কক্সবাংলা ডটকম :: দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে একজনও শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট পাননি। ফলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে।
শনিবার দেশটিতে প্রথম দফা নির্বাচন হয়। এতে বিস্ময়করভাবে বিরোধী দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজ শতকরা কমপক্ষে ৪৬ ভাগ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ পেয়েছেন শতকরা ৩৯ ভাগ ভোট। এ দেশটিকে নিয়ে ভারত ও চীনের আঞ্চলিক রাজনীতি আছে প্রবল। তাই এ নির্বাচনকে আঞ্চলিক শক্তির এক ভার্চ্যুয়াল গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য হিন্দু।
রোববার সকালে নির্বাচন কমিশন ভোটের ফল ঘোষণা শুরু করে। সে অনুযায়ী, এ মাসের শেষের দিকে হতে পারে দ্বিতীয় দফার ভোট।
২০০৮ সাল থেকে মালদ্বীপ বহুদলীয় গণতান্ত্রিক মর্যাদা অর্জন করে। তারপর ৯ই সেপ্টেম্বরের ভোটে তাদের মুক্তভাবে ৫ম প্রেসিডেন্ট বেছে নেয়ার কথা ছিল।
ক্ষমতাসীন সোলিহকে নিয়ে মোট আটজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এর মধ্যে ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ হলেন ভারতপন্থি। তিনি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধান প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ মুইজের পক্ষ থেকে। মোহাম্মদ মুইজ হলেন চীনপন্থি। নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহাম্মদ সোলিহ।
তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদ মুইজের অভিযোগ, তিনি দেশে কোনো রকম চেক বা ভারসাম্য ছাড়াই ভারতের উপস্থিতি অনুমোদন করেছেন।
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে মালদ্বীপে যেসব ভারতীয় সেনা অবস্থান করছেন, তাদেরকে সরিয়ে দেবেন এবং দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক আনবেন। তিনি মনে করেন বর্তমানে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে তা প্রচণ্ডভাবে ভারতের পক্ষে।
মুইজের দলের নাম পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস। এ দলটিকে দেখা হয় প্রচণ্ডভাবে চীনঘেঁষা হিসেবে। এর নেতা আবদুল্লাহ ইয়ামিন ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ওই সময়ে তিনি মালদ্বীপকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ বানিয়ে ফেলেন। এই উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্দর, রেলওয়ে এবং সড়ক নির্মাণ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে চীনের প্রভাবকে অনুমোদন দেয়া।
মুইজের দলের সিনিয়র একজন নেতা মোহাম্মদ শরীফ এপিকে বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচনা অযোগ্য বিষয় তার দলে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং তাদের কর্মকাণ্ড কি তা মালদ্বীপের জনগণের কাছ থেকে আড়াল করা হয়েছে। তারা দেশের সুনির্দিষ্ট কিছু বন্দর ও বিমানবন্দর এক্সক্লুসিভলি ব্যবহার করে।
ভারত মহাসাগরের ভিতর ১২০০ কোরাল দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গড়ে উঠেছে মালদ্বীপ। পূর্ব ও পশ্চিমে প্রধান নৌচলাচলের রুট এখান দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। ক্ষুদ্র এই দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করছে ভারত ও চীন।
এবার নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়ামিনের বিরুদ্ধে ফ্রন্টরানার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল মোহাম্মদ সোলিহকে। কিন্তু ইয়ামিনকে নির্বাচনে আটকে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ, দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে তিনি কারাগারে।
ওদিকে সোলিহর মালদ্বিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির বিভক্ত অংশের সুবিধা নেন মোহাম্মদ মুইজ। এই দলটির নেতৃত্বে আছেন মালদ্বীপের সাবেক ক্যারিশমাটিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নিজে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন মুইজ।
অন্যদিকে নির্বাচনে নিজে প্রার্থী দিয়েছিলেন মোহাম্মদ নাশিদ। তিনি মনোনয়ন দিয়েছিলেন ইলিয়াস লাবিবকে। তিনি পেয়েছেন শতকরা মাত্র ৭ ভাগ ভোট।
প্রতিবেশী শ্রীলংকায় মালদ্বীপ দূতাবাসে ভোট দেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী শাহিদা সাঈদ। তিনি বলেছেন, তিনি এমন একজন নেতাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান, যিনি বর্তমান সব ইস্যুতে কাজ করতে পারবেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওদিকে মালদ্বীপে ভারতের সামরিক ঘাঁটি আছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের হুমকি সৃষ্টি করেছে ভারত। কলম্বোতে ভোট দেয়ার সময় একজন স্কুল শিক্ষক ইসাক নুহান বলেন, আমি বিশ্বাস করতে চাই না যে, অন্য কোনো দেশ আমার দেশে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করুক।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আজিম জহির বলেছেন, নয়া দিল্লির সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখছেন না প্রেসিডেন্ট সোলি। এক্ষেত্রে ‘ভারত তাড়াও’ প্রচারণা মুইজের দলের পালে হাওয়া লাগিয়েছে।
Posted ১১:৫৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Chy