কক্সবাংলা ডটকম(২৬ আগস্ট) :: লিওনেল মেসি বলে দিয়েছেন, ২০ বছরের অধ্যায় শেষ করে তিনি বার্সেলোনা ছেড়ে যাবেন। তার মন যদি সত্যিই ন্যু ক্যাম্প থেকে উঠে যায়, তবে প্রশ্ন হলো তার পরের গন্তব্য কোথায়?
মেসি সব সময়ই চেয়েছেন ন্যু ক্যাম্পে এক ‘চ্যাম্পিয়ন প্রজেক্ট’ থাকবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার মনের ইচ্ছাটা ক্লাব পূরণ করেনি। সর্বশেষ মৌসুমে তার দল শিরোপা জিততেই শুধু ব্যর্থ হয়নি, বরং চরম লজ্জা আর ভরাডুবি ও বিশৃঙ্খলায় মৌসুম শেষ হয় কাতালানদের।
টানা তিন মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লজ্জাজনক বিদায়শেষে এবার ক্লাবকে মেসি দলবদলের ‘অপ্রত্যাশিত’ অনুরোধ করে বসেছেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার ফুটবল বিশ্বে তোলপাড়। এরপরই ইউরোপব্যাপী শীর্ষ ক্লাবগুলোর মধ্যে ঘণ্টাধ্বনি বেজে যায়।
আর্জেন্টিনায় শৈশবের ক্লাব নিউয়েলস ওল্ড বয়েজ, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে প্রকল্প-ভিত্তিক ক্লাব কিংবা ইউরোপের কোনো উচ্চাভিলাষী দলে যোগ দিয়ে রূপকথার গল্প লিখবেন কি মেসি? যেমনটি করেছিলেন তার স্বদেশী ডিয়েগো ম্যারাডোনা ন্যাপোলিতে যোগ দিয়ে।
কিন্তু সম্ভবত এটি ঘটছে না। এর পরিবর্তে, মেসি বরং শিরোপা জেতার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত কোনো ক্লাবেই যেতে পারেন। ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়কে দলে পেতে রীতিমতো লড়াইয়ে নামবে বহু ক্লাব। যদিও করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্বে তাকে বিশাল অর্থে কেনা ও রাখার সামর্থ্যই বা কয় দলের আছে? এবং তখনই হয়তো তালিকাটা সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবে।
সদ্যই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাজয়ী বায়ার্ন মিউনিখ ইউরোপের অন্যতম সেরা দল। কিন্তু তারা সম্ভবত ৩৩ বছর মেসিকে কিনতে অনাগ্রহ দেখাবে। কারণটা সম্ভবত আর্থিক। বছরে প্রায় ৬ কোটি ইউরো পারিশ্রমিক দিতে হবে তাকে, আর ফি লাগতে পারে ২০ কোটির মতো! বায়ার্নের মতো ‘মিতব্যয়ী’ ক্লাব কোনোভাবেই এ পথে হাঁটবে না।
একই কথা সত্যি লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লোপের জন্যও, আর জুভেন্টাস ২০১৮ সালে ১০০ মিলিয়ন ইউরোয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে কেনার এবার মেসিকে তুরিনে আনার বিলাসিতা দেখাতে যাবে না।
সুযোগ পেলেই মেসিকে লুফে নেবে রিয়াল মাদ্রিদ। অতীতেও তারা এই চেষ্টা করেছে। যদিও লিওনেল মেসি আজীবন খেলে আসা বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবটিতে কিছুতেই নাম লেখাতে চাইবেন না। এতে তার সুনাম আর উত্তরাধিকার বিনষ্টের হুমকি থাকবে।
এখন বাকি থাকল ধনী ক্লাবগুলো। কিন্তু ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইতিহাস কিংবা ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের চেলসি কি রাজি করাতে পারবে মেসিকে? গত কয়েক মৌসুমে এ দুটি ক্লাবের কেউই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার রেসে ছিল না, চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ফেভারিটের তালিকায় জায়গা পায়নি।
যে দুটি ক্লাব মেসিকে কেনার ও খুশি রাখতে সমর্থ তারা হলো ম্যানচেস্টার সিটি ও প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। এ তালিকায় তিনে উঠে আসছে ইন্টার মিলান। এ রেসে সিটি বেশ ফেভারিট। যদিও মেসিকে পেতে তারা সতর্কভাবে এগোবে। কোচ পেপ গার্দিওলা, ক্রীড়া পরিচালক টিসিকি বেগিরিস্তাইন ও প্রধান নির্বাহী ফেরান সোরিয়ানোরা সবাই ছিলেন বার্সেলোনায়, তাই কাতালান ক্লাবটির প্রতি বেশ সম্মানও দেখাবেন তারা। আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে তারা ছিনিয়ে নিতে চাইবে না। তবে শান্তিপূর্ণভাবে পাওয়া গেলে মুহূর্তেই সুযোগটি লুফে নেবে সিটিজেনরা।
মেসি ইতিহাদে নাম লেখালে সিটির ব্র্যান্ডটি উঠে যাবে অনন্য এক উচ্চতায় এবং ক্লাবটির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নও পাবে নতুন মাত্রা। এমনটাই তো চান সিটির মালিক শেখ মনসুর আল নাহিয়ান।
নেইমারকে ২২২ মিলিয়ন ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোয় কিনেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এখনো অধরাই পিএসজির কাছে। ২৩ আগস্ট ফাইনালে তারা হেরে যায় বায়ার্নের কাছে। চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফি আশাবাদী, শিগগিরই তার ক্লাব ইউরোপিয়ান মুকুট জিতে নেবে। আর্জেন্টাইন গ্রেট যদি এই প্রকল্পে নাম লেখান তবে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পে ফ্রন্ট কাঁপন ধরাবে যেকোনো রক্ষণে। পিএসজির স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হবে।
উচ্চারিত হচ্ছে ইন্টারের নামও। গুঞ্জন রয়েছে, ইন্টারের অফিসের পাশেই বাড়ি কিনেছেন নেইমারের বাবা হোর্হে মেন্দেস। মেসির পরিবারের সাথে অবশ্য আগে থেকেই ঘনিষ্ঠতা ইন্টার কর্মকর্তাদের। কোচ আন্তোনিও কন্তে আর উচ্চাভিলাষী চীনা মালিক মেসিকে নিয়ে ইউরোপ শাসনের স্বপ্ন দেখছেন।
মেসির বার্সেলোনায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। চাপে থাকা ক্লাব প্রেসিডেন্ট মারিয়া হোসেপ বার্তোমেউ পদত্যাগ করলে মেসি মন পাল্টাতেও পারেন। ন্যু ক্যাম্পের সামনে মেসির সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন মঙ্গলবার থেকেই। মেসিকে ধরে রাখার চাপও তাই বাড়ছে। যদিও এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগের কথা এখনো ভাবছেন না বার্তোমেউ। নতুন ক্রীড়া পরিচালক র্যামন প্লেনেস বলেছেন, বার্সেলোনা ও মেসির সম্পর্ক অব্যাহত রাখার চেষ্টাই তারা করে যাচ্ছেন। আজ তিনি বলেন, ‘যা ঘটেছে তা তো ঘটেই গেছে, এখন আমাদের পরিকল্পনা হলো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়টিকে ঘিরেই একটা দল গঠন করা। ইতিহাসের সেরা ও বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের নেতৃত্বে আমরা আবারো একটি উইনিং দল বানাবো।’ যদিও হয়তো খুব দেরি করে ফেলেছেন তারা।
মেসি বার্সেলোনা ছাড়তে চেয়েছেন। বোর্ডকে অনুরোধপত্র দিয়েছেন রিলিজ ক্লজ থেকে মুক্ত করে দিতে। কারণ ৭০০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজের বিনিময়ে দলবদল অসম্ভব। তাছাড়া মেসির উচ্চ মূল্যের বেতন তো আছেই।
কিন্তু ২০০০-২০০৩ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা জোয়ান গাসপার্ট মার্কাকে বলেছেন, ‘মেসি বার্সা ছাড়তে পারবেন না। ক্লাব ছাড়তে হলে তাকে ২০২১ সালেই ছাড়তে হবে। আমি তার রিলিজ ক্লজের শর্ত দেখেছি। ওটা জুনে শেষ হয়ে গেছে। ওখান থেকে ফেরার আর কোন পথ নেই।’
তিনি বলেছেন, ‘আমি আগামী বছর ফ্রিতে তাকে ছেড়ে দেওয়াই ভালো মনে করবো। কিন্তু এখন ৭০০ মিলিয়নের এক পয়সা কমেও ছাড়া যাবে না। এখানে কর্তৃত্ব ক্লাবের। ফুটবলারের হাতে না। ক্লাব তাকে বেতন দিয়ে রেখেছে। তারপরও অর্থটা বড় নয়, চুক্তিটাই বড়।’
মেসিকে দলে নিতে এগিয়ে আছে ম্যানচেস্টার সিটি। সেখানে মেসির গুরু পেপ গার্দিওয়ালা আছেন। এছাড়া দৌড়ে আছে ইন্টার মিলান ও পিএসজি। নতুন করে মেসিকে দলে নিতে চেলসি এবং ম্যানইউ মাঠে নেমেছে বলেও খবর। এছাড়া মেসি তার শৈশবের ক্লাব ওল্ড বয়েজেও যেতে পারেন। তবে গাসপার্টের মতে, যেখানেই যাক সেটা আগামী মৌসুম শেষে।
তিনি বলেছেন, ‘মেসিকে আমি খুবই ভালোবাসি। তবে বার্সাকে বেশি ভালোবাসি। আগ্রহী ক্লাবকে তাই রিলিজ ক্লজ শোধ করতে দাও।’ তিনি জানান, লুইস ফিগো এবং রিভালদোর ব্যাপারে তিনি সেটাই করেছিলেন। রিলিজ ক্লজের ব্যাপারে ছাড় দেননি। কারণ তিনি বার্সাকে ভালোবাসেন। মেসিকে তার রিলিজ ক্লজের চেয়ে কম অর্থে ক্লাব ছাড়তে দিলে সেটা হবে বায়ার্নের বিপক্ষে ৮-২ গোলের হারের চেয়ে লজ্জার।
এএফপি ও বিবিসি অবলম্বনে
Posted ৪:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy