কক্সবাংলা ডটকম(৫ অক্টোবর) :: গ্রহ, উপগ্রহ এমনকি ধূমকেতু অভিমুখে মহাকাশ যান পাঠানোর কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু এবার পাঠানো হচ্ছে সূর্যের দিকে, যার নাম পার্কার। উদ্দেশ্য সূর্যকে স্পর্শ করা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসার এই যানটিই হবে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে প্রথম কোন স্পেইসক্রাফ্ট যা সূর্যের পরিমণ্ডলের গভীরে প্রবেশ করবে।
পার্কার তৈরি করে এই যানটিকে মহাকাশে পাঠাতে নাসার খরচ হবে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। এর আকার হবে ছোট্ট একটি গাড়ির সমান। সূর্য থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ মাইল দূরে থেকে এই যানটি ওই তারার চারদিকে ঘুরতে থাকবে।
এই যানটি উৎক্ষেপণ করা হবে আগামী বছরের জুন মাসে। কিন্তু নাসা বলছে, এটি সূর্যের চারদিকে ঘুরতে শুরু করবে ২০২৪ সাল থেকে।
সূর্যের উপরি-পৃষ্ঠ অত্যন্ত গরম। সেখানকার তাপমাত্রা ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি।
আর একারণে পার্কারের জন্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে টিকে থাকা। সূর্যের পরিমণ্ডল বা ফটোস্ফিয়ারের যে জায়গায় থেকে এটি ঘুরতে থাকবে সেখানকার তাপমাত্রা ১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা আড়াই হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট।।
সূর্যের বাইরের এটমোসফেয়ারের পরিবেশ আরো কঠিন ও জটিল। প্রচণ্ড তাপমাত্রার সাথে আছে তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ।
এসবের মুখোমুখি হয়ে পার্কার জানার চেষ্টা করবে সূর্যের গঠন এবং এই বৃহদাকার তারকাটি ঠিক কিভাবে কাজ করে সেসব বিষয়ে।
সূর্যের চারদিকে এর ছুটে চলার গতি হবে ঘণ্টায় চার লক্ষ ৩০ হাজার মাইল। এই গতিতে ছুটে গেলে অ্যামেরিকার নিউ ইয়র্ক থেকে জাপানের টোকিওতে যেতে লাগবে এক মিনিটেরও কম সময়।
নাসার এই মিশনের বিজ্ঞানী নিকি ফক্স বলছেন, বিশাল সূর্যের চারদিকে পার্কার ঘুরবে মোট ২৪ বার।
“সূর্যের চারদিকে গ্যাসের যে পরিবেশ আমরা সেই করোনার ভেতরে প্রবেশ করবো। এই এলাকার রহস্য উন্মোচন করতে বহু বিজ্ঞানী দশকের পর দশক ধরে গবেষণা করেছেন। শেষ পর্যন্ত আমরাও এখন সেখানে একটি মিশন পাঠাচ্ছি যা এসব রহস্য ভেদ করতে পারবে,” বলেন তিনি।
নিকি ফক্স বলেন, পার্কারকে যেদিন উৎক্ষেপণ করা হবে সেদিনটা তার জন্যে হবে অত্যন্ত আবেগময় একটা দিন।
“আনন্দ ও কষ্ট এই দুটো অনুভূতিই কাজ করবে। কারণ এই মহাকাশ যানটি নিয়ে আমি প্রচুর কাজ করেছি। এই মিশনের প্রত্যেক বিজ্ঞানীর জীবনের সাথে এটি জড়িয়ে গেছে। এটা হচ্ছে অনেকটা নিজের সন্তানকে কলেজে পাঠানোর মতো। আমরা বিশ্বাস করি, পার্কার ঠিকমতোই কাজ করবে এবং সেটি মহাকাশ থেকে আমাদের কাছে প্রচুর তথ্য পাঠাবে। এই মিশন নিয়ে আমরা সবাই উত্তেজনা বোধ করছি। আমি নিশ্চিত যে সেদিন আমি কেঁদেই ফেলবো।”
মঙ্গলে মানুষ
সূর্যের পর এবার তাকাই মঙ্গল গ্রহের দিকে। গ্রহটির অভিমুখে এবার মহাকাশ যান নয়, পাঠানো হচ্ছে মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের রকেট ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক ঘোষণা করেছেন, ২০২৪ সালে তিনি মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাবেন।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি জানান, এজন্যে তার কোম্পানি স্পেস এক্স আগামী বছর রকেট নির্মাণের কাজ শুরু করবে।
তিনি জানান, এসব রকেট এতো দ্রুত গতির হবে যে পৃথিবীর যেকোনো একটি শহর থেকে আরেকটি শহরে যেতে সময় লাগবে এক ঘণ্টারও কম। যেমন নিউ ইয়র্ক থেকে চীনের শাংহাইতে যেতে লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট। লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক ২৯ মিনিটে।
এসব শুনতে হয়তো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু বিবিসির বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন অ্যামোস বলছেন, “একটি রকেটকে বারবার ব্যবহার এবং ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির গবেষণায় পুরোভাগে আছেন ইলন মাস্ক। আর সেকারণে তিনি যখন বলেন যে আগামী সাত বছরে তিনি মানুষকে মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাবেন, তখন ধরে নিতে হবে এই স্বপ্নকে তিনি গুরুত্বের সাথেই নিয়েছেন।”
মঙ্গল অভিযানের উপযোগী নতুন এক রকেটের নকশা তৈরি করতে ব্যস্ত আছেন ইলন মাস্ক। তিনি এই রকেটের নাম দিয়েছেন বি এফ আর।
স্পেস এক্স বলছে, এই রকেটটিতে ১০০ জনের মতো যাত্রীকে পরিবহন করা যাবে। শুধু তাই নয়, এই রকেট উড়তে পারবে বহুবার। এজন্যে শুধু জ্বালানী ভরতে হবে, আর কিছু নয়।
ইলন মাস্ক বলেন, “আমাদের বর্তমান যানগুলোকে আমরা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে চাই। আমরা এমন একটি রকেট তৈরি করতে চাই যা আমাদের এখনকার রকেট ফ্যালকন নাইন, ফ্যালকন হেভি এবং ড্রাগনকে প্রতিস্থাপন করবে। আর আমরা যদি সেটা করতে পারি তাহলে ফ্যালকন নাইন, হেভি ও ড্রাগনের পেছনে যতো সম্পদ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেসব নতুন এই রকেট তৈরির পেছনে খরচ করা হবে।”
মি. মাস্ক জানান, মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে তার স্পেস এক্স কোম্পানি এখন এই প্রকল্পের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে।
এই রকেট তৈরিতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে তার সংস্থানের বিষয়ে ইলন মাস্ক বলছেন, সেই উপায়ও তিনি খুঁজে বের করেছেন। “বিএফআর শুধু মঙ্গলগ্রহ অভিযানের জন্যই ব্যবহৃত হবে না। এটি মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালামাল পরিবহন, এমনকি পৃথিবীর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মানুষ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হবে। ফলে এই বহুবিধ ব্যবহার থেকে এটির খরচ উঠে আসবে।”
Posted ১২:০৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Chy