কক্সবাংলা ডটকম(২৫ আগস্ট) :: মিয়ানমারের রাখাইনে রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে কক্সবাজার অভিমুখে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত যাত্রার ছয় বছর পূর্ণ হলো শুক্রবার ২৫ আগস্ট। ঢল নামা সেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে গত অর্ধ যুগে একের পর এক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।
কৌশলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার মতো অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। ডাকাতি, ইয়াবা ও অস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে পড়েছে তাদের অনেকে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি-খুনাখুনিও প্রায় নৈমিত্তিক ঘটনা।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া।
হেগের পিস প্যালেসে এ মামলার ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চললেও এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আদেশ দেন।
আমরা আশা করেছিলাম, আইসিজের আদেশ নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত।
তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার টেবিলে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঘুরেফিরে উঠলেও সেটির বাস্তবায়ন যেন এখনো সুদূর পরাহত।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সুচি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রæতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।
এর মধ্যে ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি সড়ে যাওয়ায় আরেক ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে রোহিঙ্গা শিবিরে। তথ্য বলছে, অন্য দেশের আশ্রয়ে থাকা বিশাল এ জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে ব্যাপকমাত্রায়; খাদ্য সহায়তা কমানোর পথে হাঁটতে হয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থাকেও।
অর্ধ যুগ পর এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে ‘গ্যাঁড়াকলের’ মধ্যে পড়ে থাকার কথা বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন; প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সবার সহযোগিতাও চাইলেন তিনি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়ারও উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ শুনছে, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। আমরা আশা করছি, দ্রুত এই সংকটের সমাধান হবে।
এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। প্রত্যাবাসন না হওয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে আঞ্চলিক সংকটও। বৈশ্বিক অস্থিরতা কিংবা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে পুঁজি করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কোনো সুযোগ নেই।
Posted ১:০৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৬ আগস্ট ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Chy