কক্সবাংলা ডটকম(২৫ জুলাই) :: টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। দুপুরেও জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়েছে খাতুনগঞ্জে গুদামজাত কোটি কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের বাজারে বাকিতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে আস্থা ধরে রাখতে ক্ষতির হিসাব প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার দুপুরে কয়েক দশকের প্রকটতম জলাবদ্ধতায় খাতুনগঞ্জের অনেক গুদামের পণ্য নষ্ট হয়। ওইদিন মধ্যরাতেও বাজারে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। এ সময় ক্ষয়ক্ষতি থেকে গুদাম ও আড়তের মালপত্র রক্ষা করতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সারা রাত জেগে ছিলেন। সকাল থেকে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দুপুরেও জোয়ারের পানির কারণে বাজারে আগের দিনের চেয়ে প্রায় এক ফুট বেশি পানি জমে। এতে নতুন করে শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জোয়ারের পানিতে আক্রান্ত হয়।
নষ্ট হয় কয়েক কোটি টাকার পণ্য। তবে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য পেতে বিপত্তি সৃষ্টির আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাব জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন। মালপত্র নষ্ট হলে লোকসানি প্রতিষ্ঠান বাকিতে কেনা পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হবে, এমন আশঙ্কা থাকে। আমদানিকারকদের এমন আশঙ্কা থেকে রক্ষা পেতে ক্ষতি সত্ত্বেও নিশ্চুপ রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানিয়েছেন, রোববারের তুলনায় জোয়ারের পানির পরিমাণ ছিল বেশি। আগের দিন যেসব প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে, দ্বিতীয় দিন সেগুলোর পাশাপাশি নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজ উদ্যোগে পানি প্রবেশ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে শ্রমিক সরবরাহ কিংবা মালপত্র সরিয়ে নিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ হওয়ায় ভোগ্যপণ্য সরিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন গুদাম এলাকাও আগে থেকে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
খাতুনগঞ্জের চাক্তাই শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, টানা দ্বিতীয় দিনের মতো জলাবদ্ধতায় শতকোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই আমদানিকারকদের ভয়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রকাশ করছে না। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় খাতুনগঞ্জে লেনদেন শূন্যের কোটায় নেমেছে। মালপত্র ভিজে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কা রয়েছে খাতুনগঞ্জে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দিনের জোয়ারের পানিতে চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, মধ্যম চাক্তাই, চালপট্টি, চামড়া গুদাম, পোস্ট অফিস গলি, ইসমাইল ফয়েজ রোড, ড্রামপট্টি, শুঁটকিপট্টি, সোবহাননগর সড়ক, রাজাখালী ও আছদগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করেছে। এ সময় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বালতিতে করে আড়ত ও গুদাম থেকে পানি সরিয়ে নেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
আছদগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, রোববার মধ্যরাতে জোয়ারের পানি আসার পর মালপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় কর্মচারীরা ঘুমাননি। এরপর দুপুরে আগের দিনের চেয়ে বেশি পানি ওঠে। এ অবস্থায় চোখের সামনে লোকসান হতে দেখে মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কাঁচাপণ্য ও চাল ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চিনি, ডাল, শুঁটকি, আটা-ময়দা ও গম ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার পণ্য জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের পণ্য সরবরাহ দিতে বিলম্ব হয়। ফলে বিক্রীত পণ্য গুদামে থাকায় লোকসান দ্বিগুণ হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা পণ্য বিরূপ পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নিজ প্রতিষ্ঠানে থাকাবস্থায়ই বিক্রি হওয়া পণ্য নষ্ট হয়েছে। ফলে এর দায়ভার নিজের কাঁধে নেয়া ছাড়া উপায় নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।
Posted ৫:৪৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy