কক্সবাংলা ডটকম(১৫ জানুয়ারী) :: আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ রাজনৈতিক সংলাপ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আগ্রহের বিষয় থাকবে দেশটির ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে এ কৌশলগত পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির কিছু বিষয়ে অস্বস্তি রয়েছে বাংলাদেশের। এজন্য পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে আরো পর্যবেক্ষণ করতে চায় ঢাকা। সংলাপের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপে অংশ নিতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এম শহিদুল হক। ২২ জানুয়ারি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডেভিড হ্যালের সঙ্গে তার আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সাম্প্রতিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জ্বালানি সহযোগিতা, মানবাধিকার, সুশাসন, রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য, শ্রম ইস্যু, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে ১৪ জানুয়ারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি খাতেই যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহটি সবচেয়ে বেশি। তবে এর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি তাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। এটি নিয়ে বাংলাদেশের কিছুটা অস্বস্তি রয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রফতানি থেকে শুরু করে অন্যান্য খাতেও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম অংশীদার। ফলে তারা কোনো কর্মসূচি নিয়ে এলে তা নাকচ করা যায় না।
জানা গেছে, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে যোগ দিতে এরই মধ্যে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম বাংলাদেশ সফরকালে এ প্রস্তাব দেন। ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসূচিগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে চীনকে এক ধরনের অবরুদ্ধ করার প্রয়াস হিসেবে। বাংলাদেশের অস্বস্তি এখানেই। কারণ চীন বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু। এজন্যই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে এগোতে চাইছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সূত্রমতে, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ এ সমুদ্রপথে উপস্থিতি বাড়ানো। চীনকে অবরুদ্ধ করা নয়, বরং সমুদ্রে অবাধ চলাচল, নিরাপত্তা ও বাণিজ্য বাড়াতেই এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের। এ অঞ্চলে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার রয়েছে সিঙ্গাপুরে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজগুলোর তথ্য বিনিময় করা হয়, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। এরই আদলে যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরে এ সেন্টার খুলতে চায়। বাংলাদেশেরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা চায় দেশটি। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার হলো জ্বালানি সরবরাহ, বাণিজ্য উন্নয়ন ও মেরিটাইমের নিরাপত্তা সহযোগিতা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সংলাপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চড়াও হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। এর আগে ২ জানুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এ সময় তিনি ওয়াশিংটনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অস্বস্তি থাকলেও দেশটি বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে স্পষ্ট করেছে।
এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, ওয়াশিংটন এরই মধ্যে তাদের নির্বাচনী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। সেখানে তারা সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। নতুন সরকার গঠন হয়ে গেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব অংশীদারের সঙ্গে কথা বলবে বাংলাদেশ। এ নিয়ে সরকারের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র যে তদন্তের দাবি জানিয়েছে, সে বিষয়ে ইতিবাচক উত্তর দেবে বাংলাদেশ।
সূত্রমতে, বাংলাদেশের জ্বালানি খাত নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশটির বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি জিটুজিতে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আসবে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ। জ্বালানির পাশাপাশি অন্যান্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও সংলাপে আলোচনা হবে। এ সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, তবে অন্যান্য দেশের মতো তাদেরও অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগের বহুমুখীকরণ চায় বাংলাদেশ।
দ্বিপক্ষীয় সংলাপে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে কড়া প্রস্তাব উত্থাপনের অনুরোধ জানাবে বলে সংলাপের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় আমাদের সমর্থন দিয়েছে। ওই বৈঠকে আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি শক্ত রেজল্যুশন নেয়ার জন্য অনুরোধ করব। এছাড়া তারা যেন মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ থাকবে। সামনে দুই দেশের অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সে সংলাপের প্রাথমিক একটা আলোচনা ওয়াশিংটনের বৈঠকেই সেরে ফেলবে দুই দেশ।
Posted ২:৩০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Chy