ করে এ মর্যাদা ধরে রেখে আমরা দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সমৃদ্ধ উন্নত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।
করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রা কিছু ব্যাহত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে ভ্যাকসিন ক্রয় করার সব ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি, ইনশা আল্লাহ ভ্যাকসিন এসে যাবে। তার পরও বলব সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, অন্যকে রক্ষা করতে হবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, আর কিছুদিন পর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। জাতির পিতা ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ৫০ বছর পূর্তিও আমরা করব। যেভাবে এসব করার কথা ছিল করোনার কারণে সেভাবে করতে পারছি না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী হয়তো ঘটা করে পালন করতে পারিনি। কিন্তু আমরা দেশের সেবা মানুষের সেবা করেই সেটা উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা গৃহহীন ও ভূমিহীনদের তালিকা নিয়ে তাদের ঘর করে দিতে চাই। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।
বাঙালি জাতিকে আত্মপরিচয় দিতেই বঙ্গবন্ধু সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেদিন থেকে পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল, সেদিন থেকেই তিনি দেশকে স্বাধীন করার সংগ্রাম শুরু করেন। একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয় অর্জন করি। এ সংগ্রাম করতে গিয়ে তাকে বারবার নির্যাতনের শিকার ও কারাগারে বন্দি হতে হয়। একটি মানুষ তার জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন একটি জাতিকে আত্মপরিচয়ের ঠিকানা দেয়ার জন্য, একটি রাষ্ট্র দেয়ার জন্য।
জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তিনি যখন মুক্তি পেয়ে বাংলার মাটিতে ফিরে এলেন, পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি এটুকু বলব, আমার আব্বা কিন্তু আমাদের কাছে আসেননি। তিনি কিন্তু পরিবারের কাছে না, তার জনগণের কাছে গিয়েছিলেন সবার আগে। জনতাকে যে তিনি কত ভালোবাসতেন, সেটাই হলো সবচেয়ে বড় কথা।
Posted ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ জানুয়ারি ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Chy