কক্সবাংলা ডটকম(২৯ নভেম্বর) :: রানী তিয়ার মমিটি ১৮৯৮ সালে ভ্যালি অব দ্য কিংসের দ্বিতীয় আমেনহোতেপের সমাধিতে আবিষ্কৃত হয়।
তবে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০১০ সালে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একজন ডিজিটাল শিল্পী মিশরীয় রাজা তুতেনখামেনের প্রপিতামহী রানী তিয়ের ৩ হাজার ৪০০ বছরের পুরানো মমিকৃত দেহাবশেষ ব্যবহার করে তার মুখ পুনঃউৎপাদন করেছেন।
শিল্পী প্রথমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সংরক্ষিত হাড়ের গঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে ছবিতে তার চোখ, নাক ও মুখের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো তৈরি করেছেন।
তারপরে তার চুল, ভ্রু, চোখের পাপড়ি এবং এমনকি ত্বকের দাগও যোগ করেছেন, যাতে মৃতদেহটির মুখ যেন জীবন্ত মনে হয়।
তার কাজের চূড়ান্ত ফলাফল হয়েছে দেখার মতো। ছবিতে ফুটে উঠেছে কালো, ঢেউ খেলানো চুল, বড় বাদামী চোখ, একটি হার্ট শেইপ মুখের এক কৃষ্ণকায় রূপসী নারী মূর্তি।
রানী তিয়া ছিলেন ১৩৯০–১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত রাজত্ব করা মিশরীয় ফারাও অ্যামেনহোতেপ তৃতীয়ের মহারাণী। তিনি ১৩৯৮ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৩৩৮ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত বেঁচেছিলেন।
তিনি ছিলেন আমেনহোতেপ চতুর্থের মা। আমেনহোতেপ আখেনাতেন নামেও পরিচিত ছিলেন। ছেলে আখেনাতেন সিংহাসনে বসার পরও মিশরীয় রাজবংশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন রানী তিয়া।
আখেনাতেন খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩২ থেকে ১৩২৩ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করা বালক রাজা তুতেনখামেন বা রাজা তুতের বাবা।
রাজা তুত মাত্র আট বা নয় বছর বয়সে ফারাও হন। তিনি আজও আলোচনায়, কারণ তার সমাধি হলো এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে অক্ষত মিশরীয় ফারাও’র সমাধি।
রানী তিয়ার মমিটি ১৮৯৮ সালে ভ্যালি অব দ্য কিংসের দ্বিতীয় আমেনহোতেপের সমাধিতে আবিষ্কৃত হয়। তবে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ২০১০ সালে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ফটোশপ সার্জন বা একজন ডিজিটাল শিল্পী রানী তিয়ের দেহাবশেষের একটি ছবি ব্যবহার করে তার চেহারা কেমন হতে পারে তা প্রকাশ করেছেন।
রানী তিয়া ছিলেন ইউয়া নামে এক মিশরীয় রথচালক বাহিনীর কমান্ডার এবং থুয়া নামে এক মিশরীয় নাররি কন্যা। তার শরীরে রাজ রক্ত ছিল না, কিন্তু তবুও তার স্বামী তাকে তার অন্যান্য স্ত্রীর মধ্যে প্রাধান্য দিতেন এবং প্রায়ই তাকে রাজকীয় কাজকর্মে সম্পৃক্ত করতেন। এমনকি সরকারি নথিপত্রে রাজার সঙ্গে তার নামও ছিল।
১৮৯৮ সালে ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক ভিক্টর লরেট রানী তিয়ের দেহাবশেষ আবিষ্কার করেছিলেন। তবে দেহাবশেষটি কার তা বুঝতে বিশেষজ্ঞদের আরও এক শতাব্দী সময় লেগে যায়।
লরেট ভ্যালি অব কিংসে দ্বিতীয় আমেনহোতেপের সমাধির ভিতরে [যা ১৮, ১৯ এবং ২০তম রাজবংশের প্রায় সকল ফারাওদের সমাধিস্থল] সমাধিস্থ অনেকগুলো মমির মধ্যে দুজন নারীর মমি আবিষ্কার করেছিলেন।
শনাক্ত হওয়ার আগে, মমি দুটি ‘দ্য এল্ডার লেডি’ এবং ‘দ্য ইয়াংগার লেডি’ নামে পরিচিত ছিল।
প্রাথমিকভাবে, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করতেন যে ‘দ্য এল্ডার লেডি’ রানী নেফারতিতি হতে পারেন, যিনি ১৮তম রাজবংশে ফারাও আখেনাতেনের (যিনি রানী তিয়ার ছেলে) মহারাণী হিসেবে রাজত্ব করেছিলেন।
কিন্তু একটা ছোট্ট কফিনে পাওয়া চুলের গোছা, যেখানে রানি তিয়ের নামের একটি শিলালিপি লেখা ছিল, ‘দ্য এল্ডার লেডি’র চুলের সঙ্গে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।
২০১০ সালে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায়, দেহাবশেষগুলো ইউয়া ও থুয়ার মেয়ে রানি তিয়ের।
রানী তিয়া ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে মারা যান।
বিজ্ঞানীরা রাজা তুত এবং তার বাবা ফারাও আখেনাতেনের মুখও পুনঃউৎপাদন করেছেন। দেখা যায় তাদের চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলোয় অনেক মিল রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা প্রায় ১০০ বছর আগে ভ্যালি অব দ্য কিংসে আবিষ্কৃত একটি মাথার খুলি ব্যবহার করে ১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৩৩৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করা ফারাও আখেনাতেনের চেহারা পুনঃউৎপাদন করেছিলেন।
ডিজিটাল চিত্রে এক যুবককে দেখানো হয়েছে, যার বয়স ২০ এর দশকের শুরুতে। তার লম্বা চোয়াল এবং তীক্ষ্ণ চোখ এবং একটি সূচালো নাক, রাজা তুতের নাকের সঙ্গে তার নাকের মিল রয়েছে।
আখেনাতেনের ডিজিটাল চিত্রটি তৈরি করেছে সিসিলির ফরেনসিক অ্যানথ্রোপোলজি, প্যালিওপ্যাথলজি, এবং বায়োআর্কিওলজি রিসার্চ সেন্টার (এফএপিএবি)। তারা ১৯০৭ সালে আবিষ্কৃত একটি মমির মাথার খুলি ব্যবহার করেছে।
আখেনাতেন তার এক বোনকে বিয়ে করেছিলেন, এই দম্পতির ঘরে ছেলে তুতেনখামেন জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু এই অজাচার সম্পর্কের ফলস্বরূপ, তুতেনখামেন অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে জন্মেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি তার অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
তার চেহারা ও শরীরের পুনঃউৎপাদনের ছবি দেখেই তার শারিরীক জটিলতার আভাস পাওয়া যায়।
রাজা তুতের সবচেয়ে বিশদ পরীক্ষা অনুযায়ী, তার দাঁত ছিল বাইরে বেরিয়ে আসা, এক পা ছিল বিকৃত (ক্লাব ফুট), এবং শরীরের আকৃতি ছিল মেয়েলি, বিশেষত তার নিতম্ব ছিল অস্বাভাবিক প্রশস্ত।
গবেষকরা জানান, এছাড়া তুতেনখামেন চলাফেরা করার সময় লাঠি ব্যবহার করতেন।
তুতেনখামেনের পরিবারের জেনেটিক বিশ্লেষণের সঙ্গে মিলিয়ে ২ হাজারেরও বেশি কম্পিউটার স্ক্যানের মাধ্যমে একটি ‘ভার্চুয়াল অটপসি’ করা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে যে তার বাবা-মা ছিলেন ভাই-বোন।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এর ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে তিনি শারীরিক অক্ষমতায় ভুগেছিলেন এবং তার পারিবারিক ইতিহাসও তার অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
Posted ১২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta