শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

মৃত সন্তান প্রসবে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

শনিবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৫
74 ভিউ
মৃত সন্তান প্রসবে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

কক্সবাংলা ডটকম(৪ এপ্রিল) :: বাংলাদেশে মৃত সন্তান প্রসবের হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সম্প্রতি ‘ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশনের’ (ইউএন আইজিএমই) প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ৬৩ হাজারের বেশি মৃত শিশু ভূমিষ্ট হচ্ছে। এর মানে বছরে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে প্রায় ২ দশমিক ৪৪ শতাংশই মৃত জন্ম নিচ্ছে। মৃত সন্তান প্রসবের এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।

ইউএন আইজিএমইয়ের আরেকটি প্রতিবেদন বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে এক লাখের বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জন্মের পর থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মারা গেছে এসব শিশু, যাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে ২৮ দিন বয়সের আগে।

১৯৯০ সালের পর থেকে শিশুমৃত্যু হার হ্রাসে অগ্রগতি অর্জন করলেও বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে মৃত সন্তান প্রসবের হার সর্বোচ্চ বলে চলতি বছরে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

মা ও নবজাতক শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন কঠিন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৮ হাজার নবজাতককের প্রাণ বাঁচাতে হবে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন বলেছেন, প্রতিরোধযোগ্য কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখের বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। অপরিণত জন্ম, সন্তান প্রসবকালে জটিলতা, সেপসিস ও নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণের কারণে এসব মৃত্যু ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।

বেঁচে থাকা ও একটি উন্নত জীবন পাওয়া প্রতিটি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। অকালে কিংবা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই যে শিশুগুলো প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের এই মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ফারুক আদ্রিয়ান। শিশু ও মায়ের প্রাণ বাঁচাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ফারুক বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী ও ধাত্রীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাদের সঠিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারলে প্রতিটি নবজাতক নিরাপদ হাতে জন্মগ্রহণ করতে পারবে বলে মত দেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আহমেদ জামশেদ মোহামেদ বলেন, ‘বিগত কয়েক  দশকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তা সত্ত্বেও  সময়মতো মানসম্মত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়ে গেছে, এটি অবশ্যই দুঃখজনক।’

তিনি বলেন, ‘গর্ভবতী মায়েদের প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর পরিচর্যায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করার মাধ্যমে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব।’

প্রতিবেদনে নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের কারণ হিসেবে ৩০ শতাংশ শিশুর ঘরে জন্ম, আকারে ছোট ও অসুস্থ নবজাতকের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ না থাকার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া দক্ষ সেবাদাতা ও ধাত্রীর অভাব, উপজেলা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক মানসম্পন্ন সেবার ঘাটতির বিষয়গুলোকেও মৃত শিশু ও নবজাতকের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে।

আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, অসুস্থ ও কম ওজনের নবজাতকদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসার অভাব। বাংলাদেশ গ্রামীণ এলাকায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের ঘাটতি থাকায় নবজাতকরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয় বলে উঠে এসেছে ইউএন আইজিএমইয়ের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক গর্ভবতী নারীই বাড়ির কাছে প্রসবের জন্য দক্ষ কোনো সেবাদাতা পান না, যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন সেবার ঘাটতি ও এ সংক্রান্ত জটিলতাগুলো প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের হাতে মাত্র পাঁচ বছর বাকি থাকায় বিশেষজ্ঞরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে দক্ষ ধাত্রীসহ প্রশিক্ষিত পেশাদারদের তত্ত্বাবধায়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান জন্মদানের হার বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে নবজাতক পরিচর্যা ইউনিট বাড়ানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য আরও বেশি সংখ্যক প্রশিক্ষিত নার্স ও ধাত্রী প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ড. জামশেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় স্থায়ী বিনিয়োগ করা উচিত সরকারের। একই সঙ্গে মা ও নবজাতকের সেবায় বিভিন্ন দেশে যে ধরনের সেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে তা মেনে চলার মাধ্যমে দেশের এই মর্মান্তিক ক্ষতি প্রশমন সম্ভব।’ এতে প্রতিটি শিশুর জন্য একটি সুস্থ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।

মা ও শিশুর জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় জরুরি সংস্কারে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে ইউএন আইজিএমইয়ের প্রতিবেদনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

74 ভিউ

Posted ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৫ এপ্রিল ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com