সংবাদ বিজ্ঞপ্তি(২৪ আগস্ট) :: আজ ২৫ আগস্ট। বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের তৃতীয় বার্ষিকী। ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)-র অংশীদারা- জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিওসমূহ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টিকে থাকার সংগ্রাম, সক্ষমতা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদারতার প্রতি সম্মান জানিয়ে মানবিক সংকটের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং ভবিষ্যতে সাড়াদান অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়ে দিনটি স্মরণ করছে।
২৪ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি)।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রথম যে গ্রামগুলোতে শরণার্থীরা এসেছিলেন সেই গ্রামগুলোর বাসীন্দারাই প্রথম সাড়াদানকারী। সেই সময় তারা তাদের খাবারটি ভাগ করে নিয়েছিলেন, আশ্রয় দেওয়ার জন্য ঘরের দরজাটি খুলে দিয়েছিলেন এবং আতংকিত মানুষদেরকে মানবতা দেখিয়েছিলেন তা এখনও অব্যাহত আছে। মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়নের ফলে হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। কক্সবাজার জেলায় বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ আট লক্ষ ষাট হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
শরণার্থীদের আগমনের ফলে, আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখিন স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং শরণার্থীদের জীবন রক্ষায় জরুরি সহায়তা ও সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং ১৩০টিরও বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
গত তিন বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো প্রচুর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ভারী বর্ষা এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের সম্মুখীন হতে হয়েছে; তা সত্ত্বেও শরণার্থী ক্যাম্পের আশেপাশে বন উজাড় এবং অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার পাশাপাশি সংক্রামক ব্যাধির সাড়া প্রদান করে যাচ্ছে। সরকার এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো যৌথভাবে কোভিড-১৯ মহামারীর মতো মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করছে। করোনা পরিস্থিতি ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে জরুরি স্বাস্থ্য সেবাপ্রদান বেশ আশঙ্কাজনক করে তুলেছে।
মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সকল অর্জনের মূলে রয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী নারী-পুরুষ এবং ছেলে-মেয়ে। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনতে ক্যাম্পগুলোতে কর্মরত মানবিক সহায়তা প্রদানকারী কর্মীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় শরণার্থীদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশী স্বেচ্ছাসেবীরা কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা কোভিড-১৯ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা করছেন যার মাধ্যমে উভয় জনগোষ্ঠী সেবা পাচ্ছেন। তারা কমিউনিটি-ভিত্তিক জরীপ এবং করোনারোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের অনুসন্ধানে সহযোগিতা করছেন।
ইতমধ্যে তিন হাজারের বেশি শরণার্থী স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যারা কোভিড১৯ পরিস্থিতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে লোকেদের সচেতন করছেন। এই স্বেচ্ছাসেবকরা ক্যাম্পগুলোতে দূর্যোগকালীন জরুরি প্রস্তুতি, পানি ও স্যানিটেশন, সাইট উন্নয়ন সংক্রান্ত কর্যক্রম, স্বাস্থ্য এবং সচেতনতা বিষয়ক বর্তাগুলো ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
সংকটের তৃতীয় বার্ষিকীতে, স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশী যাদের উদারতায় শরণার্থীদের গ্রহণ করা হয়েছিল তাদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আইএসসিজি-র অংশীদাররা গুরুত্ব দিচ্ছে। রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য প্রণীত ২০২০ সালের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনায় (জেআরপি), প্রয়োজনীয় তহবিলের আবেদন করা হয়।
কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে সৃষ্ট নতুন জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের সংযোজিত জেআরপিতে সর্বমোট ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি আবেদন করা হয় । চলতি বছরে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক আবেদনগুলির মধ্যে এটি একটি। এখন পর্যন্ত মোট আবেদনের মাত্র ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তির অঙ্গীকার পাওয়া গিয়েছে যা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
আমরা আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর জন্য উদার, সহনীয় এবং টেকসই সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকার এবং সংহতি অব্যহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো প্রতিটি দিন রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর পাশে রয়েছে এবং শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্থায়ী প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত উভয় জনগোষ্ঠীর পাশে থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Posted ৩:১৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Chy