বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যে মরে যাচ্ছে কক্সবাজারের তৃতীয় বৃহৎ নদী কুহেলিয়া

বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
104 ভিউ
মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যে মরে যাচ্ছে কক্সবাজারের তৃতীয় বৃহৎ নদী কুহেলিয়া

বিশেষ প্রতিবেদক(২৯ অক্টোবর) :: কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে মাতারবাড়ী-মহেশখালী এলাকার উন্নতি হলেও মরে যাচ্ছে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন জেলার তৃতীয় বৃহৎ নদী কুহেলিয়া।

প্রকল্পের বর্জ্য এবং পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর অন্তত ৭ কিলোমিটার এলাকা। কয়েক মাস ধরে ভরাট চর দখল করে তৈরি হচ্ছে চিংড়িঘের। ফলে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে সামুদ্রিক মাছ ও জীববৈচিত্র্য। জীবন-জীবিকা নিয়ে ঝুঁকিতে অন্তত দুই হাজার দরিদ্র মানুষ।

ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণে হাঁসের চর থেকে কুহেলিয়া নদী শুরু, শেষ হয়েছে উজানটিয়ায় গিয়ে। প্রায় ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এই নদী দিয়ে পাঁচ বছর আগেও এলাকায় উৎপাদিত লবণ, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ, মিষ্টি পানসহ বিভিন্ন পণ্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ সরবরাহ করা হতো।

কয়েক বছর আগে মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য কুহেলিয়ার বুক ভরাট করে তৈরি হয় চার লাইনের সাড়ে সাত কিলোমিটারের পাকা সড়ক। জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার কোম্পানি।

৮০ ফুট প্রস্থের সড়কটি নির্মাণের জন্য নদীর তীরের কোথাও ৩০ ফুট, কোথাও ৫০ ফুট করে ভরাট করা হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, দখল ও দূষণের ফলে কুহেলিয়া নদীটি এখন মৃতপ্রায়। নদী রক্ষায় অনেক আন্দোলন হয়েছে, তবু কাজ থেমে থাকেনি। তলদেশ খনন, সীমানা নির্ধারণ করে নদী সুরক্ষার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা-ও মানা হচ্ছে না।

নদী দখল করে চিংড়িঘের নির্মাণ

গত শনিবার সকাল ১০টা । মাতারবাড়ীর দক্ষিণ রাজঘাট সিএনজি স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, নদীতে কোনো নৌযান নেই। নদীর ওপর নির্মিত সেতু অতিক্রম করে লোকজন চকরিয়ার বদরখালীর দিকে ছুটছেন। সেতুর দুই পাশে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় ছয়টি চিংড়িঘের। কিছু অংশে পোঁতা হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।

নদীর ঢওয়াখালী অংশে দেখা গেল, বিশাল চর দখল করে নির্মিত হয়েছে আরও দুটি চিংড়িঘের। ঘেরের শ্রমিকেরা জানান, স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ আব্বাসের নেতৃত্বে ১০-১২ জন ঘের দুটি নির্মাণ করেন। খোঁজ নিয়ে ওই দুজনকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

বন বিভাগের মহেশখালীর গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব আলী বলেন, নদী দখল করে নির্মিত চিংড়িঘেরগুলো উচ্ছেদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। দখলদারের তালিকা হচ্ছে।

রাজঘাট থেকে পশ্চিম দিকে নদীর এক পাশ ভরাট করে তৈরি হচ্ছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক। প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। এখন ৫০০ মিটারের কাজ চলছে।

কুহেলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল কাদের বলেন, কালারমাছড়া, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট—এই তিন ইউনিয়নের কয়েক হাজার জেলে যুগ যুগ ধরে নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নদী ভরাট করে সড়ক এবং চিংড়িঘের নির্মাণ করায় মানুষগুলো বেকার হয়ে পড়েছেন। নদীতে মাছও পাওয়া যাচ্ছে না।

নদীতে মাছ শিকার করে পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতেন রাজঘাট এলাকার জেলে আমান উল্লাহ। পাঁচ বছর ধরে তিনি বেকার জানিয়ে আমান উল্লাহ (৫৫) বলেন, এলাকায় আয়রোজগারের বিকল্প পেশা না থাকায় তিনি অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় লবণচাষি কামাল উদ্দিন বলেন, তিন বছর আগেও রাজঘাট দিয়ে কার্গো ট্রলারে লবণ ও মালামাল ওঠানো-নামানো হতো। এখন ঘাটই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্জ্য এবং পলি জমে নদী ভরাট হওয়ায় নৌযান চলে না।

কবে হবে নদী খনন

সড়ক প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে হলেও নদী খননের উদ্যোগ না থাকায় এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। নদী খননের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইশতিয়াক বলেন, ২১ কিলোমিটারের নদী এখন সংকুচিত হয়ে মৃতপ্রায়। বরাদ্দ পাওয়া গেলে পলি সরিয়ে নদীতে নৌ চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।

দেখা গেছে, পাউবোর বেড়িবাঁধে (রাস্তা) সড়ক নির্মাণ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর ভেতরে ৫০ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ ফুট পর্যন্ত ভরাট করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাতায়াতের সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বাপা মহেশখালী শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ২০১৬ সালে মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ৪১৪ একর জমির ওপর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন ড্রেজার মেশিনে বঙ্গোপসাগর থেকে বালু উত্তোলন করে প্রকল্পের নিচু জমি ভরাট করা হয়। ওই সময় থেকে নদীতে ফেলা হয় কাদামাটি। তাতে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হায়দার বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভরাট করায় নদীটি মরে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭ কিলোমিটার ভরাট হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করে নৌ চলাচল স্বাভাবিক করা না গেলে এলাকার ২ হাজার মৎস্যজীবীর জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে।

প্রকল্পের বর্জ্য কিংবা পলিমাটি নদীতে ফেলা হয়নি, দাবি করে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের’ একজন পরিচালক বলেন, সাগরের জোয়ার-ভাটার কারণেই পলি জমে নদীর বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে চর জেগে উঠেছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহারিয়ার রুমি বলেন, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দক্ষিণ রাজঘাট থেকে সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। পরে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নদী দখল করে সড়ক নির্মাণের অভিযোগ এনে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা উচ্চ আদালতে একটি মামলা করার পর কাজের ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। এরপর সড়ক নির্মাণকাজ কিছুদিন বন্ধ রাখা হয়। তিন মাস পরে চেম্বার জজের আদালত বেলার ওই আদেশে স্থগিতাদেশ দেন।

শাহারিয়ার রুমি বলেন, উচ্চ আদালতে নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ওই কমিটি সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করে। কমিটির মতামতের ভিত্তিতে এখন নদীর কিছু স্থানে ১০ ফুট, কিছু স্থানে ১২ ফুট ভেতরে সরিয়ে সড়কের নির্মাণকাজ চালানো হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, নকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ।

104 ভিউ

Posted ১২:০২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com