বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রামুতে সুফল প্রকল্পে ৮৭২ হেক্টর বনায়নে কোটি টাকা লোপাট!

বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
29 ভিউ
রামুতে সুফল প্রকল্পে ৮৭২ হেক্টর বনায়নে কোটি টাকা লোপাট!

সোয়েব সাঈদ, রামু :: কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের সুফল প্রকল্পের অধিনে বিগত দুই অর্থ বছরে ৮৭২ হেক্টর নার্সারি ও বাগান সৃজনে রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।

বনায়নের জন্য নির্ধাধিত বনে অধিকাংশ স্থানে চারা গাছ না লাগিয়ে প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ওই রেঞ্জ কর্মকর্তা।

এমন অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে- উপজেলার জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের জোয়ারিয়ানালা বিটের আওতায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে ‘সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড (সুফল) প্রজেক্ট’ এর আওতায় সরকারের গৃহিত নতুন বনায়ন কর্মসুচীর অংশ হিসেবে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৫১০ হেক্টর এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৩৬২ হেক্টর বনায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো।

এরমধ্যে ২০২২-২০২৩ সনে জোয়ারিয়ানালা বিটে চলতি বছরে ৫১০ হেক্টর বাগান বরাদ্ধ হলেও রেঞ্জ কর্মকর্তা নিজের ক্ষমতার বলে বাগানে চারা না লাগিয়ে বরাদ্ধকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

উক্ত বাগান তিন ভাগে বিভক্ত করে বাগান এরিয়া নির্ধারণ করা হয়।

এরমধ্যে তিথিল্ল্যার ঘাট থেকে ধলির ছড়া বিটের সীমানা দিয়ে গোধাকাটার ঝিরি ও কালাসোনার ঘোনা পর্যন্ত ১৭০ হেক্টর বাগান মাপা হলেও তিথিল্ল্যার ঘাটে এলাকায় প্রায় ৫০ হেক্টর মত চারা লাগানো হয়।

অবশিষ্ট জায়গায় কোন প্রকার চারা লাগানো হয়নি। চারা লাগানো হয়নি এমনি বনের মধ্যে রয়েছে- ধলির ছড়ার সীমানা হতে বালুর উটুনি, গোধাকাটার ঝিরি, কালাসোনার ঘোনা, সুকনা ঝিরি।

দোয়ালির ঝিরি হইতে বাটনাতলী ও কলারঝিরি পর্যন্ত ১৪০ হেক্টর সীমানা নির্ধারণ করা হলেও দোয়ালির ঝিরি এলাকায় ৪০ হেক্টরের মত চারা লাগানো হয়েছে।

অবশিষ্ট বাটনতলী হইতে কলারঝিরি পর্যন্ত কোন বাগান সৃজন করা হয়নি।

জুমছড়ি এলাকার রাবার বাগানের সীমানা হইতে মুরিংঙ্গার ঝিরি পর্যন্ত ২০০ হেক্টর সীমানা নির্ধারণ করা হলেও তৎ মধ্যে রাবার বাগানের সীমানা দিয়ে প্রায় ৭০ হেক্টরের মত চারা লাগানো হলেও খালকাটা, ডানহাতের ঝিরি, বামহাতের ঝিরি, মুরিংঙ্গার ঝিরি পর্যন্ত বনাঞ্চলে কোন প্রকার বাগান সৃজন করা হয়নি।

সুফল প্রকল্পের উপকারভোগীরা জানান- বরাদ্ধকৃত ৫১০ হেক্টর বাগানের মধ্যে আনুমানিক ১৬০ হেক্টরের মত বাগান করা হলেও বাকী জায়গা শুধু সীমানা নির্ধানের জন্য ১০ ফিট ঘেরাও করে দুই লাইন চারা লাগানো হয়েছে। বাকী জায়াগাতে চারা লাগানো দুরের কথা জঙ্গলও পরিষ্কার করা হয়নি।

বিট অফিস থেকে উক্ত বাগান এলাকা দূরবর্তী হওয়ায় ক্ষমতার অপ-ব্যাবহার করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা বরাদ্ধকৃত বাগানের টাকা ও নার্সারির টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

যেটুকু বনায়ন হয়েছে তাদের আগাছা পরিস্কার করা হয়নি। সার, কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার না করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সুফল প্রকল্পের এ বাগান।

২০২৩-২০২৪ সনে ৩৬২ হেক্টর নার্সারি ও বনায়ন সৃজন প্রকল্পেও দেখা গেছে একই চিত্র। টিয়াটিল্লার ঘাট থেকে ধলিরছরা বিটের সীমানা হয়ে গুদাকাটার ঝিরি ২০-২১ সনের বাগানের সীমানা পর্যন্ত বাগান সৃজনের কথা থাকলেও এখানে নেই বাগানের অস্তিত্ব। কারণ অধিকাংশস্থানেই চারা রোপন হয়নি।

কোথাও কোথাও বাগানের সীমানা নির্ধারন করেই দুপাশে চারা রোপন করা হয়েছে। একটু ভিতরে গেলে দেখা যায় কোথাও জঙ্গল, কোথাও বিরান ভূমি।

সূত্রে জানা যায়, ই টেন্ডারের মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

বরাদ্দের ওই টাকায় ঠিকাদার কর্তৃক রামু উপজেলা জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জসহ আরও একাধিক রেঞ্জে নার্সারী ও বাগান সৃজনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, বীজ, বাশের খুটি, পচনশীল গোবর, অস্থায়ী শেড সামগ্রী, বাঁশ, রাসায়নিক সার, কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রের জন্য কীটনাশক, দোআঁশ মাটি, সুতলি, পলি ব্যাগ, হালকা ইস্পাতের তার, বাঁশের চাটাই, চারা বৃদ্ধির জন্য সানগ্রাস, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাসায়নিক সার ও আরসিসি সাইন বোর্ডের জন্য উপকরণ সামগ্রী সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে।

জোয়ারিয়ানালা বন বিটে নার্সারী উত্তোলন ও বৃক্ষরোপণ সরঞ্জামের হিসেব সীমাবদ্ধ ছিলো কাগজে-কলমে। ফলে পুরো প্রকল্পে হয়েছে রমরমা হরিলুট।

এ লুটপাটে কেবল রেঞ্জ কর্মকর্তা নয়, জড়িত থাকতে পারে বনবিভাগের আরও অনেক রাগব বোয়াল।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সুফল প্রকল্পের এসব বাগানে গাছ না থাকলেও দেখা গেছে সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডে বাগান সৃজনে চারার সংখ্যা ও গাছের প্রজাতির কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

আবার কোন জায়গায় বাগানের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া যে চারাগুলো লাগানো হয়েছে, অনেক গাছের চারা প্রথম বছরেই মারা গেছে। চারা রোপনের পরের বছর সার দেওয়ার কথা এখানে কোথাও দেওয়া হয়নি। সঠিক পরিচর্যার অভাবে মারা গেছে অধিকাংশ চারা।

কেবল সুফল প্রকল্প নয়, অর্থের বিনিময়ে বনাঞ্চলে অবৈধ বসতি স্থাপন, পাহাড় নিধন, বালি উত্তোলনসহ নানানভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে রেঞ্জ কর্মকর্তা কেএম কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জ কর্মকর্তা কেএম কবির উদ্দিন জোয়ারিয়ানালা বন বিটে সুফল প্রকল্পের অধিনে ২০২২-২০২৩ এবং ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৮৭২ হেক্টর বনায়ন করার কথা স্বীকার করলেও প্রকল্পের অন্য কোন তথ্য দিতে গড়িমসি করেন।

এমনকি তাঁর সাথে সরাসরি এবং মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি প্রকল্পের আর কোন তথ্য দেননি।

তিনি সুফল প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে স্বচ্ছতার সাথে বনায়ন করা হয়েছে বলে দাবি করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মারুপ হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু কল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

কেবল রামুতে নয়, দেশের বিভিন্নস্থানে সুফল প্রকল্পে এ ধরনের লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে মাঠপর্যায়ে পৌছায়নি নার্সারি ও বাগান সৃজনের সরঞ্জাম।

তাই পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রথম বছরেই মারা গেছে ৪০ শতাংশ চারা। দ্বিতীয় বছরে কম্পোস্ট সার দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পরিচর্যার অভাবে দ্বিতীয় বছরেও মারা গেছে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ চারা।

29 ভিউ

Posted ৫:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com