শহিদুল ইসলাম,উখিয়া(১৫ নভেম্বর) :: সারা বিশ্বের অলোচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রথম দফা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেে রোহিঙ্গাদের আপত্তির কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
উল্টো বৃহস্পতিবার দুপুরে ককসবাজারে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং পুটিবনিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী বিক্ষোভ করেছন। উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পের কোন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। তাঁদের মধ্যে চাপা খুব বিরাজ করছে।
স্হানীয় অাইন শৃঙ্গলা বাহিনীর ব্যাপক কড়াকড়ি ছিল। টেকনাফ থেকে ২৯৮ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া কথা ছিল। উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৫০ পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গা।
উখিয়ার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্প ও টেকনাফের উনচিপ্রাং পয়েন্ট একেবারেই জনমানব শূন্য।
উখিয়ার জামতলী ক্যাম্পের বি ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, মিয়ানমারের ফেরত যেতে রাজি না। কারন তাদের ন্যায অধিকার ফিরে দিতে হবে। সেখানে গেলে অাবারো নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে।একই ক্যাম্পের এ ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ ফারুক বলেন জোর করলে কেউ যাবে না। তাদের ছয়টি দাবি দাও মেনে নিলে স্বদেশে ফিরে যাবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অাপাতত স্হগিত করা হয়।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার লোকজন বলেছেন,তারা কেউই মিয়ানমারে ফিরতে চায় না। এরপরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশের কর্মকর্তারাই প্রস্তুত ছিলেন।উখিয়ার সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যছড়ি ঘুমধুম সীমান্তের ট্রানজিট ক্যাম্প দিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে প্রত্যাবাসন শুরু করারও কথা ছিল।
রোহিঙ্গাদের দাবি, রাখাইনে ফেলে আসা বাড়িঘর ফিরে না পেলে এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত না হলে সেখানে ফিরে যাবে না তারা। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার অফিসের মুখপাত্র ফিরাস আল খাতেব বলেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সঙ্গে। রাখাইনে পরিস্থিতি এখনো রোহিঙ্গাদের অনুকূলে নয়। এই পরিস্থিতিতে রাখাইনে ফিরে যেতে নিরাপদ মনে করছে না রোহিঙ্গারা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী রবিন বলেন,জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করি। এখনো পযন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাজে নিয়োজিত সরকারের অতিরিক্ত সচিব শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা উনচিপ্রাং ক্যাম্পে গিয়েছিলাম এবং দুপুর দুইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি কোনও রোহিঙ্গা ফেরত যেতে চায় কিনা জানতে। কিন্তু কেউ ফেরত যেতে চায়নি। এরপর বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময় বাড়ানোর পরেও কেউ রাজি হয়নি।’
প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কখন শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাভিত্তিক হতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তাদের ওপর নির্ভর করছে এবং আমরা তাদের ওপর কোনও জোর করবো না।’তবে এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সংকট সমাধানে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন,জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা প্রথম দলের ৪৮৫টি পরিবারের মধ্যে প্রায় ৫০টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নেয় গত মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) ও বুধবার (১৪ নভেম্বর)। কিন্তু তাতে একটি পরিবারও যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ‘আরও ১৭টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এবং আমরা এর রিপোর্ট এখনও পাইনি। ’শরণার্থী ৪৮৫টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
আশা করছি,তাদের দেশে নিরাপদে ফিরে যেতে রোহিঙ্গারা সম্মত হবে। ইউএনএইচসিআরও এ ব্যাপারে কাজ করছে।
গেল বছরের ২৩ নভেম্বর স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছিল। এ লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়।কমিটির প্রথম সভায় প্রত্যাবাসনের জন্য আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গার বিষয়ে মিয়ানমার ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু মিয়ানমারে নিপীড়নমূলক ও বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি বিরাজ করায় রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরতে রাজি হচ্ছেন না।
Posted ৫:৫৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy