কক্সবাংলা ডটকম(১৬ জানুয়ারি) :: মিয়ানমারের সরকার বলেছে, তারা সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে তারা রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহীদের ‘গুঁড়িয়ে দেয়’। বিদ্রোহীদের হামলায় ১৩ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর এই নির্দেশ দেয় সরকার।
জাতিসংঘ বলেছে যে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও মূলত বৌদ্ধ রাখাইনদের নিয়ে গড়ে ওঠা আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষে গত এক মাসে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সহিংসতায় বোঝা গেছে যে রাখাইন রাজ্যের জাতিগত বিভাজন কতটা জটিল। ২০১৭ সালে মুসলিম রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে ব্যাপক দমন অভিযান চালিয়েছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ফলে ৭৩০,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এটা নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নতুন প্রশাসনের সামনে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হিসেবে দেখা দেয়।
রত্ন খনি থেকে স্নাইপার রাইফেল
আরাকান আর্মি বলেছে, প্রায় এক দশক আগে রাখাইনে নিজেদের স্বায়ত্বশাসনের দাবি নিয়ে এই সংগঠনটি গড়ে ওঠে। তাদের দাবি রাখাইন অঞ্চলকে শুষে খাচ্ছে বহু দূরে অবস্থানরত সরকার।
আরাকান আর্মির শুরুর দিকের রিক্রুটদের অনেকেই জাতিগত বৌদ্ধ যারা খনিতে রত্ন আহরণের জন্য এ অঞ্চলে এসেছিলেন।
তাদেরকে চীনের কাছাকাছি মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যে এলাকাটা মূলত কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির (কেআইএ) নিয়ন্ত্রণে। যে জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলো এখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে, সেগুলোর মধ্য অন্যতম কেআইএ। ২০১৬ সাল থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কেআইএ’র লড়াইয়ে আরাকান আর্মিও অংশ নিয়ে আসছে।
ফাঁস হওয়া অনলাইন ভিডিওতে দেখা গেছে যে, তরুণ যুবক যুবতী বিদ্রোহীরা মার্চ করছে, কুস্তি করছে এবং আধুনিক অ্যাসল্ট ও স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি প্র্যাকটিস করছে। ভিডিওগুলোতে প্রায়ই তাদের ক্যারিশম্যাটিক প্রধান টুয়ান ম্রাট নাইংকেও দেখা গেছে।
বিদ্রোহীদের অনুপ্রবেশ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক বাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ হলেও গত কয়েক মাসে অন্তত দুই ডজন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আরাকান আর্মি বলছে, তারা রাখাইনে সামরিক আগ্রাসনের জবাব দিচ্ছে, যেখানে বেসামরিক মানুষদেরও টার্গেট করা হয়েছিল।
আরাকান আর্মি প্রধান টুয়ান ম্রাত নাইং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইরাবতীকে গত সপ্তাহে বলেছেন, “রাখাইন রাজ্যের নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকতে হবে। সশস্ত্র গ্রুপ থাকার অর্থহলো রাখাইন জাতির বেঁচে থাকা”।
সরকার এই গ্রুপকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে যে আগামী বছরগুলোতে এই এলাকাকে তারা অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাচিন বিদ্রোহীদের দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরাকান আর্মি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশান আর্মির চেয়ে অনেক বড় ধরনের সামরিক হুমকি তৈরি করবে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশান আর্মির হামলার প্রেক্ষিতেই ২০১৭ সালের সঙ্কটের সূচনা হয়েছিল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি ডেভিস বলেছেন, আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের দেখা যাচ্ছে খুবই ভালো প্রশিক্ষিত ও সাধারণত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। সাম্প্রতিক সঙ্ঘাতকে তিনি সমস্যার সামান্য একটা অংশ হিসেবে মন্তব্য করেন।
Posted ৯:৪১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Chy