কক্সবাংলা ডটকম(২৫ জানুয়ারি) ::রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে সেফ জোন সৃষ্টির বিষয়ে বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা বিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটররা।
কংগ্রেসে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে একই সঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যাতে স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও সম্মানজনক হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতার যেসব খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সত্যিকার অবস্থা তার চেয়ে ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। খবর রয়টার্স ও টাইম।
ইন্দোনেশিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জেমস ম্যাটিস বলেন, সিএনএন অথবা বিবিসি রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের যত খবর তুলে ধরতে পেরেছে, সেখানকার পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক খারাপ। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ সংকট নিরসনে কূটনৈতিক অঙ্গনে জোরালো প্রয়াস চালাচ্ছে এবং মানবিক সহায়তা হিসেবেও প্রচুর অর্থ জোগান দিচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা সম্পর্কে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য কার্যত মিয়ানমার সরকারের দীর্ঘদিনের দাবিকে আরেক দফা ভিত্তিহীন প্রমাণ করল। রোহিঙ্গা সংকটে মিয়ানমার বহুবার সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করেছে।
সেদেশের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেছেন, সংবাদমাধ্যমে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি অহেতুক বড় হয়ে উঠেছে।
মার্কিন সিনেটররা রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি প্রস্তাবে আলোকপাত করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে পাঁচ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারে জাতিসংঘের অধীনে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় দলের সিনেটররা জাতিসংঘের প্রতি ওই প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিনেটর জেফ মার্কলে, টড ইয়ুং, টিম কেইন ও জন ম্যাককেইন মঙ্গলবার প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। ওহাইওর সিনেটর মার্কলে কংগ্রেসের তথ্যানুসন্ধানী দলের নেতা হিসেবে নভেম্বরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেন।
সিনেটে প্রস্তাব উত্থাপনকালে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা আমাদের অনাগত প্রজন্মগুলোকে তাড়া করবে। বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের কাছে আমি ধর্ষণ ও হত্যার পদ্ধতিগত অভিযানের কথা শুনেছি। সহিংস জাতিগত নিধনের পর আমাদের অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের যেকোনো প্রত্যাবাসন স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও সম্মানজনক হয়।
সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক সিনেট কমিটির প্রধান জন ম্যাককেইন এ সময় বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা নিয়ে এগোলেও রোহিঙ্গাদের অনেকের বিশ্বাস, দেশে ফিরে তাদের আরো বেশি সহিংসতার শিকার হতে হবে।
দেশে ফেরার বিষয়টি নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ হবে— এ মর্মে আশ্বস্ত হওয়ার অধিকার বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর রয়েছে। এর চেয়ে কম কিছু মেনে নেয়া যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত নয়।
সিনেটর টড ইয়ুং বলেন, নিপীড়নের জন্য বার্মা সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমি কংগ্রেসে দলনিরপেক্ষ উদ্যোগে নেতৃত্ব দিতে চাই।
সিনেটর টিম কেইন বলেছেন, বর্মি সেনাবাহিনীর অব্যাহত নির্যাতন ও জাতিগত নিধন বন্ধ হতে হবে। নির্যাতনে দায়ীদের বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্বের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র হিদার নয়ার্ট এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে মনে করি, প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় ভালো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার বিষয়টি শুধু নিরাপদ হলেই হবে না, হতে হবে তাদের ইচ্ছার ভিত্তিতে, সম্মানজনকভাবে। নিরাপদ মনে না করলে কাউকে জোর করে পাঠানো যাবে না।
এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনে বিলম্বের জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করেছে।
সেদেশের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কিয়াও তিন বলেছেন, আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কাউকে পাঠানো হয়নি। নিজেদের প্রস্তুতি দেখাতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একদল সাংবাদিককে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
স্টেট কাউন্সেলর সু চির কার্যালয়ের মুখপাত্র জ. তেই বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে নিজেদের অংশ মিয়ানমার সরকার পূরণ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটা অবশ্যই জানাতে হবে, কেন তারা প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করেছে।
এ বিষয়ে মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাট সদস্য এডওয়ার্ড জে. মার্কেই বলেছেন, প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করার অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। কারণ জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের ধারণাটি ভালো না। নিজেদের গ্রামে ফিরতে রোহিঙ্গাদের অবশ্যই নিরাপদ বোধ করতে হবে। সিনেটর মার্কেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মঙ্গলবার উত্থাপিত প্রস্তাবটিতে স্বাক্ষর করেছেন।
প্রস্তাবের পক্ষে অন্য সিনেটরদের মধ্যে আরো রয়েছেন ডায়ান ফিনস্টাইন, টম টিলিস, ডিক ডারবিন, মার্কো রুবিও, ক্রিস ভ্যান হলেন, রন ওয়াইডেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন, টিনা স্মিথ, শেরড ব্রাউন ও ক্রিস কুনস।
Posted ৮:০৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy