কক্সবাংলা ডটকম(২৬ সেপ্টেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি এখন মুখোমুখি অবস্থানে।
২৯ সেপ্টেম্ব^র শনিবার রাজধানীতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমাবেশের দিন ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০ দলীয় জোটের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের বৃহস্পতিবারের জনসভার তারিখ পরিবর্তন করে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। আর ১৪ দল সমাবেশ করবে মহানগর নাট্যমঞ্চে। দুই দলের পক্ষ থেকেই ওইদিন বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণায় রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত।
১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ায় পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে গড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষক মহল। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নড়েচড়ে বসেছে। নিরাপত্তা ছক সাজানোর কাজ করছেন পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সবকটি জোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকেও সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে।
১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় বলেন, ‘চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখব, কারা মাঠে নামবে আর কে নামবে না? আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল আমাদের, ইনশাল্লাহ আগামীতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।
জোটের নেতাকর্মীদের যে কোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন, যেন ওই অপশক্তি (বিএনপি) মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে ও রাস্তায় প্রতিহত করবেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম আরো বলেন, আগামী একটা মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আপনারা সজাগ থাকবেন। কোনো চক্রান্ত-নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা প্রতিহত করব।
২৯ সেপ্টেম্ব^রের ১৪ দলের সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক বলেন, আপনারা ১৪ দলের কর্মসূচিতে আসবেন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা বক্তব্য রাখবেন। ঢাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আপনারা আপনাদের এমপিকে নিয়ে ঘরে ঘওে পৌঁছে যান।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক মঙ্গলবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপি-জামায়াতের অতীতের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেছেন, ওরা গণতন্ত্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, ধর্মের শত্রু, কৃষক ও শ্রমিকের শত্রু। তাই আগামী নির্বাচনে কোনো অশুভ শক্তি বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার নামে নৈরাজ্য করলে তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এমনকি তারা কোনো অরাজকতা করলে, গোলযোগ করলে হাত-পা ভেঙে দেবেন।
এদিকে বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২৭ সেপ্টেম্ব^রের পরিবর্তে আগামী ২৯ সেপ্টেম্ব^র বেলা ২টা থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জনসভা সফল করতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কাণ্ডজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন। ‘দেশজুড়ে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে’। দম্ভবলে সবার মুখ বন্ধ রাখতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাস করেছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু স্বাধীন সাংবাদিকতার পথই রুদ্ধ করেনি, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে সাংবাদিক সমাজ।
অন্যদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ১ অক্টোবর থেকে মাঠে নামতে হবে। এবার আর কাউকে খালি মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না। সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে ১ অক্টোবর থেকে।
অবশ্য এইদিন থেকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোও সরকার পতন আন্দোলনে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সংঘাতের আশঙ্কায় নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে।
Posted ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Chy