কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(৪ জানুয়ারি) :: রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বহন করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। সুতরাং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি।
গত শুক্রবার রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, তাদের দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবর্তনসহ ৭ দফা দাবি তুলেছে বাংলাদেশি নাগরিকদের একটি সংগঠন ‘অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি’। তাদের দাবি-দাওয়া যৌক্তিক।
রোহিঙ্গাদের কারণে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে খুন, অপহরণ ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ। তাদের এই অপরাধ সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় অপরাধীদের মাঝেও।
স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে বাড়তি নজরদারি করতে হচ্ছে। অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা বলয় জোরদার,
মিয়ানমারের রাখাইনে গৃহযুদ্ধের কারণে ২০২৪ সালে অনুপ্রবেশ করা লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে এফডিএমএন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে (বায়োমেট্রিক) তাদের পুশব্যাকের জন্য কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো,
উখিয়া ও টেকনাফে স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিসহ ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়দের প্রাধান্য (ন্যূনতম ৫০ শতাংশ) নিশ্চিত করা,
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাঁটাতারের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ বন্ধ,
ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের বাসাভাড়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরির নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আরআরআরসি প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা।
নানা কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। বাংলাদেশ এখনো রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছে। দীর্ঘ ৮ বছর পার হতে চললেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি।
উল্টো বিগত কয়েক মাসে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে গৃহযুদ্ধের কারণে নতুন করে লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফসহ পুরো জেলার মানুষের জীবনযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।
রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব। বিশ্বনেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। এর আগে চীন বারবার রোহিঙ্গা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়।
ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। এমনকি প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ, চীন এবং মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছিল।
এরপর থেকে এটি নিয়ে আর সাড়া নেই। নতুন করে আলোচনা শুরু হওয়া ইতিবাচক। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে।
খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চারটি কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াকে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে চলমান সংকটটির টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিতে হবে।
Posted ১:১৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta