কক্সবাংলা ডটকম(১ নভেম্বর) :: আগামী ৩ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, সারা বিশ্বে এক ধরনের আগ্রহ এবং নানারকম জিজ্ঞাসা কাজ করছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের মার্কিন নির্বাচনের দিকে দৃষ্টিবদ্ধ রয়েছে গোটাবিশ্ব। মার্কিন নির্বাচনের পর বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য, অর্থনৈতিক যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি সহ বিভিন্ন বিষয় নির্ভর করছে বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এই নির্বাচনের ফলাফল গোটা মধ্যপ্রাচ্যেরই ভবিষৎ নয়, গোটা বিশ্বই নির্ভরশীল। বাংলাদেশও এই নির্বাচনের উত্তাপ থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশে এই নির্বাচনের কৌশলগত অবস্থান কি? কে জিতলে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে? তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে। একাধিক কূটনীতিকদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশ মার্কিন নির্বাচন নিয়ে নিস্পৃহ নয়। সরকার এবং বিরোধী দলসহ রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষণে রয়েছে, নির্বাচন নিয়ে নিজস্ব ভাবনা আছে।
বাংলাদেশ সরকার মার্কিন নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী, কিন্তু নির্বাচনে কোন পক্ষ-বিপক্ষের অবস্থানে নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন নির্বাচন নিঃসন্দেহে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু এই নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কাজ করবে।
তবে আসল ব্যাপার হলো, সরকারের মধ্যে এ নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি একটা নীরব পক্ষপাত পাওয়া যায়। এর কারণ একাধিক, গত মেয়াদে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ট্রাম্প নাক গলাননি। বাংলাদেশের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্কই অব্যহত ছিল। ডেমোক্রেটরা নির্বাচিত হলে, যেভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে নাক গলান। কিন্তু ট্রাম্প নাক গলাননি। বরং ট্রাম্পের মনোযোগ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অন্যান্য জায়গায়।
এটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক বিষয়। দ্বিতীয় কারণ হলো, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যে স্বাভাবিক স্থিতিশীল ভারসাম্য অবস্থান, সেটা ট্রাম্পের চার বছরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ এই ভারসাম্যর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায়। তৃতীয়তঃ ডেমোক্রেট দলের সঙ্গে সবসময় ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস ও বাংলাদেশের সুশীলদের একটা ভালো এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এই যোগাযোগের কারণেই ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনেক বেশি নাক গলায়। আর এ কারনেই বাংলাদেশ সরকার, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে ট্রাম্পের পক্ষে মনোভাব কাজ করে।
গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ট্রাম্পের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতিশীল এবং পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ছিল। কিন্তাতু তারা তা প্রকাশ করেনি। কারণ, সেই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন ছিলেন সরাসরি ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বন্ধু । ওই নির্বাচনে বিজয়ী হলে বাংলাদেশের ব্যাপারে তার নাক গলানো অনেক বেশি হতো বলে অনেকে মনে করেন। তবে সরকারের ট্রাম্পের প্রতি এক গোপন পক্ষপাত থাকলেও বিভিন্ন মহল বাংলাদেশের জো বাইডেনের পক্ষে রয়েছেন বলে কুটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যুতে ট্রাম্পের কৌশলকে পছন্দ করছেনা বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থী এবং উগ্রপন্থী রাজনৈতিক মৌলবাদি সংগঠনগুলো। এমনকি বিএনপিরও মনে করে যে ট্রাম্পের চেয়ে জো বাইডেন ভালো। বিএনপি`র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাম্পের উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং ইসরাইলপন্থী, ইহুদি পন্থী হিসেবে মনে করেন। এজন্যই তারা নির্বাচনে ট্রাম্পের ভরাডুবি চায়। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন যে, মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট কে হল বা না হল সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। কারণ মার্কিন যে নীতি, সে নীতিটি অপরিবর্তিত থাকে। যখনই কোন প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হলেই মৌলিক রীতির কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এবারের মার্কিন নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহ অনেক বেশি।
Posted ৯:৩৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০১ নভেম্বর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy